ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যাপক ধরপাকড়ে হরতাল পালিত

ন্যাশনাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১০
ব্যাপক ধরপাকড়ে হরতাল পালিত

ঢাকা: আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক ধর-পাকড়ের মধ্য দিয়ে সারাদেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।

হরতাল চলাকালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সহ-সভাপতি শমশের মুবিন চৌধুরী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ও আহমেদ আজম খান, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপুসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া আটক হয়েছেন আরও দুই শতাধিক নেতা কর্মী।

মির্জা আব্বাস ও সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি পৃথক দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে বিকালে মহানগর হাকিম মোস্তফা শাহরিয়ারের আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন আবদুল মান্নান ও আহমেদ আজম খান।

বর্তমান সরকারের সময়ে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র ডাকা এটাই প্রথম হরতাল। হরতালে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। বিক্ষিপ্ত কিছু নৌযান এবং রেল চলাচল করলেও যাত্রী ছিল অনেক কম।

ঢাকার রাস্তায় বিক্ষিপ্তভাবে লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু বাস পুলিশ প্রহরায় চলাচল করেছে।

বিএনপি ‘সফল হরতাল’ হয়েছে বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ হরতালকে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে হরতাল পুরোপুরি সফল হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনের মাধ্যমে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ’

এদিকে, হরতাল ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যে হরতাল ডেকেছেন তা ব্যর্থ হয়েছে। ’


সকাল সাড়ে ৭টায় নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয় হরতালের প্রথম মিছিল। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক এমপি, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নাজিমউদ্দিন আলম এমপি মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৪ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

এর কিছুক্ষণ পর কাকরাইল মোড়ের রাজমনি সিনেমা হলের সামনে থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। পুলিশি বাধায় মিছিলটি বেশিদূর এগোতে পারেনি।

সকাল ১০টার দিকে কারওয়ানবাজার এলাকায় একটি মিছিল থেকে অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান ও সাইফুল আলম নীরব, সেলিম রেজা হাবিবসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময় জুরাইন আলম মার্কেটের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাইকে ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয়নগর মোড় থেকে জোনাকি সিনেমা হল পর্যন্ত পুলিশ ঘিরে ফেলে। এতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। তবে তিনি কোনো মিছিল বা সমাবেশে অংশ নেননি।

শাহজাহানপুরে নিজ বাড়ির কাছেই সকাল ১১টার দিকে গ্রেপ্তার হন মির্জা আব্বাস। এরপর পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ বাধে। পরে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করা হলে পুলিশে তাতেও বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও র‌্যাবের কয়েক শ’ সদস্য শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি ঘেরাও করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে আরো বেশ ক’জন কর্মীকে গ্রেফতার করে। এ সময় দু’টি পেট্রোল বোমা বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয় নি।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মহাখালীর তিতুমীর কলেজ এলাকায় ড. ওসমান ফারুক ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের হলে এটিও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

এছাড়া একই এলাকায় ছাত্রশিবিরের বের করা একটি মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে পন্ড হয়ে যায়। এ সময় সুলতান মাহমুদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বেলা ১২টার দিকে সেলিমা রহমান, শমসের মুবিন চৌধুরী ও সুলতানা আহমদ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ওয়ারলেস গেটের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। এখান থেকে পুলিশ তিনজনকে আটক করে। শমসের মুবিন চৌধুরী তাদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তার করে।


এদিকে সকালেই শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে ছাত্রদলকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগকর্মীদের হামলার শিকার হন। এসময় এ্যানিসহ বেশ ক’জন আহত হন। পরে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ্যানিকে গ্রেপ্তার করে।

এছাড়াও শাহবাগ মোড় থেকে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রদল নেত্রী মুন্নি চৌধুরী মেধাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও তখন ঢাকা কলেজের দুই ছাত্রদলকর্মী এবং পিজি হাসপালের পাঁচ কর্মচারীকে আটক করা হয়।

১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হরতালবিরোধী মিছিল করে ছাত্রলীগ।

শান্তিনগর মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও পিকেটারদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

জুরাইন আলম মার্কেটের সামনে একটি মিছিল থেকে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। সকাল সোয়া দশটার দিকে শহীদ ফারুক রোড থেকে চার পিকেটারকে ও এর কিছুক্ষণ পর বায়তুল মোশাররফ মসজিদের সামনে থেকে তিন জামায়াত- শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে শ্যামপুর এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বের হওয়া মিছিল পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী একটি বাসায় আশ্রয় নিলে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়।

মিরপুরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের বাধার কারণে হরতাল সর্মথকরা মাঠে নামতে পারেনি। সকালের দিকে কোথাও কোথাও বিএনপি কর্মীরা মিছিল করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন।

পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারে সাড়ে ১০টায় বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি মিছিল থেকে তিনজন মহিলা ওয়ার্ড কমিশনারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি’র সহসভাপতি ও ঢাকা সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিকদের বলেন, এর আন্দোলন সরকার পতনের নয় বরং সরকারকে সতর্ক করে দেওয়ার। সরকার এ থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আন্দোলনে নামবে বিএনপি।

এদিকে, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আজ হরতালে গ্রেফতারকে যুক্তিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১০
এজেড/এসএফ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।