ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রাবাড়ির ট্রিপল মার্ডার পূর্ব পরিকল্পিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১০

ঢাকা: যাত্রাবাড়ি শহীদ ফারুক রোডের ৩৭/১ নম্বর বাড়িতে সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত। বাড়ি ও মার্কেটের অংশ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই সুফিয়া খাতুন (৭৫), তার ছেলে মিজানুর রহমান মিল্টন (৫৩) ও পুত্রবধূ বিথী রহমান (৪৫)কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।



ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত শেষে যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার রাতে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এর মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য জানা গেছে। হাসপাতালে মৃত্যুর আগে মিজানুর রহমানও পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে গেছেন। ’

ওসি মনিরুজ্জামান আরও জানান, ‘দুর্বৃত্তরা জবাইয়ের পরে সুফিয়া খাতুনের নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, বিথী রহমান ও তার স্বামীকে জবাইয়ের পর কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। ’

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে ওসি জানান, নিহত মিজানুর রহমান মিল্টন ৩৭/১ নম্বর বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলার মালিক। ওই বাড়ির নিচ ও দ্বিতীয় তলার মালিক অপর ভাই তৌহিদুর রহমান লিংকন। তবে লিংকন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজিমপুরে বসবাস করেন। পাশের ৩৭ নম্বর বাড়িটির মালিক অপর দুই ভাই জাহিদুর রহমান লিপটন ও ওয়াহিদুর রহমান খোকন। ৩৭ নম্বর বাড়িসংলগ্ন প্লটে অন্তু মেডিকেল অ্যান্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মার্কেট ভবনটি নিয়ে ভাইদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।

পুলিশ জানায়, ৩৭/১ নম্বর বাড়িটির তৃতীয় তলার দুটি সংযুক্ত ফ্যাটে একমাত্র ছেলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান অন্তুকে নিয়ে থাকতেন নিহত মিজানুর রহমান স্ত্রী নিহত বীথি রহমান। চতুর্থ তলার একটি ফ্যাটে থাকতেন মিজানের মা নিহত সুফিয়া খাতুন।

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার আগে সুফিয়া খাতুন ও মিজানের ছেলে অন্তুকে রুটি-ভাজি তৈরি করে দেন গৃহকর্মী আসমা। নাশতা শেষে অন্তু সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এর পরপরই বাড়ির দারোয়ানকে ডেকে বিথী রহমান জুস ও ওষুধ কিনতে পাঠান।

ওসি জানান, দারোয়ান আকবর দোকানে জুস-ওষুধ কিনতে যাওয়া ও ফিরে আসা সময়ের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা বাড়িতে  ঢোকে এবং তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গৃহকর্মী আসমা আক্তারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ওই গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডের সবকিছু দেখেছেন বলে পুলিশের ধারণা।

বৃহস্পতিবার রাতে ট্রিপল মার্ডারের ব্যাপারে নিহত মিজানের ছেলে আশিকুর রহমান অন্তু বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৬ (৯) ২০১০) রুজু করেছেন। মামলায় তার চাচাতো ভাই সুমন (লিপটনের ছেলে) ও বাড়ির দারোয়ান আকবরের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ করা হয়।

ঘটনার পর পরই সুমন ও দারোয়ান আকবরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের করছে পুলিশ। এরই মধ্যে সুমনের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে দাবি করেন ওসি। তবে সুমন হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

এদিকে, তদন্তকাজে সম্পৃক্ত পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, কাঠ দিলু নামে প্রতিবেশী এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পূর্ব পরিকল্পনা হয়েছে। সেখানে পেশাদার কয়েকজন ভাড়াটে সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটনার সিদ্ধান্ত হয় বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

মামলার বাদী অন্তু জানিয়েছেন, বুধবার রাতেও অপরিচিত লোকজন নিয়ে সুমনকে বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।

যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘খুব দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের কয়েকটি টিম বিরামহীন অনুসন্ধান শুরু করেছে। ’

বাংলাদেশ সময় : ০৩৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।