ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

২২ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পেলেন না নুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
২২ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পেলেন না নুর লিবিয়া নিহত নুর আলমের অসহায় পরিবার, ইনসেটে নুর আলম

ফরিদপুর: অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে এক দালালচক্রকে ৮ লাখ টাকা দেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নুর আলম।

কিন্তু টাকা নিয়ে দালালরা তাকে ইতালির বদলে লিবিয়ায় নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখে।

 

ছেলেকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ওই দালালচক্রকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা দেয় নুর আলমের পরিবার।  

কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার পরিবার। লিবিয়ার বন্দিশালা থেকে ফেরেনি তাদের ছেলে।

দালালরা ফোন করে জানায়, লিবিয়ার বেনগাজিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুর আলম আত্মহত্যা করেছেন।  

তবে নুরের পরিবারের অভিযোগ, তাদের ছেলে আত্মহত্যা করেনি। নির্মম নির্যাতন করে নুর আলমকে মেরে ফেলেছে দালালরা।  

লিবিয়ার একটি মর্গে পড়ে আছে তার নিথর দেহ। এখন লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার তদবিরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কোন উপায় না পেয়ে নুর আলমের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অসহায় পরিবারটি।  

নুর আলম সালথার মাঝারদিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম মোল্যার ছেলে। তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার।  

দালালচক্রের অভিযুক্ত সদস্য হলেন - সালথা উপজেলার বারখারদিয়া গ্রামের মোকছেম মোল্যার ছেলে মোফিজ মোল্যা, একই গ্রামের সিরাজ মুন্সীর লিটন মুন্সী, মাঝারদিয়া গ্রামের আনারদ্দী মোল্যার ছেলে তোরাপ মোল্যা এবং নগরকান্দার ধরনদী গ্রামের খোরশেদ মোল্যার ছেলে মিজান মোল্যা।

নুর আলমের বড় ভাই মো. সিরাজ মোল্যা বলেন, ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে দালালচক্রের সদস্যরা পাশ্ববর্তী আমার ভাইকে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। দালালচক্রের সদস্য মোফিজ মোল্যা, লিটন মুন্সী, তোরাপ মোল্যা ও মিজান মোল্যা - এরা সবাই লিবিয়ায় থাকেন।  

তিনি আরও বলেন, নুরকে দেশ থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে ৪ লাখ আর ইতালি পৌঁছে ৪ লাখ টাকা দিতে বলেন দালালচক্রের হোতা মোফিজ। তার কথামতো প্রথমে তাকে ৪ লাখ টাকা দেন নুর। তারা নুরকে লিবিয়ায় নিয়ে বেনগাজিতে একটি বাসায় রাখেন। ওখান থেকে নৌপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি না নিয়ে লিবিয়ায় একটি বাসায় দিনের পর দিন আটকে রেখে দালালরা নির্মম নির্যাতন চালান। আর দেশে থাকা পরিবারের কাছে ফোন করে দফায় দফায় টাকা পাঠাতে বলেন। নুরকে বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে দালালরা যখন যে টাকা চেয়েছে, আমরা তাই পাঠিয়েছি। মোট ২২ লাখ টাকা পাঠানো হয়।  

নুরকে যে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে তা নিশ্চিত হলেন কি করে প্রশ্নে তিনি বলেন, নুর নিজেই বারবার ফোনে ওদের নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল। সে বলছিল, ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে, তোমরা আমাকে বাঁচাও। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে হত্যা করে বাসায় ঝুলিয়ে রাখে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই দালালরা আমাদের ফোন করে বলে নুর আত্মহত্যা করেছে।

নুর আলমের ছেলে রাসু মোল্যা ও মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, আমাদের বাবাকে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। বাবাকে বাঁচাতে দালালদের কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। এই টাকা দিতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের অল্প জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে ও ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা ওই দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি। সেই সঙ্গে বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

তবে এ বিষয় অভিযুক্ত দালালরা লিবিয়ায় অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।  

এ ব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।  

এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, নুর আলমের ঘটনাটি এখন জানলাম। নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোন ধরনের সহযোগিতা লিখিতভাবে চায়। তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।      

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।