ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

জীবনে অসুখী হলে যা করণীয়

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৪
জীবনে অসুখী হলে যা করণীয়

কখনও কখনও কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয় মানুষের। কোনদিন দুপুরে হয়তো এমন উদাস লাগে, কোনভাবেই আর কাজে মন বসানো যায় না।

হয়তো কোনদিন সন্ধ্যায় জীবনটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে তীব্র বিষণ্ণতায়। বিষণ্ণতায় ভোগা, উদাস হয়ে থাকা, মন খারাপ ও মেজাজ খিটখিটে ভাব সব মানুষের ক্ষেত্রেই কম বেশি হয়ে থাকে। হাস্যোজ্জ্বল ও স্বতঃস্ফূর্ত থাকে এমন সব ইতিবাচক ব্যক্তিরাও ‘ভালো না লাগা’ অসুখে ভোগেন।

চাইলেই নিজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বদলানো জায় না। সব সমস্যার সমাধান নেই আপনার হাতে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আপনি সুখী হবেন নাকি অসুখী তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার নিজের ওপর। জীবনে ঘটে যাওয়‍া অতীতের ভুলে নিমজ্জিত না থেকে বর্তমান সময়টাকে উপভোগ করা যায়।

মনের ভেতর বাসা বাঁধা মনের অসুখ আপনি সারিয়ে ফেলতে পারেন নিজেই। তাই জেনে নিন কারণ ছাড়া মন খারাপের কালে কী করবেন!
  
অপছন্দের বিষয় পরিহার করুন:
যদি নিজের জীবন নিয়ে তৃপ্ত না হন তবে জীবনকে ধীরে ধীরে বদলানোর চেষ্টা করুন। যেসব বিষয় এবং মানুষ আপনাকে অসুখী করে তার একটি তালিকা তৈরি করে পরিহার করার চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে যা যা ভালো লাগে সেসব সাধ্য অনুযায়ী করতে সচেষ্ট হন। যেসব বন্ধু বা ব্যক্তি আপনার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে তাদের অতি অবশ্যই পরিহার করবেন।

এমনকি নিজের চাকরিটিও যদি অপছন্দের হয় তবে তা ছেড়ে দিয়ে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন। সহজ কথায় যা কিছু অপছন্দের তা পরিহার করুন। অপছন্দের মানুষদের নিজের জীবন থেকে ছেঁটে ফেলুন। এরপর আপনার যা কিছু আছে তার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে আনন্দিত জীবন যাপন করুন, তাড়িয়ে বেড়ানো অতীত ভুলে যান।

বিরতি নিন:   
কারণ ছাড়াই অসুখী বোধ করছেন? জীবন দৌড়ে একটু বিরতি দিন, অসুখের কারণ খুঁজে বের করুন। হতে পারে আপনি খুবই ক্লান্ত, তাহলে বিশ্রামে যান, ফুরফুরে স্বতেজ হয়ে ফিরে আসুন নিত্যদিনের জীবনে। অথবা হতে পারে কেউ আপনার জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলেছে। নিজের মনকে স্থিত করুন, সমস্যাগুলোকে একপাশে রাখুন। এরপর হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন, প্রকৃতিকে উপভোগ করুন, ধ্যান বা ব্যায়ামও কার্যকরী মনস্থির করতে। নিজেকে সময় দিন, নিজের সঙ্গে নিজের কিছু ‍ভালো সময় কাটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনাকে স্বতেজ, ফুরফুরে ও নতুন করে তুলবে। আর যদি বুঝতে পারেন আপনার অসুখী থাকার আসল কারণ অন্য কেউ; তবে তাকে সরিয়ে ফেলুন জীবন থেকে, তা সে যেই হোক!

পেছন ফিরে তাকান:
নিজের জীবন নিয়ে অতৃপ্ত ও অসুখী হলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখুন কী কী করেছেন জীবনে। জীবনের কিছু বিষয় বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে, হয়তো জীবনের পুরনো লক্ষ্য বদলে নতুন করে নির্ধারণের প্রয়োজন পড়বে। এই পরিবর্তন  ঘটানো সবচেয়ে কঠিন, তবে এটা যদি আপনাকে আরও বেশি সুখী মানুষে পরিণত করে তবে নিজেকে এই চ্যালেঞ্জ জানাতে ভয় পাবেন না।  

অন্যকে খুশী করার চেষ্টা করুন:
অসুখী অবস্থায় যখন নিজেকেই সাহায্য করা যায় না তখন অন্যকে খুশী করা খুবই কঠিন। যাই হোক এ সময়ে অন্যকে খুশী করা এবং খুশী মানুষদের দ্বারা আবৃত থাকা আপনাকে সুখী করে তুলবে। মানুষ অন্যকে খুশী করে শুধু তাকেই সুখী করে না, নিজেও সুখী হয়ে ওঠে।

হাস্যরসাত্মক মুভি দেখুন:
ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি পরিহার করে কমেডি মুভি দেখে নিজের মুড বদলাতে পারেন। মন খুলে হাসা আপনাকে অনেকটাই সুস্থ করে তুলবে। এছাড়াও আপনার সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় ভুলে থাকারও ভালো উপায় এটা, হোক তা স্বল্প সময়ের জন্যই। হাসি দিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখা নিজের সঙ্গে ছলনা হতে পারে। নিজের সমস্যা কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত এই সুযোগ গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই।  

ইতিবাচক লোকেদের আশপাশে থাকুন:
যখন পরাজিত ও বিপর্যস্ত বোধ করছেন, হতাশার গ্লানিতে ডুবে আছেন, এমন সময়ে সেইসব ব্যক্তির সঙ্গে থাকুন যাদের সঙ্গ আপনাকে সুখী করে তোলে। যাদের সঙ্গ আপনাকে সজীব করে তোলে তাদের পাশেই থাকুন। জীবন খুবই ছোট, তাই নিজের মূল্যবান সময় বিরক্তিকর লোকের সঙ্গে কাটিয়ে অপচয় করবেন না।

স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত হন:
যখন কোনো কারণ ছাড়াই অসুখী বোধ করছেন, তখন স্বেচ্ছাসেবার ব্রতী গ্রহণ করুন। স্বেচ্ছাসেবা একটা উত্তম পন্থা নিজেকে সুখী করে তোলার। আপনার আশপাশের অনাথ, অসহায় ও দরিদ্র নারী-পুরুষ-শিশুর পাশে দাঁড়ান, এর ফলে নিজের ভেতর থেকেই এক ধরনের আত্মসুখ পাবেন। নিজের জীবনটাও অর্থময় হয়ে উঠতে পারে।

শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েই স্বেচ্ছাসেবা হয় না। নার্সিং হোম, অনাথ আশ্রম কিংবা বিপদে পড়া যে কারোর-ই পাশে দাঁড়াতে পারেন ‍চাইলে। কিন্তু এটা অবশ্যই খুব সতর্কভাবে করতে হবে, অসাবধানতায় অন্যকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে যেয়ে তাকে আরও বিপদে ফেলবেন না যেন। শুধু মানুষকেই নয়, আশপাশের পশু-পাখি, প্রকৃতির প্রতিও দায়বোধ থেকে করতে পারেন অনেক কিছুই। নিজেই ভেবে দেখুন কত কি করা যায়।  

বাস্তবতার সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি করুন:
নিজের জীবনের নিত্যদিনকার কাজে ও চাপে নিমজ্জিত থেকে যদি বিপর্যস্ত বোধ করেন তবে বাস্তবতা থেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলে দূরে সরে থাকুন। দিনের বেলায় আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখুন, আষাঢ়ে গল্পের জাল বুনুন। নিজের কঠিন বাস্তবতা থেকে এই মানসিক বিরতি আপনাকে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন করে তুলবে। এমনকি আপনার কাজের নানা সমস্যার সমাধানেও সহায়ক হবে এই পদ্ধতি।

সর্বোপরি সুখী থাকার চেষ্টাই আপনাকে সুখী করে তুলবে। তাই সুখী মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন প্রাণপণে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ