ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-১

ডা. সানজিদা শাহরিয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-১

স্ট্রেস কী? ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে স্ট্রেস (Stress) এর মানে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। একই ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’জন মানুষ একই আচরণ করবে না।

কেউ হয়ত রেগে যাবে, কেউ বা দুঃখ পাবে। তৃতীয় পক্ষ কাউকে টানলে দেখা যাবে, তিনি ভয় পাচ্ছেন।

একই পরিস্থিতি একেক জন মানুষের কাছে তাই একেক অনুভূতির পসরা নিয়ে আসে। অনুভবের ভিন্নতা একক পরিস্থিতিকে বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রতীয়মান করে।

তাই স্ট্রেস কী বা কী ঘটলো সেই ঘটনার মাপকাঠিতে বিচার বিবেচনা না করে, নির্দিষ্ট একজন মানুষ সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে কী অনুভব করছে সেই নিরিখে বিশ্লেষণ করতে হবে। স্ট্রেস হলো কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অনুভূত নিজস্ব অনুভূতি।

উদাহরণস্বরূপ, কামাল সাহেব একটি অফিসের বস। তিনি কোনো কারণে রেগে গেলে তার চার কর্মচারি চার ধরনের অনুভব করেন।

▪ মলি ভয় পায়। ভাবেন, তার কোনো ভুল ধরতে পারে।
▪ রাশেদ রেগে যায়। বসের চিল্লাচিল্লি তাকে ক্ষেপিয়ে তোলে।
▪ সিমা বিরক্ত হয়। ভাবেন, এত রাগারাগির কী আছে! এটি বসের বাড়াবাড়ি।
▪ কামাল ম‍জা পান। রেগে গেলে বসের চেহারাটা তার কাছে কার্টুনের মতো লাগে।

প্রস্তুর যুগের আদি মানুষের জীবনে স্ট্রেস ছিল প্রত্যাহিক খাদ্য সংগ্রহ ও প্রতিকূল পরিবেশ (হিংস্র পশু, ঋতু তারতম্য) থেকে জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পরবর্তীতে আগুন ও চাকার আবিষ্কার জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেসের প্রকারের তারতম্য ঘটাল। শিল্পের (সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত, নাট্যকলা প্রভৃতি) হাত ধরে মানসিক উৎকর্ষতা এলেও স্ট্রেসের হাত থেকে আধুনিক মানুষের মুক্তি ঘটল না।

পুরানো সেই দিনের কথা
মজার কথা হলো, মনুষ্য প্রজাতি যখন থেকে নিজের দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে শিখেছে, তখন থেকেই তার দেহ ও মস্তিষ্ক বার বার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে বির্বতিত হয়েছে, স্ট্রেস মোকাবেলা করেছে। আমাদের গুহাবাসী পূর্ব-পুরুষরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।

প্রতিনিয়ত তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বিপদজনক মুহূর্ত পার করেছে। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে তাদের দেহঘড়ি এমনভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে যে, হয় লড়াই করে বাঁচো নইলে মরো (সারভাইভ্যাল ফর দ্য ফিটেস্ট)। আমরা অবিরাম এসব মনোদৈহিক চাপ মোকাবেলা করে বাঁচতে শিখেছি।

আধুনিক বিশ্বে আমাদের গুহাবাসী পূর্ব পুরুষদের মতো স্ট্রেস প্রকাশ্য প্রাণঘাতী চাপ তৈরি না করলেও, গোপনে নীরব ঘাতক হিসেবে সদা সক্রিয়। এটি চারদিক থেকে বাহ্যিক থ্রেট ও অভ্যন্তরীণ মানসিক দুশ্চিন্তার কুটিল থাবায় মানুষকে বার বার ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্য এ স্ট্রেস বিভিন্ন সময় প্রাণঘাতী দানবরূপে দেখা দেয়।

কিন্তু হতাশাব্যঞ্জক খবর হলো, আমরা বাহ্যিক থ্রেট বা পরিস্থিতিগত চাপ ও অভ্যন্তরীণ মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে ফারাক ভালোভাবে বুঝতে পারি না। আরো স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, আমাদের অবচেতন মন একটি তাৎক্ষণিক স্ট্রেসফুল পরিস্থিতি আর সম্ভাব্য বা নিকট ভবিষ্যতে ঘটবে এমন স্ট্রেসফুল পরিস্থিতির জন্য মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে ফারাক ধরতে পারে না।

ফলে অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন পরিস্থিতির কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় আমাদের একই ধরনের শারীরিক রিঅ্যাকশন হয়। একটি পরিস্থিতির আপনি এখন মুখোমুখি আর অন্যটি এখনও  ঘটেনি। কেবল ভাবছেন, ঘটতে পারে। উভয়ক্ষেত্রেই দৈহিক প্রতিক্রিয়া একই হতে পারে।

পরবর্তী পর্বে থাকছে এ ধরনের শারীরিক রিঅ্যাকশন নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ