ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রেফতাররা জঙ্গি প্রশিক্ষণে সামগ্রী সরবরাহ করতো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
গ্রেফতাররা জঙ্গি প্রশিক্ষণে সামগ্রী সরবরাহ করতো

ঢাকা: ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, হিজরত করা সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি সদস্যরা।

শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকেন এবং সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন।

সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

রোববার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার জঙ্গিরা হলেন—মো. গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), দুই সহোদর মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) এবং মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, ১টি রেজিস্ট্রার বই এবং ১টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার জঙ্গিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা ২/৪ বছর আগেই নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতেন। তিনি আগে গ্রেফতার হওয়া নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের স্বামী। গোলাম সারোয়ার শশুরের মাধ্যমে ২ বছর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন গোলাম সারোয়ার। এছাড়াও তিনি তথাকথিত হিজরত করা সদস্যদের সেইফ হাউজে পৌঁছে দিতেন বলে জানা যায়। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, বিগত সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৩ তরুণের (নেহাল, আসমানী ও নিলয়) ঘটনায় কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে গ্রেফতার সারওয়ারকে নিখোঁজদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার হওয়া সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা। তিনি ৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনে যোগদান করেন। সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও তিনি শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানোর কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তিনি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই সাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক। ৩ বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করতেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতেন বলে জানা যায়।

গ্রেফতার হওয়া ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। দুই বছর আগে তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোল আনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। গ্রেফতার হওয়া ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বস্ত্র সামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে তা নাঈমের ‘ষোল আনা’ নামক আতরের দোকানে পৌঁছে দিতেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন বলে জানা যায়। গ্রেফতার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।