ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিবগঞ্জে কর্মসূচি প্রকল্পে প্রশাসনের ৪০ দিনের চিরুনি অভিযান

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
শিবগঞ্জে কর্মসূচি প্রকল্পে প্রশাসনের ৪০ দিনের চিরুনি অভিযান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ:সরকারি কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করছে শিশুরা’ শিরোনামে গত রোববার (২৫ ডিসেম্বর) একটি সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। প্রতিবেদনে শিবগঞ্জ উপজেলায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পে শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ সম্পর্কে লেখা হয়।

প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমে স্কুল-কলেজের ছাত্র ও প্রান্তিক শিশুদের দিয়ে কাজ ও ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারেও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৫ ইউনিয়নে চল্লিশ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের অনিয়ম পর্যবেক্ষণে চিরুনি অভিযানে নেমেছে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে দশটি ইউনিয়নে প্রকল্প কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এ সময় কিছু অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত।

রোববার প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ইউএনও মো. আবুল হায়াত উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর চাপড় রাস্তা ফরিদের বাড়ি হতে কালভার্ট; ভায়া গোপালপুর রাস্তা লেধ্রীরবাগান হতে সেন্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প; ২ নম্বর ওয়ার্ডের দমদমা পুকুর হতে মাঝাঘোন পুকুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার; ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আকুটার বন রাস্তা জবেদ ডাক্তারের বাড়ি হতে রাস্তার শেষ মাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নামোচাকপাড়া গ্রামের আশাড়ীর বাড়ি হতে উপরচাকপাড়া কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলকুপি গ্রামে জেন্টুর বাড়ি হতে লাল বাবুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চান তিনি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকাগুলোয় শ্রমিকদের হাজিরা পর্যবেক্ষণ করেন।

জানা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুর চাপড় রাস্তা ফরিদের বাড়ি হতে কালভার্ট পর্যন্ত ভায়া গোপালপুর রাস্তা লেধ্রীরবাগান হতে সেন্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে নির্ধারিত ৮৩ শ্রমিকের মধ্যে ৩১ জন অনুপস্থিত ছিল বলে জানতে পারেন ইউএনও। দ্বিতীয় ধাপে তিনি কানসাট, চককীত্তিসহ আটটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।  এ সময় কানসাট ইউনিয়ন কলকলিয়া ঘাট প্রকল্পে ৬৫ শ্রমিকের মধ্যে ২৩ জন অনুপস্থিত থাকার সত্যতা দেখতে পান তিনি।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুর্লভপুর ও পাঁকা ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন ইউএনও। এসব এলাকায় কোনো অনিয়ম হয়নি বলে জানতে পারেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, সোমবারের অভিযানের ব্যাপারে জানতে পেরে দুর্লভপুর ও পাঁকা ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনাকারী সভাপতিরা সাবধান হয়ে যান। যে কারণে এ দুই ইউনিয়নে কোনো অনিয়ম হয়নি।

ইউএনও মো. আবুল হায়াত বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উন্নয়ন ও অসহায়-অতিদরিদ্রদের জন্য এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এতে যেমন এলাকার উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, অন্যদিকে অসহায় ও অতিদরিদ্রদের বেকারমুক্ত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে পারিবারিক উন্নয়নও হচ্ছে। উপজেলার কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে আমি কাউকে ছাড় দেব না। এ ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি ও শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে আটটি ইউনিয়নের ১৭টি প্রকল্প ঝটিকা অভিযান চালানো হয়েছে। বিভিন্ন কার্যক্রমে ৭০ জন অনুপস্থিত বলে জানা গেছে। তাদের এ দিনগুলোর ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে শ্রমিক হাজিরার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। যারা কাজে উপস্থিত হবেন, তাদের শতভাগ পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। যারা আসবেন না, তারা পাবেন না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও প্রকল্প প্রধানদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি অনিয়ম বন্ধ না হয়, প্রশাসন আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে।

প্রকল্পগুলোয় শিশুদের কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অভিযানে মাত্র একটি প্রকল্পে এক কলেজছাত্রের উপস্থিতি দেখা গেছে। তারপরও আমি বলবো, কোনো প্রকল্পে শিশুদের কাজ করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে।

অভিযানের সময় ইউএনও’র সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।