ঢাকা, শনিবার, ১৬ চৈত্র ১৪৩০, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৯ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

সকাল ৯টায় কাজ করানো ‘নির্যাতন’

মনোকথা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫
সকাল ৯টায় কাজ করানো ‘নির্যাতন’ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় স্লিপ এক্সপার্টরা এবার বলছেন, অন্তত ৫৫ বছরের কম বয়সীদের সকাল ৯টায় কাজ করানো ‘নির্যাতন’।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের অনারারি ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ফেলো ডা. পল কেলের মতে, কর্মকর্তাদের সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করলে তাদের ক্লান্তির পাশাপাশি স্ট্রেস দেখা দেয়।

ফলে স্বাভাবিক ঘুম হয় না।

দ্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অ্যাকাডেমিক বলছে, ৫৫ বছর বয়সের পরে মানুষ চাইলে কম ঘুমাতে পারে।

কেলে আরও বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টার ছক বদলাতে পারবো না। আমাদের পক্ষে সবসময় নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠাও সম্ভব না। এমনও দেখা যায়, যেদিন সূর্যের আলো এসে গেছে, অথচ আপনি ঘুমিয়েই আছেন। কারণ এর সঙ্গে দৃষ্টির সম্পর্ক নেই, বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস।

গবেষণাটির মধ্য দিয়ে জেলখানা ও হাসপাতালের চিত্রও পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, দাবি এক্সপার্টদের। সেখানে ঘুম থেকে তুলে সকালে খাবার দেওয়া হয়, যদিও তাদের উঠে খেতে ইচ্ছা করে না।

গবেষকদের মতে, ‘ন্যাচারাল হিউম্যান বডি ক্লক’ অনুযায়ী আমাদের সমাজ পরিবর্তন করা উচিত। সেভাবে স্কুল ও অফিস শুরু করা দরকার। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তার কর্মকর্তাদের সকাল সকাল কাজ করতে বাধ্য করে, তবে একদিকে যেমন তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, অন্যদিকে কর্মকর্তাদের শরীরেও সে প্রভাব পড়তে পারে।

যে কারণে স্কুল ও অফিস শুরু করা উচিত সকাল ১০টা থেকে। আর ৫৫ বছর বয়স না হওয়ার পর্যন্ত কোনোভাবেই সকাল ৯টায় শুরু করা উচিত নয়।

ইতোমধ্যে আমাদের সমাজে ঘুমের সমস্যা দেখা দিয়েছে। য‍ার প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যখাতে। মানবদেহে লিভার ও হার্ট সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এদের দুই-তিন ঘণ্টা এলোমেলো চালালে সমস্যা দেখা দেয়, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার নিয়েছে। প্রায় প্রতিটি মানুষ ভুগছে, যদিও এটা কাম্য নয়।

মানব মস্তিষ্কে ‘মাস্টার পিসমেকার’ রয়েছে যা চোখের মাধ্যমে সারা শরীরে প্রভাব বিস্তার করে। ঘুম কম হওয়ার কারণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে প্রভাব ফেলে।

পাশাপাশি মাদকের দিকেও আমাদের উৎসাহিত করে। রাগ, উদ্বিগ্নতা, হতাশা, অসংলগ্ন আচরণ, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস এবং মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার জন্যও একে দায়ী করা যায়।

যুবকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি কার্যকর। গবেষকদের মতে, শিশুদের এক থেকে দুই ঘণ্টা কম ঘুম হলে পড়ালেখার গতিও কমে যায়।

অন্যদিকে পর্যাপ্ত ঘুম হলে বিদ্যালয়ে একজনের সঙ্গে অন্যজনের মারামারির ঘটনাও কমে আসে। বয়ঃসন্ধিকালে ঘুমের গুরুত্ব আরও বেশি। এসময় বিকেলের ঘুমকে গবেষকরা বলেন, ‘ওয়েক মেইনটেন্যান্স জোন’ (ডব্লিউএমজেড) এর বর্ধিত করা।

ডা. কেলে তার গবেষণায় জিসিএসই পরীক্ষা করে কিছু প্রমাণ সংযুক্ত করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, সকাল ৯টার পরিবর্তে ১০টায় কাজ শুরু করলে কর্মক্ষমতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এক রকম। উত্তর টাইনেসাইয়ের মন্‌কসেটন হাইস্কুল শুরুর সময় সকাল ০৮টা ৫০ মিনিট থেকে ১০টায় নেওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের ফলাফল ৩৪ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভালো হতে শুরু করে।

প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। আপনারা জানাতে পারেন বাংলানিউজের ‘মনোকথা’ পাতায় আপনি কি ধরনের প্রতিবেদন দেখতে চান। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো।

আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও। সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।

এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের। আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন- [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৫
এটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ