ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

গাংনীর হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া তাল সড়কের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
গাংনীর হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া তাল সড়কের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

মেহেরপুর: হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে সারি সারি তালগাছ। সেসব গাছের সারির মনোমুগ্ধকর সড়কটি দেখতে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এখানে।

গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার অংশের দুইপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। গাছের সারিতে ঘেরা এ সড়কটি যে কোনো মানুষের নজর কাড়ে। আর তালগাছের নাম অনুসারে স্থানীয়রা এটিকে তাল সড়ক বলেই চেনেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনীর তালসড়ক গড়ে ওঠার পেছনে অবদান তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হকের। তার সঙ্গে এলাকাবাসীও সহযোগীতা করেন। বর্ষায় এ সড়কটির ভাঙন এবং পরিবেশ রক্ষার কথা চিন্তা করে সড়কের দুইপাশে তালগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্যান রেজাউল হক।

রেজাউল হক তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০০৩-২০০৭ সালে হিন্দা-তেঁতুলবাড়িয়া সড়কের ১ কিলোমিটার অংশের দুইপাশে ১০ ফুট পর পর প্রায় এক হাজার তালগাছ লাগান। শুধু এই রাস্তাটিতেই নয়, তিনি ইউনিয়নের সীমানার বিভিন্ন স্থানে তালগাছ লাগিয়েছেন। ইউনিয়নের হাটে বাজারে চৌকিদার দিয়ে ঢোল সহরত করে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। স্কুলের ছেলে মেয়েরাও এ কাজে এগিয়ে এসেছিল বলে জানা গেছে। সেসব তালগাছের বয়স এখন ১৭ বছর পেরিয়ে গেছে।

তালপাতা ও তালগাছের কাণ্ড দিয়ে গৃহস্থাল ও বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিস তৈরি করা হয়। গাংনীতে এখনও মাটির ঘরের প্রচলন আছে। তালগাছ চেরাই করে ঘরের ধর্ণা, পার, বাটাম তৈরি করা হয়। তালগাছের তক্তা দিয়ে তৈরি হয় ডুঙা। তাল গাছের পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি দেওয়া হয়। এ কারণে এখানের মাটির ঘরগুলোতে শীতকালে গরম এবং গরমকালে ঠাণ্ডা থাকে। তাল গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলেই তালপাতা দিয়ে তালপাটি, পাখা, হাতব্যাগ, ঝুড়িব্যাগসহ নানা উপকরণ তৈরি করা হয়। রসালো তালের পাশাপাশি এ গাছের রয়েছে ঔষধি গুণ। সুস্বাদু অনেক খাবার তৈরি করা যায় তাল রস থেকে। আর গ্রীষ্মকালে তালশাঁস প্রায় সবারই প্রিয়।

সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম অল্ডাম বলেন, এ অঞ্চলের প্রবেশপথে সারি সারি তালগাছ যেনো দর্শকদের চলার পথে স্বাগত জানায়। সারিবদ্ধ তালগাছগুলো পথটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরে।

সাহাবুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, এই তালগাছগুলো পথটিকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়া মনোরম দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগে।

কৃষক জহুরুল ইসলাম ও হাসমত আলী বলেন, মাঠে কাজ করার পর তপ্ত রোদে ক্লান্ত হলে একটু জিরিয়ে নিতে তালগাছের নিচে বসি। এছাড়া বজ্রপাতের সময়ও মাঠ থেকে দৌঁড়ে তালগাছের নিচে আশ্রয় নেই।

হিন্দা গ্রামের সমসের আলী বলেন, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হক এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচাতে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তালগাছ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু পরিচর্যার অন্য কোথাও গাছগুলো না হলেও এই রাস্তাটিতে হয়েছে। শুধু তালগাছগুলোর জন্য রাস্তাটিতে চলাচল করতে খুবই ভালো লাগে। সড়কটি ছবির মতো মনে হয়।

পথচারী সাফিরুল ইসলাম বলেন, সারিবদ্ধ তালগাছগুলো পথটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছে। কিন্তু সরকারিভাবে তাল সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে তালগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

তালগাছ রোপণকারী সাবেক চেয়ারম্যন রেজাউল হক বলেন, সড়কটিতে তালগাছগুলো আর আগের মতো নেই। অনেক তালগাছ মারা গেছে। ২০০৭ সালে তলগাছ লাগানো সড়কটি জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু গাছগুলো দেখভাল করার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সচেতন মহল মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি সহয়োগিতায় প্রতিটি রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে তালগাছ রোপণের ব্যবস্থা করলে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সেগুলো সড়ক রক্ষাতেও অনেক কাজে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।