ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে মেট্রোআরটিসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা

অটোরিকশার মালিকানা বদলি করেই কোটিপতি তারা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
অটোরিকশার মালিকানা বদলি করেই কোটিপতি তারা

সিলেট: সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি করে রেখেছেন জনাকয়েক কর্মকর্তা।

সিলেট সার্কেলটিতে চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রিয়াজুল ইসলাম এবং মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী সেবা দেওয়ার নামে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের মালিকানা বদলিসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণকালে নানা অজুহাতে মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি করেন এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে সিলেটের পুলিশ কমিশনার ও মেট্রোআরটিসির সভাপতি সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজিচালিত অটেরিকশার সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২টি। তন্মধ্যে ১০,০১২ সিলেট-থ-১১, ১০,০১২ থেকে সিলেট-থ-১২ সিরিয়াল এবং ১০,০১৩ থেকে সিলেট-থ-১৩ সিরিয়ালের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক অটোরিকশা মেট্রো এলাকার বাইরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অর্থাৎ সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করা হয়েছে।

গত বছরের (২০২২ সাল) ২ অক্টোবর মেট্রো আরটিসির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশার মালিকরা মেট্রো ঠিকানায় বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছেন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রিয়াজুল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিটি অটোরিকশা থেকে ৫০/৬০ হাজার নিয়ে এমআরটিসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অবৈধভাবে মালিকানা বদলি করেছেন। মালিকানা বদলির বিষয়টি সিলেট অটোরিকশার মালিক ও অন্যান্য ব্যক্তি এ অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানাজানি হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সূত্র জানায়, কেবল দুই মাসে প্রায় ৫৫টি অটোরিকশার মালিকানা বদলি জেলা থেকে মেট্রোতে করার বিষয়টি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট-থ-১১ সিরিয়ালের ২১টি ও সিলেট-থ-১২ ডিজিটের নাম্বার প্লেটের ৩৪টি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রতিটি থেকে প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনৈতিক সুবিধা নিতে প্রায় ১৮ বছর আগের পুরোনো সিলেট-থ ১১ নাম্বার প্লেটের অটোরিকশার মালিকানা বদলি করা হয়েছে।

অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ সিরিয়ালের এসব দেড় দশক পুরোনো অটোরিকশা রোড পারমিট না দেওয়া নির্দেশনা থাকলেও সিলেটে এটি কার্যকর করা হয়নি। ইতোমধ্যে কৌশলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিলেট-থ-১২ সিরিয়ালের পাশাপাশি সিলেট-থ-১২ সিরিয়ালের পাশাপাশি ১১ সিরিয়ালের মালিকানা জেলা থেকে মেট্রোতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

অথচ ২০২২ সালের ২ অক্টোবর মেট্রো আরটিসির সভায় জেলা থেকে মেট্রোতে অটোরিকশার মালিকানা বদলি না হওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বিআরটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রিয়াজুল ইসলামের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে। আবার সেই সিদ্ধান্ত নিজেই উপেক্ষা করলেন তিনি। এ কাজে তিনি ছাড়া মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী ও দেলোয়ার হোসেন জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ মেট্রোআরটিসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রায় ২০০ এর অধিক গাড়ির জেলা থেকে নগরে মালিকানা পরিবর্তন করে আনা হয়। আর এই একটি খাত থেকেই প্রায় কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেসঙ্গে অবৈধভাবে উপার্জন করতে গিয়ে সেবা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি সাংবাদিকরা তথ্য চাইতে গেলেও নানা অজুহাতে তাদের নিরুৎসাহিত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিকরা গত বছরের ৯ এপ্রিল ধর্মঘটের ডাক দেয়। যদিও প্রশাসনের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যেই ওই বছরের ১২ এপ্রিল বিআরটিএ সাবেক সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) বদলি হন। আর সেই সুযোগে সহকারী পরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান রিয়াজুল ইসলাম। অথচ তিনি চলতি দায়িত্ব না লিখে নেমপ্লেটসহ সরকারি দফতরগুলোতে পত্র আদান-প্রদানে সরাসরি সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) লিখে থাকেন। যা সরকারি চাকরির বিধিপরিপন্থি।

এদিকে সিলেট পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এবং সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ওই তিন কর্মকর্তাদের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা ওই কর্মকর্তাদের বদলির দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাহকরা বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় মালিকানা বদলিসহ রেজিস্ট্রেশন দিতে সহকারী পরিচালক তার অনুগত কর্মচারী ইসমাইল হোসেনকে রেজিস্ট্রেশন শাখায় নিয়ে আসেন।

ইসমাইল হোসেন নিজেও সহকারী পরিচালকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক অটোরিকশা অনৈতিকভাবে মালিকানা বদলি করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের এ কর্মকর্তাদের নামে দালালরা সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করে উৎকোচ আদায় করে থাকেন।

তারা তিনজনে মিলে অটোরিকশার নিবন্ধনের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনা হাতে নিলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এ প্রক্রিয়া প্রতিহত করেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সিলেটে চোরাইকৃত ও স্ক্র্যাপ করা অটোরিকশার একটি বড় অংশও প্রতিলিপি দিয়ে জায়েজ করে নিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।  

এ বিষয়ে বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জেলা থেকে মেট্রোতে যেসব অটোরিকশা মালিকানা বদলি করা হয়েছে। সেগুলো অনলাইনে প্রক্রিয়াধীন ছিল, কেবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কাজের বিপরীতে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়নি। তবে এমআরসিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা থেকে মালিকানা বদলি প্রক্রিয়া বন্ধের বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।