ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শরীয়তপুরে অধিকাংশ ইটভাটাই অবৈধ!

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
শরীয়তপুরে অধিকাংশ ইটভাটাই অবৈধ! ইটভাটা।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলায় ৫৯টি ইটভাটা রয়েছে যার অধিকাংশই অবৈধ। পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে হাতেগোনা মাত্র ৭টি ভাটার।

বাকিগুলোর নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি।  

ভাটা মালিকদের দাবি, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন।  

এছাড়া ইটের সাইজ ছোট করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে। ক্রেতারা প্রতি হাজারে ঠকছেন ২৮৪ টি ইট।  

এদিকে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ এসব অবৈধ ইটভাটা থেকে শতভাগ রাজস্ব আদায় করছে। কিন্তু আবেদন করেও মালিকরা কোনো অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। চলতি বছর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার নামে এবার প্রতি হাজার ইটের দাম বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সরকারিভাবে বিভিন্ন দিবস পালনের ব্যয় মেটাতে এসব ভাটা মালিক তাদের সমিতির মাধ্যমে ভূমিকা পালন করেন বলে ভাটা মালিকদের দাবি। অবৈধ হলেও ভাটাগুলো থেকে প্রতি বছর সরকারিভাবে আদায় করা হচ্ছে রাজস্ব। এ সব অনিয়ম থাকার পরও শরীয়তপুরের প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।


জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৯টি ইটের ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ২১টি, জাজিরায় ১২, নড়িয়ায় ৯, ভেদরগঞ্জে ৬, ডামুড্যায় ৩ এবং গোসাইরহাটে ৮টি ইটের ভাটা রয়েছে। এ সব ভাটার ইট আকারে অনেক ছোট। প্রত্যেকটি ইটের ভাটায় প্রস্তুত ইটের সাইজ দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৫ সেন্টিমিটার। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইটের সাইজ হবে দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ইটে সব সাইটে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার কম রয়েছে। ইটের আকার ছোট হওয়ার কারণে একজন ক্রেতা প্রতি হাজার ইটে ২৮৪টি ইট কম পাচ্ছেন।  

শরীয়তপুরের ইটভাটা মালিকরা বছরের পর বছর ধরে এভাবে ইটের আকার ছোট দিয়ে ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছেন।

এদিকে ক্রেতাদের নিয়ম মাফিক ইট পাওয়ার ক্ষেত্রে ইটভাটায় যাদের তদারকি করার কথা সেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে নির্বিকার।

সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, আইটি সনদ দিয়ে ভাটাগুলোতে ইট তৈরি ও বিক্রি করছেন। আবার এসব ইটভাটার ৯০ শতাংশ নির্মিত হয়েছে আবাদি জমি ও ফসলি জমি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এসব ইটভাটায় বছরে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি ঘনফুট মাটি। যার বেশিরভাগই কৃষি জমি থেকে সংগৃহীত এবং ফসলি জমির উপরিভাগের পলি মাটি। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অপরদিকে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। জমির উর্বরতাও কমে যাচ্ছে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন টিনের চিমনি বন্ধ করতে পারলেও ইটের সাইজের বিষয়টি ও আবাদি জমির ওপরের অংশের মাটি ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না।  

ডামুড্যার নাদিম মিয়া, গোসাইরহাটের জলিল শেখ, সদর উপজেলার আলী আজগরসহ একাধিক ইটের ক্রেতা বলেন, যেখানে ইটের সঠিক মাপ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। পাশাপাশি প্রতি হাজার ইটের দাম প্রায় ১৩/১৪ হাজার টাকা। টাকা এবং সাইজে আমরা উভয় দিকেই ঠকছি।

কে কে ব্রিকস ও হাটুরিয়া ব্রিকস ফিল্ডসহ একাধিক মালিক বলেন, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। চলতি বছর কয়লা, মাটিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার ইটের দাম প্রতি হাজারে বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।

অভিযোগ অস্বীকার করে শরীয়তপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল খান বলেন, আগে ইট বানানোর ফর্মা যে সাইজের ছিল এখন তার চাইতে একটু বড় ফর্মা দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। যাতে ইট পোড়ানোর পর ছোট হয়ে না যায়। এবার ইট সরকারি সাইজ মতোই বানানো হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজীকে একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।  

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অভিজিৎ সুত্রধর বলেন, সব ভাটায় আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব জিকজাক চুল্লি স্থাপন করতে পেরেছি। সাইজের বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযান চালাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।