ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌকাডুবিতে মা-ছেলের মৃত্যু, নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনেরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
নৌকাডুবিতে মা-ছেলের মৃত্যু, নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনেরা

নড়াইল: দাদির মরদেহ দেখা হলো না নাজমা বেগমের। দেড় বছরের শিশু সন্তানসহ দাদির বাড়ি উপজেলার বাহিরডাঙ্গা গ্রামে যাওয়ার পথে খেয়া নৌকা ডুবিতে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বাহিরডাঙ্গা-চরবাহিরডাঙ্গা খেয়াঘাটে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।

নিহতরা হলেন- উপজেলার চরবাহিরডাঙ্গা গ্রামের এনামুল মন্ডলের মেয়ে মোসা. নাজমা বেগম (২৫) ও তার দেড় বছরের শিশু সন্তান মো. নাসিম শেখ। নাজমা বেগম উপজেলার বাবুপুর গ্রামের মো. আব্দুল জলিল শেখের স্ত্রী।

ঘটনার পর রাতেই স্থানীয়দের সহায়তায় ও সাঁতরে ৯ জন উদ্ধার হলেও আরও ৪ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন নিহত নাজমা বেগমের বড় ভাই রয়েল শেখ (৩০), বড় ভগ্নিপতি ছোটকালিয়া গ্রামের মাহামুদ হোসেন, চাচাতো বোনের স্বামী জোকারচর গ্রামের খানজে শেখ (৫৭) ও হামিদপুর ইউনিয়নের চৌকিদার লাবু শেখ।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের চারটি দলসহ খুলনা থেকে আগত একদল ডুবুরি উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, নিখোঁজদের জন্য নদীর তীরে অধীর অপেক্ষায় স্বজনেরা।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে নাজমা বেগমের দাদি আবেজান নেছা (৯০) তার বাহিরডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে মারা যান। দাদির মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বাহিরডাঙ্গা-চর বাহিরডাঙ্গা ঘাটে পৌঁছান। এসময় ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ছোট খেয়া নৌকাটি নদী পাড়ি দিলে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে মাঝনদীতে ডুবে যায়। ঘটনাস্থল থেকে নাজমা বেগম ও তার ছেলে নাসিম শেখের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এসময় যাত্রীদের চিৎকারে অপর ঘাট থেকে কয়েক যুবক নৌকা নিয়ে এসে রাতেই নদীতে পড়ে যাওয়া মোট ৯ জনকে উদ্ধার করে, নিখোঁজ থাকেন ওই ৪ জন।

নৌকায় থাকা মনির মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, ছোট নৌকায় বেশি যাত্রী উঠতে চাইলে আমি নিষেধ করলেও কেউ শোনে নাই। মৃত্যুর খবর শুনে আসা আত্মীয়রা সবাই যেতে চাইলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মাঝি নৌকা ছেড়ে দেয়। মাঝনদীতে নৌকা ডুবে গেলে দুইজন নারী আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি তাদের নিয়েই ভেসে ছিলাম। পরে উদ্ধারকারী একটা নৌকায় উঠে পড়ি।  

তিনি আরও বলেন, চোখের সামনে ভাতিজা রয়েল মন্ডলকে ডুবে যেতে দেখেছি। নাজমা বেগম তার সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে তলিয়ে গেল। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।  

রাতে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. শফিকুল খান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর রাতেই আমরা কয়েকজন মিলে পাঁচ নারী ও শিশুসহ মোট ১১ জনকে উদ্ধার করি। এর মধ্যে মা ও ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাই। যাদের উদ্ধার করি, তারা জানায় আরও বেশ কয়েকজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। তারপরও সারারাত আমরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি করি।

ফায়ার সার্ভিসের যশোর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, রাতে ঘন কুয়াশার কারণে উদ্ধার অভিযানে নামা সম্ভব হয়নি। আজ সকালে খুলনা থেকে ডুবুরি আনা হয়েছে। নৌকা ডুবে যাওয়ার স্থান শনাক্ত করে পুরোদমে উদ্ধার অভিযান চলছে।

এদিকে, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পর নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুনসহ জেলার ঊর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।