ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

বালাই!!!

মনোকথা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
বালাই!!! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ছ‍ুটি গল্পে টিনএজ বয়সীদের  চিত্র ফুটয়ে তুলেছিলেন ফটিককে দিয়ে। যেখানে কৈশরের দূরন্তপনা সেসঙ্গে এ বয়সীদের স্পর্শকাতর মানসিক অবস্থাকে ফ‍ুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি।

ছুটি গল্পে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। তাহার মুখে আধে-আধো কথাও ন্যাকামি , পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্‌ভতা । ’ 

আবার ফটিকের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, ‘ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া কাহাকেও লক্ষ্য না করিয়া মৃদুস্বরে কহিল , ‘মা , এখন আমার ছুটি হয়েছে মা , এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি । ’

যাদের ঘরে এ বয়সী ছেলে মেয়ে আছে তারা রবীন্দ্রনাথের এ উক্তি হাড়ে হাড়ে টের পান। তবে তাদের মন যে খুবই স্পর্শকাতর এটা হয়তো অনেকেই আমার ভুলে যাই। যারা বিষয়টি ভুলতে বসেছেন তাদের জন্য মনোকথার এ আয়োজন।    

টিনএজ বয়সীদের মন খুবই স্পর্শকাতর হয়। যে কারণে সব বিষয়েই তারা চূড়ান্ত আচরণ করে। এমন আচরণের কারণে আমরা তাদের বড় হয়ে গেছে বলে ভুল করি, কিন্তু বিষয়টি মোটেও তেমন নয়।

সম্প্রতি একটি জার্নালে কি কারণে তারা চূড়ান্ত আচরণ করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ডা. যাতিন ভাদিয়া গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, এটি কোনো দীর্ঘ সময়ের সমস্য নয়।   ধরেই নেয়া হয় টিনএজ দল ভুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে মস্তিষ্কের গঠনের কারণে তারা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর মধ্যে স্বাভাবিক আচরণগুলো হলো শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে এমন কিছু মজার কৌতুক বল‍া, পরে যেন হাসি থামানো যাচ্ছে না। এরা নতুন প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়।

গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন, টিনএজ কিশোর-কিশোরীরা স্কুল শুরুর সময়ে ঘুমাতে ভালোবাসে। শতকরা ১৮ থেকে ৪৪ ভাগ টিনএজারদের রাতে স্বাভাবিক ঘুম হয় না এবং দিনে আট ঘণ্টার বেশি ঘুমায়। একই সঙ্গে তারা কিছুটা বিষন্ন সময় কাটায়। দৈহিক পরিবর্তনের কারণে ঘুমের এই অস্বাভাবিক প্রভাব যেমন মনের ওপর পড়ে, তেমন শরীরের ওপরও পড়ে, ফলে ঠিক মতো লেখা-পড়াও হতে চায় না।

এসময় তাদের ভেতরে কিছু অতি-আত্মবিশ্বাসীভাব দেখা যায়। তারা মনে করতে থাকে যেকোনো কিছু করে ফেলার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। অন্যদিকে কেউ কেউ আবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাদের কার্যক্ষমতা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনটি পরীক্ষার মধ্যে দ্বিতীয়টিতে ফলাফল প্রথমটির চেয়ে কম হলে তাদের আত্ম বিশ্বাসের মাত্রা শতকরা ৪৫ ভাগের নিচে নেমে আসে। অনেকেই এ অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্ত হয়ে যায়, যারা তাদের অবস্থান ধরতে পারে।

গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কের একটি ছোট অংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। মধ্য মস্তিষ্কে পাশের এই অংশকে বল‍া হয় ‘লেটারাল হ্যাবিনুলা’। অতীতে ধারণা করা হতো, এটি আচরণ এবং বিষন্নতা-আনন্দ নিয়ন্ত্রণ করে। দৈহিক পরিবর্তন এবং বৃদ্ধির সময় এটি অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকার কারণেই টিনএজাররা চূড়ান্ত আচরণ করে।

প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।

সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
 
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।   

আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন-

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ