ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

অ্যাটাচমেন্ট ইন রিলেশন

সম্পর্কে আন্তরিকতা যেভাবে হয়

মনোকথা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪
সম্পর্কে আন্তরিকতা যেভাবে হয়

আমাদের পরিবার বাবা-মা, কিংবা আমাদের কোনো সঙ্গীর সঙ্গে আমরা দীর্ঘ দিন একটা সম্পর্ক বজায় রাখছি। এ সম্পর্ক পারস্পারিক বন্ধন ও আন্তরিকতার।

কিন্তু ঠিক কেন এবং কিভাবে এতো দীর্ঘদিন আমাদের এ আন্তরিকতা টিকে আছে সেটা কখনো ভেবে দেখেছি কি, কিংবা তার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যখ্যা আমাদের জানা আছে কি?

ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী জন বলবি তার গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন মানুষ কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে মানসিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এক গবেষণায় শিশুরা জন্মের পরেই যার যত্ন পান তার কাছ থেকে দূরে যাওয়ায় উদ্বিগ্নতা এবং যন্ত্রণার বিষয়টি তুলে আনেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বন্ধন হলো সম্পর্কের রসদ।

তার মতে, সম্পর্ক হলো একজন ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির আবেগের বন্ধন। শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মের পরে তারা প্রথম যার সঙ্গ পায়, তার সঙ্গেই প্রথম এ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে কেবল খাবারই নয়, নিরাপত্তার বিষয়টিও শিশুর ভেতরে কাজ করে।

আইন্সওর্থ ১৯৭০ সালে তার ‘স্ট্রেঞ্জ সিচুয়েশন’ গবেষণায় বন্ধনের তিনটি প্রধান ধরন ব্যাখ্যা করেছেন। ‘সিকিউর অ্যাটাচমেন্ট’, ‘অ্যাম্বিভালেন্ট-ইনসিকিউর অ্যাটাচমেন্ট’ এবং ‘অ্যাভোয়েডেন্ট-ইনসিকিউর অ্যাটাচমেন্ট’।

১৬ বছরের মাথায় গবেষক মেইন এবং সোলোমন আরো একটি ধরন ব্যাখ্যা করেন- ডিজঅর্গানাইজড-ইনসিকিউর অ্যাটাচমেন্ট। সেসময় থেকেই বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

ম্যাটার্নাল ডিপ্রাইভেশন স্টাডিজ
১৯৫০ থেকে ৬০’র দশকে হ্যারি হারলো ম্যাটার্নাল ডিপ্রাইভেশন বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন যা পরবর্তী সময়ে খুবই জনপ্রিয়তা পায়। তিনি তার গবেষণায় একটি পর্বে বলেন, লাল বাঁদর (Macaca mulatta) জন্ম নেওয়ার পরেই তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় এবং অন্য এক নারী বাঁদর তার দেখা-শোনা করে। একজন তার যত্ন নেয় আর অন্যজন খাবার দেয়।

জন্মদাত্রী মায়ের কাছে খাবারের জন্য গেলেও অধিকাংশ সময় কাটে ‍অন্য মায়ের কাছে। এতে দেখা যায়, কোনো কারণে ভয় পেলে শিশু বাঁদরটি তার জন্মদাত্রী মায়ের চেয়ে যত্ম নেওয়া মায়ের কাছেই বেশি নিরাপদ বোধ করে।

বন্ধনের পর্ব
প্রায় ৬০টি শিশুর ওপর করা ভিন্ন একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। চার সপ্তাহ পরপর এক বছর পর্যবেক্ষণের পর বিরতি দিয়ে দেড় বছর বয়স হলে আরো একবার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে গবেষকরা বন্ধনকে বিভিন্ন পর্ব বা স্তরে ভাগ করেন।

প্রি-অ্যাটাচমেন্ট স্টেজ: নবজাতকের জন্মের পর থেকে তিন মাস পর্যন্ত শিশুদের কোনো নির্দিষ্ট বন্ধন থাকে না। কান্নার সময় আদর পেলেই সে স্বাভাবিক সারা দেয়।

ইনডিসক্রিমিনেট অ্যাটাচমেন্ট: ছয় থেকে সাত সপ্তাহ পার হওয়ার পরে তার কাছে সবচেয়ে বেশি সময় যে থাকে সে অনুযায়ী পছন্দ তালিকা তৈরি করে নেয়। পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিত্তিতে শিশু পরিচিত এবং অপরিচিতদের কাছে যাওয়া আসা শুরু করে।

ডিসক্রিমিনেট অ্যাটাচমেন্ট: সাত থেকে ১১ মাস বয়সে নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তীব্র বন্ধন প্রকাশ করে শিশুরা।

মাল্টিপল অ্যাটাচমেন্ট: নয় মাস বয়স হওয়ার পরে শিশুদের ভেতরে তীব্র আবেগ কাজ করে এবং তারা বাবা মায়ের বাইরেও একাধিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে।

প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।

সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
 
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।   

আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন-

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ