ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

ফেসবুকে সাইকোলজিক্যাল রিসার্চ পাওয়া গেল যেসব তথ্য

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
ফেসবুকে সাইকোলজিক্যাল রিসার্চ পাওয়া গেল যেসব তথ্য

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে নিজের রিলেশনশিপ নিয়ে ফেসবুকে যারা নিয়মিত স্ট্যাটাস আপডেট করেন, তারা আসলে রিলেশনশিপ নিয়ে ইনসিকিউরিটিতে ভোগেন। অন্যদিকে জিম সেশন ও সুষম খাবার খাওয়ার ব্যাপারে নিয়মিত স্ট্যাটাস আপডেট করার পেছনে কাজ করে ইগো।



লন্ডনের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি থেকে পরিচালিত এক রিসার্চে দেখা গেছে, ইনসিকিউরিটিতে ভোগেন, এমন মানুষই অন্যের এটেনশন পাওয়ার জন্যে রোজ রোজ এ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস আপডেট করে থাকেন। অন্যের লাইক ও এটেনশন পাওয়ার মাধ্যমে নিজের ইনসিকিউরিটি ভুলে থাকার চেষ্টা করেন এ ধরনের মানুষ। তেমনি দাম্ভিক মানুষ নিজের অর্জন ও প্রাপ্তির ব্যাপারে নিয়মিত পোস্ট করেন। অন্যের লাইক, কমেন্ট ও এপ্রিসিয়েশন তাকে নিজের সম্পর্কে উঁচু ধারণা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

‘লাইক’ দেয়ার মাধ্যমে অন্যের ইগো ও ইনসিকিউরিটি বৈধতা দেয়া—এটা কি ভালো? যারা এসব স্ট্যাটাসে ‘লাইক’ দেয়, তারা কি ব্যাপারগুলো পছন্দ করে বলে লাইক দেয় নাকি লাইক দেয় তাদেরকে সাপোর্ট করতে? ফেসবুকের সাইকোলজি বুঝতে যে গবেষণাটি করা হয়েছে তার পেছনে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

এর আগে পরিচালিত বিতর্কিত এক পরীক্ষায় দেখা গেছে নিউজ ফিড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফেসবুক-ব্যবহারকারীদের মুড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই পরীক্ষায় নির্দিষ্ট ধরনের পজিটিভ অথবা নেগেটিভ আপডেট পাওয়া থেকে ছয় লাখ ৮৯ হাজারেরও বেশি ফেসবুক-ব্যবহারকারীর নিউজ ফিড নিয়ন্ত্রণ করে তথ্য বিজ্ঞানীরা। দেখা গেল নিউজ ফিডের আপডেট ব্যবহারকারীদের মুড ও পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ফলাফল প্রকাশ করা হলে অনেকেই ক্ষেপে গিয়ে তাদের আবেগের অপব্যবহারের জন্যে ফেসবুকের সমালোচনা করে। কারণ তাদের মতে এভাবে কারো সাইকোলজি যাচাই করা সম্ভব না। ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই খারাপ মুডে থাকতে পারে। আর তাহলে এই পরীক্ষার কোনো মূল্য থাকে না।

তবে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাববিস্তারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কতটা শক্তিশালী—পরীক্ষাটি দিয়ে তা বোঝা যায়। কাছের মানুষের সর্বশেষ খবর জানার জন্যে প্রায় নয়শ’ ৩৬ মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও লগ ইন করে থাকে। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্যান্য মাধ্যম ছাপিয়ে প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মানুষ কী দেখবে, কী ভাববে—সব নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। ফেসবুক এখন পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী মিডিয়া, সেই সাথে সবচাইতে প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রকও।

কথা হলো, ফেসবুকে কে ঠিক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কী স্ট্যাটাস আপডেট দিচ্ছে সেটা জানা জরুরি কেন। ফেসবুকে ব্যবহারকারীরা বন্ধুদের কোনো পজিটিভ আপডেট দেখলে নিজের সিচুয়েশনের সাথে সেটা মেলাতে চেষ্টা করেন। এই তুলনার ফলাফল প্রায় সবসময়ই নেগেটিভ। ব্যাপারটা অনেকটা ‘অন্য পারের ঘাস বেশি সবুজ’ টাইপের।

যেকোন ধরনের স্ট্যাটাস আপডেটের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে নির্দিষ্ট রিয়েকশন পাওয়া। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস আপডেট পড়ে অন্যকে বেশি সুখি মনে হতে পারে। তবে সেটা নিজের রিলেশনশিপের সাথে তুলনা করার আগে মনে রাখতে হবে পোস্ট করার ব্যাপারে সব মানুষই সিলেক্টিভ। প্রত্যেকের পোস্টের পেছনেই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। পুরো ব্যাপারটা যত না আক্ষরিক, তার চেয়ে আরো বেশি গভীর। ইনসিকিউরিটি কিংবা অহমিকা থেকে হয়ত কেউ শো অফ করছে, আর আপনি না বুঝেই ভাবছেন ‘আহা তারা কতই না সুখি!’

ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যে ফেসবুকের এই দিকটা বেশ ক্ষতিকর হলেও, মানুষের মন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে সবচেয়ে উপযুক্ত ধারণা দিতে পারে ফেসবুক। একটা খুব সাধারণ স্ট্যাটাস আপডেট, আপাত দৃষ্টিতে তার হয়ত কোনো মূল্য নেই। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সেটাই হয়ে উঠতে পারে মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সত্যিকার ধারণা লাভের উপায়। কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের মিথ্যা ব্যক্তিত্ব উপস্থাপন করা সম্ভব।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ফেসবুকের তথ্য বিবরণী থেকে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব যত গভীরভাবে বোঝা সম্ভব, অতটা তার পরিবার, বন্ধু কিংবা পার্টনারের কাছ থেকেও জানা সম্ভব না। আর এই জ্ঞানটা কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই মানুষকে প্রভাবিত করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কনজিউমারের চাহিদা সম্পর্কে এমন সব ধারণা পাওয়া সম্ভব যা অন্য কোনো রিসার্চ দিতে পারবে না। শুধু সাইকোলজিক্যাল রিসার্চ নয়, পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এসব ডেটা এনালাইসিস।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
টিকে/

** মানসিক রোগের সাথে ক্রিয়েটিভ কাজকর্মের সম্পর্ক আছে?
** সুখি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ১০ নিয়ম
** লজ্জা পাওয়া ভালো, তবে কতটা পাবেন?
** শীতকালীন বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার উপায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ