ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেতন বাকি-প্রশ্নফাঁস, হল থেকে পরীক্ষার খাতা ফেরত নিলেন প্রধান শিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
বেতন বাকি-প্রশ্নফাঁস, হল থেকে পরীক্ষার খাতা ফেরত নিলেন প্রধান শিক্ষক

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলের মাসিক বেতন ও বার্ষিক সেশন চার্জ বকেয়া থাকাসহ প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষাটি বন্ধ রাখেন তিনি।

এ নিয়ে বকেয়া বেতন আদায়ের বিষয়ে আগামী শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) স্থগিত করা পরীক্ষাটি আগামি রোববার (০৪ ডিসেম্বর) নতুন প্রশ্নপত্রে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক, অপমান ও মানহানীকর আচরণ উল্লেখ করে অসন্তষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পরীক্ষার সময় সুচী অনুযায়ী ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। এ সময় শিক্ষকরা উত্তরপত্র (খাতা) দিয়ে দেন এবং ১০টার ঘণ্টা বাজলে প্রশ্নপত্রও দেওয়া হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান পরীক্ষার হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বার্ষিক সেশন চার্জ ও বেতন বকেয়া আছে কিনা জানতে চান।

তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী বেতন বকেয়া আছে বলে স্বীকার করে। এতে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খাতা ও প্রশ্ন নিয়ে নেন। পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যান।

ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বেতন আদায়ে এমন আচরণ রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা ও আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

স্থানীয় শিক্ষার্থী অভিভাবক মোসলেমউদ্দিন মণ্ডল, রঞ্জিত কুমার কুণ্ডু, মুকুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, যাদের বেতন বকেয়া আছে শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু সবার কাছ থেকেই খাতা-প্রশ্ন কেড়ে ক্লাশরুম থেকে বের করে দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেও ঠিক করেন তারা।

ওই বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক লাভলী বেগম জানান, খাতা ও প্রশ্ন বিতরণের আগে যদি প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা না নিতে নির্দেশ দিতেন তাহলে এমনটি হতো না। তাছাড়া প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে পুনরায় দিন ধার্য্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সারাদিন পরিশ্রম করে আবারও প্রশ্ন তৈরি করতে হবে। এছাড়া এতে বেশ পরিমাণ অর্থও অপচয় হবে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো লাইব্রেরী কিংবা সমিতি থেকে বিনামূল্যে প্রশ্নপত্র পেয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন তৈরি ও পরীক্ষা নেন। এতে বিদ্যালয়কে খরচ গুনতে হয়।

বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় পরীক্ষার সময়-সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের ৭১১ জন পরীক্ষার্থীর অধিকাংশ জনের বার্ষিক সেশন চার্জ ও মাসিক বেতন বকেয়া রয়েছে।

পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে চলে আসার পরও কেউ বেতন ও সেশন চার্জ দিতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে পরীক্ষার সময়-সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী রোববার ওই বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তার আগে শনিবার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ করা হবে।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক সেশন চার্জ, মাসিক বেতন নেওয়ার বিধান আছে। সেই অনুযায়ী এ স্কুলেও সেশন চার্জ ও মাসিক বেতন নির্ধারণ পুর্বক আদায় করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেতন ও সেশন চার্জ বকেয়া আছে। বার বার তাগিদ দেওয়া স্বত্বেও তারা তা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। সামর্থ থাকা সত্বেও অনেক অভিভাবকরা এটি দিতে চান না। অথচ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৬ জন শিক্ষক কর্মচারীকে বিদ্যালয় অংশ থেকে প্রতিমাসে ৭৩ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটি তারা ঠিকমত পান না।

তিনি আরও বলেন, আদায় করা বার্ষিক সেশন চার্জ ও বেতন থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, খাতা কেনা, বার্ষিক খেলাধুলা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। অথচ বছর শেষ হয়ে গেলেও বেশির ভাগ তা অনাদীয় থেকে যায়। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের অন্য ফান্ড কিংবা নিজস্ব অর্থ থেকে খরচ বহন করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়।

তিনি জানান, তার বিদ্যালয়ে টেষ্ট ও বার্ষিক পরীক্ষায় ৭১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তাদের কাছ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সেশন চার্জ আদায় হওয়ার কথা সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। এছাড়া বেতন আদায় হওয়ার কথা ১২ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অথচ ভর্তির শুরুতেই সেশন চার্জ পরিশোধ করার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা করে না। ফলে আদায় করতে গেলে তাদের উল্টো বিপত্তীতে পড়তে হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে দশম টেষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ১৩৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগে ৮৩ হাজার, বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩ হাজার এবং ভোকেশনাল বিভাগে ২০ হাজার মিলে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা সেশনসহ বেতন বকেয়া আছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ বকেয়া থাকার বিষয়টিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে দ্রুত বৈঠক করে বিষয়টির সুরাহ করার আশ্বাস দেন তিনি।

নাটোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আখতার হোসেন জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষা বাতিল বা নিতে পারেন। তবে বেতন আদায়ের অজুহাতে পরীক্ষা বন্ধ করার এখতিয়ার তারা রাখেন না। যদি এমনটি হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মারিয়াম খাতুন জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। তবে কেউ এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেননি। তারপরেও খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।