ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বছরজুড়ে নানা ঘটনায় শিরোনামে ছিল চুয়াডাঙ্গা

আলোচনার শীর্ষে ‘শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যু’

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
আলোচনার শীর্ষে ‘শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যু’

চুয়াডাঙ্গা: নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় বছরজুড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা। ২০২২ সাল ঘিরে ছিল নানা আলোচনা।

হত্যা, দুর্ঘটনা, মৃত্যু, রাজনৈতিক উত্তাপ, পাবজি খেলোয়াড় আটক, প্রশাসনের অভিযান ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ছিল ‘শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যু’র ঘটনা, সীমান্তে হত্যা- এমনকি আদালত থেকে আসামি পালানোর ঘটনা। সর্বশেষ এক রাজনীতিকের মৃত্যু দিয়ে শেষ হয় বছরের আলোচনা।

২০২২ সালে চুয়াডাঙ্গায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো-
বছরের প্রথম দিন তেমন কোনো আলোচিত ঘটনা না থাকলেও দ্বিতীয় দিনে ঘটে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা। সংবাদ প্রকাশের জেরে ২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে স্থানীয় সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী রাসেল। পরে সে হামলা মামলায় স্বাস্থ্যকর্মী রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

এরপর সারাদেশে আলোচনা সৃষ্টি করে বাচেনা খাতুন! ২০ বছর আগে পিত্তথলি অপারেশনের সময় বাচেনা খাতুনের পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই অপারেশন শেষ করা হয়। পরে ১০ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অপারেশন করে তার পেট থেকে সেই কাঁচি বের করা হয়।  

এছাড়া তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ মাসে ঘটে হামলার ঘটনা। এ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৩ জন।  

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েও ছিল হত্যা, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর খবর। নিখোঁজের ২৫ দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি কবরস্থানের ভেতর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শিশু আবু হুরায়রার অর্ধগলিত মরদেহ। চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর তালতলা গ্রামের এ হত্যকাণ্ডের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। পুলিশ অনুসন্ধানে জানায়, জোরে গান বাজাতে নিষেধ করেন বাবা, রাগে ছেলে আবু হুরায়রাকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় একই গ্রামের মোমিনকে।  

এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের ঘর ফিরিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসেন জীবননগরের জমির উদ্দীন। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গায় চুরির অভিযোগে শিশুকে নির্যাতনের খবর ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি সিরিজ বোমা হামলা মামলার আসামি শায়খুল ইসলাম সাইফুল ওরফে রাকিবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালত। ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নারী হাজতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ১৩ ফেব্রুয়ারি রেললাইন থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুর হাত-পা বাঁধা মরদেহ। এ মাসেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩ জন।  

মার্চের আলোচনায় ছিল ৫ম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে ১০ম শ্রেণির ছাত্রের বিয়ের ঘটনা। এ ঘটনায় ছাত্রের মা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ মাসের শেষে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আড়াইমাসের শিশুকে হত্যার অভিযোগ ছিল বাবার বিরুদ্ধে।  

এছাড়া বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে ভুয়া এসআই। মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছিল ৪ জনের। সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রাণ হারান ২ জন।  

এপ্রিল মাসের আলোচিত খবর ছিল একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনা। যেখানে চিকিৎসকের আলট্রাসনোগ্রাফিতে দেখা যায়, দুটি সন্তানের সংকেত, সেখানে সিজারের পর ভূমিষ্ঠ হয় একটি সন্তান। এপ্রিলের ১৭ তারিখে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অপারেশনের পর এমন খবরে জেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য একটি সন্তানের তথ্যই নিশ্চিত করেন গাইনী চিকিৎসক। ৮ এপ্রিল দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় ভৈরব নদ খননের সময় শত বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের হাড়ের সন্ধান পাওয়া যায়। যা নিয়েও তুমুল আগ্রহ ছিল স্থানীয় মানুষের। এ মাসে কালবৈশাখী ঝড়ে এক নারীর মৃত্যুর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়।  

মে মাসে আলোচনায় ছিল ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ম্যারাথন অভিযান। এ অভিযানে ভুয়া দন্ত চিকিৎসক, চক্ষু চিকিৎসকসহ বিভিন্ন জনকে জরিমানা করে তাদের চিকিৎসালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অভিযানে বন্ধ হয়, শহরের জাম্মি ডেন্টাল কেয়ার, ডিঙ্গেদহ বাজারের লিনটন রয় জিপ্পুর চিকিৎসালয় ও সিনেমা হল পাড়ার একটি চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে বেশ কয়েকটি অবৈধ-ক্লিনিক সিলগালা করা হয় জেলায়। ৯ মে আলমডাঙ্গার জেহালায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কামাল হোসেন (৬৫) নামে এক বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ মাসে গাছের ডাল চাপা, ট্রেনে কাটা পড়ে, পানিতে ডুবে ৪ জন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়।

জুন মাসে চুয়াডাঙ্গায় সবচেয়ে বেশী আলোচিত খবর ছিল ‘শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যু। ’ যা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ৭ জুন জেলার উজলপুর গ্রামের বিলপাড়ায় ১ বছর বয়সী এক শিশুর কামড়ে মৃত্যু হয় বিষধর সাপের বাচ্চার। খেলার ছলে ওই শিশুটি সাপের বাচ্চাকে কামড় দেয়। এতেই যত আলোচনা।  

এছাড়া মাঙ্কিপক্স উপসর্গে এক নারীর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির ঘটনাও ছিল আলোচনায়। তবে পরে জানা যায় তিনি মূলত মঙ্কিপক্স উপসর্গে নয়, ফোকসা জাতীয় রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া জীবননগরে মেয়ের বিয়ের দিন বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, শহরের ফেরীঘাট রোডে লাইট গোডাউনে আগুনের ঘটনাও ছিল আলোচনায়। একইসঙ্গে এ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন ও ছাদ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়।  

জুলাই মাসের আলোচিত ছিল মোবাইল গেমস্ পাবজি খেলার সময় ১০৮ তরুণ-যুবক আটকের ঘটনা। ২০ জুলাই শহরতলীর দৌলতিয়াড় এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করে নিষিদ্ধ মোবাইল গেমস্ পাবজি খেলার দায়ে ওই ১০৮ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে টুর্নামেন্ট খেলতে আসেন।  
এছাড়া এ মাসের ১২ জুলাই ঈদের দিন উচ্চ আওয়াজে গান বাজিয়ে নাচানাচির দায়ে ট্রাকসহ অর্ধশত শিশু-কিশোরকে আটক করা হয়। এ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ১ ও বয়লার বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়।  

আগস্টের আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে মাছ ভেসে ওঠার চিত্র। রাতভর নদীর দুপারে মাছ ধরতে ও সেই চিত্র দেখতে ভিড় জমে হাজার হাজার মানুষের। এ মাসের ২ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে। পরে অবশ্য জানা যায়, অক্সিজেন সংকটের কারণে পানির তলদেশ থেকে মাছ উপরে ভেসে উঠতে থাকে এবং মারা যায়। এছাড়া ছুটি শেষেও প্রাথমিকের তিন শিক্ষকের স্কুলে অনুপস্থিতির ঘটনাও ছিল সমান আলোচনায়। এমনকি তাদের একজন বিদেশেও অবস্থান করেন। যা জেলাজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। এ মাসে বিজিবির অভিযানে ডলার জব্দ, নকল চাল ও ভেজাল সারের বিরুদ্ধে অভিযানের খবর।  

সেপ্টেম্বর মাসের প্রধান আলোচিত খবর ছিল আলমডাঙ্গার তিনটি হত্যার ঘটনা। মাসের ১৬ তারিখে আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর সপ্তাহ খানেক পর আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বৃদ্ধ দম্পতির রক্তাক্ত মরদেহ। পুলিশের তৎপরতায় বেরিয়ে আসে সে হত্যার মোটিভ। পুলিশ জানায়, অর্থ-সম্পদ লুটতেই ভিকটিমের কর্মচারীসহ কয়েকজন তাদের শ্বাসরোধ ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া এ মাসে পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণে সোনা জব্দ করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছিল দুই জনের।

অক্টোবর মাসের ৮ তারিখে দর্শনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মুনতাজ হোসেন নামে এক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। হত্যার পর তার লাশ নেয়া হয় ভারতের অভ্যন্তরে। পরে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের পর তার লাশ ফেরত দেয়া হয়। এ মাসের ১৬ তারিখে চুয়াডাঙ্গা আদালত থেকে হাতকড়া খুলে আসামি পলায়নের ঘটনাও ছিল। প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর সময় পালিয়ে যান ডাকাতি মামলার আসামি আজিজুল। ৪ দিন পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ক্লোজ করা হয় তিন পুলিশ সদস্যকে। ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহফুজুর রহমনা মনজু। সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয় এ মাসে।  

নভেম্বর মাসে গণমাধ্যমে আলোচিত খবর ছিল চুয়াডাঙ্গার পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির নিয়ে। সেখানে উঠে আসে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মাহমুদুল আলম চৌধুরীসহ অফিস স্টাফ ও দালাল চক্রের অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি উঠে আসে। যে প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। গঠন করা হয় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও। এ মাসেও জেলার বিভিন্নস্থান থেকে জব্দ করা হয় সোনার চালান। মাসজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানী ঘটে ৫ জনের।  

সবশেষ ডিসেম্বর মাস ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত। মাসের ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সে সম্মেলনে দুপক্ষের চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সম্মেলন কোনোরকমে শেষ হলেও থেকে যায় তার রেশ। নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়েও দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ মাসের ২৪ তারিখে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামানসহ ৫ নেতা। এছাড়া মাসজুড়ে গ্রেফতার হন বিএনপির অন্তত ২৭ নেতাকর্মী।  

সর্বশেষ এক রাজনীতিকের মৃত্যু দিয়ে শেষ হয় ২০২২ সাল। ২৭ ডিসেম্বর ভারতের দিল্লিতে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় দর্শনার পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের। এছাড়া এ মাসে হত্যা, মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।