ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

এটিকফোবিয়া: হেরে যাওয়ার ভয়

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
এটিকফোবিয়া: হেরে যাওয়ার ভয়

ঢাকা: আপনি কি হেরে যেতে ভয় পান! এই ধরুন, ঠিক করলেন নতুন কোনো কাজে হাত দেবেন। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই মনে হলো, কাজটি আপনি পারবেন না বা আপনাকে দিয়ে হবে না, হেরে যাবেন আপনি।

অনেক সময় অবচেতন মন নিজেই ভাবতে থাকে, সে কোনো কাজ করতে অপারগ।

মনোবিজ্ঞানে মনের এ রোগটির নাম এটিকফোবিয়া। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের সুক্ষ্ম গুণাবলীকে বিচার করতে ভুলে যান। কোনো কাজ শুরু করার আগে তাদের মনে হয়, তাদের কোনো গুণই নেই বা তাদের দিয়ে কাজটি হবে না। ফলে তারা এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। সামনে কোনো সুবর্ণ সুযোগ এলেও পিছপা হয়ে যান। এবারের আয়োজনে আমরা জানবো, এটিফোবিয়া কী, এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।



এটিকফোবিয়ার কারণ
হেরে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হলে প্রথমে জানতে হবে, হেরে যাওয়া কী। আমাদের সবার কাছেই হেরে যাওয়ার সংজ্ঞা আলাদা। কারণ আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন পারিপার্শ্বিকতা, বাস্তবতা, মূল্যবোধ, যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠি। কারও কাছে কাছে হেরে যাওয়ার বিষয়টি জীবনে বিরাট শিক্ষণীয় একটি অধ্যায়।

হেরে যাওয়ার ভয় কমবেশি সবারই রয়েছে। কিন্তু তাই বলে সবাই এটিকফোবিয়ায় আক্রান্ত নন। এতে মূলত তারাই আক্রান্ত যারা হেরে যাবে মনে করে কাজটি করা থেকেই নিজেকে বিরত রাখেন। অর্থাৎ যখন কেউ হেরে যাওয়ার ভয়ে, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। তখন তাকে এটিকফোবিয়ায় আক্রান্ত বলা যেতে পারে।

এটিকফোবিয়ায় আক্রান্ত নানা কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, গঠনমূলক কাজে বাবা-মার সহযোগিতা না পাওয়া ও ছেলেবেলা থেকে কঠিন ধরাবাধা নিয়ম কানুনের মধ্যে বেড়ে ওঠা। অনেক সময় দলে কোনো কাজে অপদস্থ হলেও এটি হতে পারে। যেমন: গ্রুপ প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার পারফরমেন্স ভালো হলো কিন্তু একজন সেদিক থেকে পিছিয়ে গেল।   এ অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তীতে ভোগাতে পারে।



লক্ষ্মণ
এটিকফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের সম্পর্কে সবসময় নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। তারা সবসময় অন্যদের বলেন, আমি পারি না, আমাকে দিয়ে হবে না, আমি স্মার্ট নই ইত্যাদি।


দূর হোক সব ভয়
যেকোনো কাজেই হার-জিত থাকবে। তবে থেমে গেলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যের পথে। এটিকফোবিয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শমত ওষুধ খেলেও প্রয়োজন সেল্ফ মোটিভেশনের। সাহায্য করতে হবে নিজেকেই।

ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে একেক সময় একেকটি শিক্ষা নিয়েই বড় হয় মানুষ। সেগুলোকে কাজে লাগান। গঠনমূলক কাজে সহযোগীদের নিজের মতামত জানান। দলের সদস্যদের মধ্যে আপনিও অন্যতম, কথাটি ভুলে যাবেন না। সে অধিকারকে অবলম্বন করুন। নিজের দক্ষতা নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবার আগে নিজেকে বলুন, পৃথিবীতে সবকিছু জেনে কেউ জন্ম নেয় না। বরং পৃথিবীতে এসেই সবাই শেখে। আর সবাইকে সবকিছু জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কাজে ভুল হতেই পারে। ভুল হওয়া মানে আপনি চেষ্টা করেছেন। ব্যপারটিকে দুর্বলতা না ভেবে ইতিবাচকভাবে নিন। একবার ভুল হলে আবার এগিয়ে যান।

তবে লক্ষ্য রাখুন, আপনি কাজটি অবশ্যই শেষ করবেন। পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কারগুলো একদিনে হয়নি। যুগের পর যুগ সাধনার ফলে আজ উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই ভয় পাবেন না। আর মনে রাখবেন, পৃথিবীতে নিজের কাছে হেরে যাওয়াই সবচেয়ে বড় হার। তবে কেন হেরে যাবেন নিজের কাছে! উঠে পড়ুন এখনই, শুভ হোক আপনার পথচলা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ