ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

জানান আপনার সমস্যা ও মতামত

কখনো হাসি-খুশি, কখনো চুপচাপ

ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪
কখনো হাসি-খুশি, কখনো চুপচাপ

প্রিয় ডাক্তার সাহেব,
আমার স্ত্রীর বয়স ২৯ বছর। আমি অফিস জব করি।

বিয়ের পর বুঝতে পারি  আমার স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে। পরে আরো জানতে পারি তার বাবারও মানসিক সমস্যা ছিলো। বর্তমানে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। তার মূল সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরছি।

(১) ঘরের ভিতর থাকতে ভয় পায়। মৃত ব্যক্তি-বিশেষ করে সে বলে,  তার দাদি, আব্বা(মৃত) তার ঘরে এসেছে। বড় বড় চোখ করে তার দিকে নাকি তাকিয়ে আছে।
(২) ভয়ংকর চেহারা দেখতে পায়।
(৩) বর্তমানে সাজগোজে খুব বেশি বেশি করতে চায়।
(৪) গান-বাজনা না হলে তার চলে না। অল্প অল্প নাচানাচি করে। একজন অপরিচিত লোকের সামনে অবলীলায় গান শুনিয়ে দেবে। যেমন, লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া......।   শোন শোন সম্রাট শাজাহান....ইত্যাদি।
(৫) বেশি বেশি কথা বলে। যা একদমই অপ্রাসঙ্গিক।
(৬) উল্টাপাল্টা  কথা বলে। অবাস্তব এবং অস্বাভাবিক প্রশ্ন করে।
(৭) নিজের বাসায় থাকতে চায় না। শুধু ঘোরাঘুরি করে।
(৮) নিজেকে খুব বড় মনে করে। মাঝে মাঝে গালিগালাজ করে।
(৯) পান,গুল বেশি বেশি খাচ্ছে।
(১০) অস্থির টাইপের, কোনো কাজে তার দেরি সহ্য হয় না।
বর্তমানে ট্রিটমেন্ট চলছে ৩ মাস হলো কিন্তু খুব ভালো পরিবর্তন দেখছি না। বর্তমানে রাত্রে ভালো ঘুমায়। ওষুধগুলো নিম্নে উল্লেখ করলাম -Lithosun sr-400(বর্তমানে বন্ধ), Quiet-100mg(1+0+1), Perkinil-5mg(1+0+1), Lozicum-1mg(0+0+1), Disopan-0.5mg(0+0+1),Peridol-5mg(1+0+1).

দয়া করে আমাকে পরামর্শ দিন।

ধন্যবাদ আপনাকে। নিজে আগ্রহী হয়ে বিষয়গুলো জানতে চাওয়ার জন্য। হ্যা, আপনার স্ত্রী মানসিক রোগে ভুগছেন। খুব সম্ভবত আপনার স্ত্রীর রোগটির নাম বাইপোলার এফেকটিভ ডিজঅর্ডার।

এ রোগে এমন হয়, যে একবার নিজেকে অনেক বড় মনে করে, খুব হাসিখুশি থাকে, সাজতে চায়, টাকা প্রচুর খরচ করতে চায়, বেশি কথা বলে, খাওয়া কম, ঘুম কম, প্রচুর এনার্জি, গান গায় খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে এমন অনেক কাজ করে থাকে। আবার কিছুদিন পর উল্টাটাও করতে দেখা যায়, একেবারে চুপচাপ কথা বলতে চায় না, মন খারাপ, কিছুই ভালো লাগে না, এমন।

মজার বিষয় হলো, এ রোগটির সঠিক চিকিৎসা হলে সম্পূর্ণ ভালো থাকতে পারে। একেবারে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। কোনো সমস্যা হয় না। একটু বাড়তি বিষয় যেটি করতে হয়, সেটি হচ্ছে কাছের মানুষটিকে রোগটির বিষয়ে ভালো করে জেনে নিতে হয়। কখন কি করতে হবে, সেটা বুঝে নিতে হয়। বুঝে বুঝে সময়মতো সঠিক কাজটি করতে পারলে খুবই ভালো থাকে এরা।

আপনি যে চিকিৎসা বা ওষুধের নাম লিখেছেন, এটি কে দিয়েছে জানি না। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসার বিষয়গুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কিঞ্চিত পরিবর্তন করলে আরো ভালো হতে পারে। লিথোসান (Lithosun sr-400) বন্ধ রেখেছেন কেন? এ রোগের জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকেই দেখাবেন। অন্য কোনো চিকিৎসককে নয়। এটা মনে রাখবেন।
আপনার স্ত্রীর সুস্থতা কামনা করছি।

প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।

সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
 
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।   

আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন-





ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ