ঢাকা: এখন পর্যন্ত সিজোফ্রেনিয়া হওয়া মানে এই মানসিক রোগের সঙ্গে আজীবন যুদ্ধ করে যেতে হবে। আর এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
কিন্তু কিশোর বয়সেই যখন এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তখন কী প্রতিরোধ করা সম্ভব?
সম্প্রতি একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছের তেল সেজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
গবেষকরা ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী ব্যক্তি, যাদের ভেতর মাত্র সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এমন ৮১ জনের ওপর মাছের তেলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো বিষয়টি কম-বেশি সবাই জানেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দুইটি দলে ভাগ করে অর্ধেককে মাছের তেল সমৃদ্ধ ওষুধ খেতে দেওয়া হয়, আর বাকি অর্ধেক ব্যক্তিকে ওই উপাদানের বিকল্প ওষুধ দেওয়া হয়।
১২ সপ্তাহ পরে গবেষকরা ফের পরীক্ষা করে দেখেন, এসব ব্যক্তিদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ কী অবস্থায় রয়েছে। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পুরোপুরি সাত বছর সময় লাগবে।
পর্যবেক্ষণ ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র ১০ শতাংশ ব্যক্তি যারা মাছের তেল সমৃদ্ধ ওষুধ খেয়েছিলেন তাদের সিজোফ্রেনিয়া বা অন্যান্য মানসিক রোগ থেকেই যায়। অন্যদিকে যারা একই উপাদান সমৃদ্ধ বিকল্প ওষুধ খেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যক্তি আগের চেয়ে কম মাত্রায় অসুস্থ হয়েছে পড়েন।
গবেষণার পরিসর ছোট হলেও এর ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
প্রধান গবেষক ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন-এর অধ্যাপক বলেন, আমরা এক বছর পরেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি যারা মাছের তেল সমৃদ্ধ ওষুধ খেয়েছিলেন, তারা ভালো আছেন।
এর আগে ২০১০ সালেও একই ধরনের একটি গবেষণা চালায়েছিলেন একটি বিশেষজ্ঞ দল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ওমেগা-৩ এক বছরে যুবকদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখা।
যেভাবে মাছের তেল মানসিক সমস্যা প্রতিরোধ করে
মাছের তেলে শক্তিশালী উপাদান ওমেগা-৩ রয়েছে যা ডেকোএকজানইক অ্যাসিড (ডিএইচএ) নামে পরিচিত। শরীরের যেকোনো টিস্যুর চেয়ে মস্তিষ্কে ডিএইচএ বেশি দরকার হয়।
কারণ আমাদের মস্তিষ্কের ১০০বিলিয়ন ব্রেইন সেল এ ধরনের উপাদন দিয়ে আবৃত থাকে, যা মায়েলিন নামে পরিচিত। এর কাজ হলো এক সেল থেকে অন্য সেলে তথ্য পৌঁছাতে সাহায্য করা এবং রোগ প্রতিরোধ করা।
যেহেতু আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে ওমেগা-৩ ডিএইচএ তৈরি করতে পারে না। তাই খাদ্যাভাসের মধ্য দিয়ে আমাদের এটি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যান্য খাবার থেকেও ডিএইচএ-এর বিকল্প তৈরি করে মস্তিষ্কে পাঠায় শরীর, তবে তা ডিএইচএ-এর মতো কাজ করতে পারে না। এটি যে কেবল সিজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধেই সহায়ক এমন নয়, বিষণ্নতা, উদ্বিঘ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও এক ধরনের ওমেগা-৩ আখরোটে পাওয়া যায়। তবে গবেষকদের মতে, এটি মানসিক রোগের তুলনায় হৃদরোগ প্রতিরোধে বেশি কার্যকর।
প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। আপনারা জানাতে পারেন বাংলানিউজের ‘মনোকথা’ পাতায় আপনি কি ধরনের প্রতিবেদন দেখতে চান। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের।
আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।
সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।
আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন- [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এটি/এমএ