আমি বিশাল এক মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি। আমার সব সময় মনে হয় আমি মারা যাব।
আপনি একদিন মারা যাবেন, এটাইতো সত্যি। মৃত্যুকে আমরা কে ঠেকাতে পারবো? একদিন না একদিন আমাদের সবাইকেই মরতে হবে। মৃত্যুর কথা মনে আসাটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে এটা ভেবে নিজের কাজ ও চিন্তায় যখন সমস্যা হয় তখন সেটাকে গুরুত্ব সহকারেই দেখতে হবে। সব সময় মরার চিন্তা এবং সেই সাথে মরার পর কি হবে সেই চিন্তাটি যখন আপনি মন থেকে সরাতে চাইলেও সরাতে পারছেন না, তখন সেটা অবশ্যই গুরুত্ব রাখে।
আপনার অস্বস্তিবোধ এতোটাই যে, আপনি নিজে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থার কথা ভাবছেন। সেইসঙ্গে আত্মহত্যার কথাও চলে আসছে। এসব বিষয় থেকে ধরে নেওয়া যায় সত্যিই আপনি বর্তমানে মানসিক যন্ত্রণার ভিতরই আছেন।
এখানে সমস্যাটির দুটির দিক হতে পারে। এক আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন। দুই আপনার ওসিডি বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের সমস্যা আছে।
ডিপ্রেশন হলে, আগেও বেশ কিছু দিন আপনার মনে খারাপ থাকার কথা, তবে তা থাকতো কি না বোঝা গেলো না। আরো একটা বিষয় জানার ছিলো, আপনার মনে হঠাৎ করে মৃত্যু চিন্তাটা আসলো কেন? যদি কোনো মানুষ ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় ভোগে তবে তার অনেক ধরনের নেতিবাচক চিন্তা আসে, মন খারাপ লাগে, কিছু ভালো লাগে না, সেই সাথে মৃত্যুর আগে পরের বিভিন্ন চিন্তাও মনে আসতে থাকে।
অন্যদিকে ওসিডির বড় সমস্যা হলো, কোনো একটা চিন্তা একবার মনে ঢুকে গেলে আর সেটা বের হতে চায় না। অনেক সময় চেষ্টা করেও সেটা দূর করা যায় না। এখানেও আপনার কাছ থেকে আরো কিছু বিষয় জানার ছিলো। যেমন, আপনি আগে থেকেই খুতখুতে স্বাভাবের কিনা? অন্য এমন আর কোনো চিন্তা কি আসে, যেটা একবার শুরু করলে আর থামাতে পারেন না?
যে কারণেই হোক আত্মহত্যার চিন্তাটিকে গুরুত্ব সহকারেই দেখতে হবে। প্রয়োজনে আপনি আপনার নিকট আত্মীয় এবং অভিভাবকদের সাথে বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। যেহেতু চিন্তাগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে, সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাও জরুরি। চিকিৎসা নেওয়াটা অবশ্য দরকারি। দেরি না করে কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসা শুরু করুন। বগুড়া মেডিকেল কলেজেও দেখা করতে পারেন। আপাতত, ট্যাবলেট চেয়ার ৫০ মি.গ্রা. একটা করে সকালে শুরু করতে পারেন, নাস্তার পর।
প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।
সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।
আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৪