ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফরেন পলিসিকে কুগেলম্যান

আ. লীগের আরও সাফল্য দেখানোর সুযোগ আছে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
আ. লীগের আরও সাফল্য দেখানোর সুযোগ আছে

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা যেমন আছে, তেমনি অনেক সাফল্যও আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এখনো জনপ্রিয়তা আছে।

এই সরকার দেশের জন্য আরও সাফল্য আনতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।  

তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আন্তর্জাতিকবিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক মার্ক লিওন গোল্ডবার্গ। সাক্ষাৎকারটি ফরেন পলিসির পডকাস্টে প্রকাশিত হয়েছে।

২০১০ সালের দিকে বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তার মেয়াদের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে যে বিনিয়োগ করেছে তা স্পষ্টত কাজে লেগেছে। সব তথ্য-উপাত্তই বলবে, স্বাস্থ্য সুবিধা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক দিক বিবেচনায় দেশটি পেছনে গেছে।

সাংবাদিক মার্ক লিওন গোল্ডবার্গ গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার উদাহরণ ও কারণ জানতে চান। জবাবে বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ধারাবাহিকভাবে বিষয়টি দেখলে বুঝতে সহজ হবে। আমি মনে করি, এটি মনে রাখা উচিত যে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বর্তমানে বিরোধী দল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন একই ধরনের কৌশল নিয়েছিল। তখনো দমন-পীড়ন, গুম ছিল।  

কুগেলম্যান বলেন, আজ যা যা ঘটছে তার অনেক কিছুই বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও ঘটেছে। আমি মনে করি, এটি স্মরণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।  

কুগেলম্যান বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক বাহিনী ও সামরিক শক্তির প্রভাবের ইতিহাসের কথাও স্মরণ রাখতে বলেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের শাসনব্যবস্থাকে ‘হাইব্রিড গণতন্ত্র’ বলা হয়। কিন্তু এই দেশগুলোতে অনেক পর্যায়ে গণতন্ত্র আছে। এ দেশগুলোতে নির্বাচন হয়। নির্বাচিত সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে বিরোধীদের দমন করে।

কুগেলম্যানের মতে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এমন হচ্ছে।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই কুগেলম্যানের কাছে সাংবাদিক মার্ক লিওন গোল্ডবার্গের প্রশ্ন ছিল গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারবিরোধী সমাবেশ নিয়ে।

কুগেলম্যান বলেন, সেসব সমাবেশ শেষে কতসংখ্যক লোক জমায়েত হয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য অনুমান করা সবসময় কঠিন। সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য অনুমানগুলোর ভিত্তিতে তিনি মনে করেন, লাখ লাখ না বলে হাজার হাজার লোকসমাগম হয়েছে বলাই নিরাপদ হবে।

কুগেলম্যানের মতে, এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারবিরোধী ওই আন্দোলন বা সমাবেশ ইরানের মতো গণ-আন্দোলন ছিল না। ওই সমাবেশগুলো ছিল বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এটি ইরানের সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলন থেকে ভিন্ন।

ডিসেম্বরে বাংলাদেশে সরকারবিরোধীরা কেন রাজপথে আন্দোলন করল—এই প্রশ্নের জবাবে কুগেলম্যান বলেন, বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিরোধীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ছিল কঠোর। এমনকি প্রতিবাদ করার মতো সক্ষমতাও ছিল না তাদের। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই বিরোধীরা রাস্তায় নামার সুযোগ খুঁজছিল। সম্ভবত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে।

‘বাংলাদেশ বিশ্বে সাফল্যের গল্প’ উল্লেখ করে কুগেলম্যান বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জ্বালানি ও খাবারের দাম বেড়েছে। অনেক দেশেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু অনেক বাংলাদেশির কাছে ওই ঘটনা বিস্ময়কর ছিল।


কুগেলম্যানের মতে, অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে গিয়ে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো বেশ কঠিন ছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহে রেশনিং, নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুত্সংকটে অনেক কারখানা বিপদে পড়েছে। বিরোধী পক্ষ অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতির অভিযোগের সুযোগ নিতে চেয়েছে।

দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, গণতান্ত্রিকভাবে পিছু হটা—এসব কারণে দলীয় আন্দোলনের বাইরে গণ-আন্দোলন হতে পারে কি না, প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিক গোল্ডবার্গ। জবাবে কুগেলম্যান বলেন, আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায়। তাদের এখনো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সমর্থন আছে।  

তিনি বলেন, আমরা যে সমস্যাগুলোর কথা বলছি, সেগুলোর বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আছে। এই দল এখনো অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সাফল্য দেখানোর ক্ষমতা রাখে।  

কুগেলম্যান বলেন, সরকার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে বাইরের সমস্যার সাময়িক প্রভাব দেশের ভেতরে পড়ছে। সরকার চেষ্টা করবে দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম সাফল্যের গল্প হিসেবেই ধরে রাখতে।

কুগেলম্যান মনে করেন, সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অনেক সমর্থন পেয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে ইসলামের নামে উগ্রবাদ একটি বড় সমস্যা ছিল। এটি এখন আর নেই। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো প্রাণঘাতী হামলাও এখানে নেই। এ দেশে সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিল। সমালোচকরা বলেন, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত কঠোরভাবে তাদের দমন করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে কুগেলম্যান বলেন, তিনি এমনটা মনে করেন না। বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির কাছাকাছিও নেই।

নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে সমালোচনার কথা উল্লেখ করে কুগেলম্যান বলেন, বিরোধীরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চাইছে। সরকার পদত্যাগ করবে বলে তিনি মনে করেন না। বরং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেসামাল হলে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়তে পারে।

কুগেলম্যান বলেন, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখতে হবে। এখানে রাজনৈতিক পরিবেশ দুই মেরুর। এর একটি বড় কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্তরীণ থাকা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। তারা তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে, স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকেই এই দুই পরিবারের আধিপত্য। তাই সব সময় এখানেই দুই মেরুর পরিবেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।