ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মহাত্মা গান্ধী স্মরণে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১০
মহাত্মা গান্ধী স্মরণে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন

ঢাকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও ভারতীয় জাতির জনক মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর ১৪১তম জন্ম দিন পালন হয়ে গেলো শনিবার। ১৮৬৯ সালের এদিন তিনি ভারতের গুজরাট রাজ্যের পরবনদার শহরে জন্মগ্রহণ করেন।



২০০৮ সালে জাতিসংঘ এদিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়। এ বছরও বিশ্বব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে গান্ধীকে স্মরণ করা হয়।

মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী বিশ্ব মানবতার কাছে এক অবিস্মরণীয় নাম। বিশ্বকবিই তাকে প্রথম ডাকেন ‘মহাত্মা গান্ধী’ নামে। ভারতবাসীর প্রিয় ‘বাপু’ সেদেশের জাতির পিতা।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কেতাদুরস্ত গান্ধী যখন তার ওকালত পাঠ শেষ করে ভারত ফেরেন তখনও ব্রিটিশ রাজের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব ছিলো না যে ক্ষীণকায় এই মানুষটিই অসহযোগিতার এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলবেন যা তাদের ভারত ছাড়া করবে।

নেতৃত্বের এক অনুচ্চারিত দক্ষতায় তিনি যখন ভারতীয় কংগ্রেসের শীর্ষপদে তখন টনক নড়লো ব্রিটিশ রাজের। ততদিনে গান্ধিজী, মহাত্মার আসনেও আসীন।

দারিদ্র নিরসন, নারী অধিকার, জাতিগত বিভেদ মোচন আর অচ্ছুৎ নামের শব্দটিকে ভারতের সমাজ থেকে দূর করে দিতে তার প্রচারও তখন অনেক দূরে এগিয়ে। আর স্বরাজ ও স্বদেশীর যে ধারণা নিয়ে তিনি আন্দোলন গড়ে তুললেন তার মর্মার্থ ইংরেজ বুঝতে বুঝতে ভারত স্বাধীনতার পথে এগিয়ে অনেক ধাপ। আন্দোলনের নাম অসহযোগ, যেখানে আরও কাবু ইংরেজ সরকার।

লবনের ওপর করারোপের বিরোধীতায় আড়াইশো মাইল টানা হেঁটেছেন তিনি। দাবি আদায়ে না খেয়ে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। বিলেতি পণ্য বর্জন করতে পরেছেন ধুতি চটি। আর কথা বলে গেছেন মানবতার পক্ষে একটি স্বাধীন ভারতের পক্ষে।

বিশ্ব থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, সহিষ্ণুতা ও রক্তপাত বন্ধে বিশ্ববাসীর চেতনাকে জাগিয়ে তোলাই আন্তর্জাতিক অহিংস দিবসের মূল বাণী।

দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার বাণীতে বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর মতবাদ এখন অনেক বেশি প্রয়োজন। ’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে এখন কেবলই অসহিষ্ণুতা, উত্তেজনা, সহিংসতা। ’

আন্তর্জাতিক এ দিবসটি সহিষ্ণুতা ও অহিংসা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

‘শান্তি অহিংসতা ও গণতন্ত্র: মহাত্মা গান্ধীর নীতি’ শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর গান্ধী স্টাডিজের’ চেয়ারম্যান অধ্যাপক এন রাধাকৃষ্ণান।

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতে লেখাপড়া শেষ করে ব্রিটেনে যান ব্যারিস্টারি পড়তে। বার-অ্যাট-ল’ পাস করার পর তিনি ১৮৯১ সালে ভারতে ফিরে যান।

১৮৯৩ সালে তিনি একটি আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শকের চাকরি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে চলে যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি ভারতীয় অভিবাসীদের ওপর আফ্রিকানদের আচরণে কষ্ট পান। তাদের সামাজিক ও মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’ শুরু করেন। এ আন্দোলনের মুখে ১৯১৪ সালে তৎকালীন আফ্রিকা সরকার তার অনেক দাবিই মেনে নিয়েছিল।

১৯১৪ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন শুরু করেন।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নিউকিয়াসে পরিণত হন।

১৯২১ সালে তাকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (আইএনসি) নেতৃত্বে আনা হয়।

পরবর্তী তিন দশক ধরে তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে দিগদর্শনের ভূমিকা পালন করেন।

দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসে নামের এক ব্যক্তি অহিংস আন্দোলনের এ প্রাণপুরুষকে গুলি করে হত্যা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।