ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে শিশু আরাফাত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে শিশু আরাফাত হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করছে শিশু আরাফাত -বাংলানিউজ

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন ১০ বছরের শিশু আরাফাত শেখ। যে বয়সে স্কুলে যাওয়া এবং খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে বিধবা মা, ভাই-বোনকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সে।

পড়াশুনা ও খেলাধুলোর বয়সে আরাফাত কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের ভার। প্রতিদিন ১০০ টাকা মুজুরি পায় সে। তা দিয়ে সংসার চালাতে হয় তাকে। চার ভাই বোনের মধ্যে আরাফাত বড়। তার বাবা দাউদ শেখ ৪ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে সে একই উপজেলার হাটখোলাচর গ্রামের হাওয়াই মিঠাই তৈরির কারিগর গফফারের কাছ থেকে এই হাওয়াই মিঠাই এনে বিক্রি করে। এ কাজে গফফার তাকে প্রতিদিন ১০০ টাকা মজুরি দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের (আরাফাত) নেই কোনো জমি-জমা। তার মা চার বছরেও পাননি বিধবা ভাতা। তাদের ভাইবোনদের কারো কপালেও জোটেনি একটি শিশুকার্ড । ফলে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে তাদের দিন।

আরাফাতের বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাটখোলাচর গ্রামে। বাবার নাম মৃত দাউদ শেখ। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে আরাফাত।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামের আখড়া এলাকায় শিশু-কিশোরদের কাছে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। এ সময় সে জানায়, অল্প বয়সে বাবা মারা গেছেন, তাই মা ও ভাই-বোনকে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওয়াইমিঠাই বিক্রি করে ১০০ টাকা পায়। প্রতি পিচ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে ১০ টাকা করে।

আরাফাত আরও জানায়, বোয়ালমারীতে হাওয়াই মিঠাইর ব্যাপক চাহিদা আছে। আগে গ্রামাঞ্চলে বিক্রি ভালো হলেও বর্তমানে বোয়ালমারী পৌর শহরে বেঁচাকেনা ভালো হচ্ছে।  বিশেষ করে শিশুরাই এর প্রধান ক্রেতা। পাশাপাশি বিভিন্ন বয়াসী মুরব্বিরাও এই খাবারটি পছন্দ করেন। মুখে দেওয়া মাত্রই খাবারটি গলে যায়, যে কারণে অনেকে কাছে এই খাবারটি প্রিয়।

সে আরও বলে, যদি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতাম বা কোন বিত্তবান আমাকে সহযোগিতা করতো, তাহলে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারতাম।

এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইমদাদ শেখ বলেন, তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই এবং তারা অসহায়। তবে, করোনার সময় কোনো ভাতা না আসায় তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারিনি, সামনে চেষ্টা করব।

ময়না ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক মৃধা বলেন, আরাফাতরা কোনো সরকারি সুবিধা পায় কিনা তা আমার জানা নেই। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ভালো বলতে পারবে।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন বলেন, তারা কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়নি তা আমাকে কেউ কখনো বলেনি। যেহেতু এখন জানতে পারলাম, তাই যাতে তারা সহায়তা পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।