ঢাকা: আমরা প্রায়ই স্বপ্ন দেখি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্ভট স্বপ্ন দেখায় বিষয়টিকে পাত্তাই দিতে চাই না। ধরেই নেই স্বপ্ন কিছু অর্থহীন ভাবনা।
স্বপ্ন বিভিন্নভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আসুন জানা যাক দৈনন্দিন স্বপ্ন নিয়ে গবেষকদের দেওয়া পরামর্শ।
সম্প্রতি এক গবেষণায় মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন স্বপ্নের মাধ্যমের বড় ধরনের ঝামেলায় নির্দেশনা পেয়ে যেতে পারেন আপনি। স্বপ্নে আপনার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার প্রতিফলন ঘটে। ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো শান্ত অবস্থায় আসে, যে কারণে স্বপ্নে আসা নির্দেশনা মেনে দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
এই নির্দেশনা মেনে চললে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার সমাধানও হতে পারে। একটু মনে করার চেষ্টা করলেই দেখবেন আপনার স্মৃতিতে বড় কোনো ঘটনা সমৃদ্ধ স্বপ্ন রয়েছে, যার সুনির্দিষ্ট অর্থও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা আপনার জীবনে নাও ঘটে থাকতে পারে। অপরিচিত এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তি দিয়ে আপনার সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলে চলমান দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার সমাধান পাওয়া অস্বাভাবিক না।
কেবল সমস্যার সমাধানই নয়, স্বপ্ন আমাদের উৎসাহিতও করে। স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশনা এবং বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্ন স্বপ্নের অর্থ আপনার হতাশা কাটিয়ে দিতে পারে। কেননা মানুষ ঘুমিয়ে পড়লেও মানুষের চিন্তা থেমে থাকে না। আমাদের মন ঠিকই চিন্তাকে চালিয়ে যায়। মনে এ অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘সাব কনসাস মাইন্ড’।
অনেক সময় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মূল সমস্যা ধরতে না পারা। স্বপ্ন এই লুকিয়ে থাকা সমস্যা আপনার সামনে পরিষ্কাভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। স্বপ্নের মধ্যেই আপনার নির্জ্ঞান মনে লুকিয়ে থাকা আনন্দ, ভয়, উদ্বেগ, কামনা এমনকি জীবনের প্রকৃত লক্ষ্যও ধরা দিতে পারে।
সম্প্রতি স্বপ্ন নিয়ে করা গবেষণা সম্পর্কে ফরাসী মনোবিজ্ঞানী কোহেন প্রাভার বলেন, যখন মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিষয়টি আপনার সামনে ধরা দেবে তখন আপনি আপনার মূল লক্ষ্য ধরে এগুতে পারবেন। অনেক সময় আমরা আমাদের চাওয়া সম্পর্কে জানতে পারি না। যে কারণে হয়তো কাজ করে যাই, সফলতাও পাই কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারি না। নিজেকে জানার পরে যদি সঠিক পথে হাঁটা যায়, তবে মানুষ নিজেকে এবং জীবনকে ভালবাসতে শুরু করবে।
কোহেন তার গবেষণায় এমন এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করেন যিনি সহজে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তিনি প্রায় রাতেই স্বপ্ন দেখেন একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে হাঁটার চেষ্টা করছেন।
গবেষণায় তার এই স্বপ্ন বিশ্লেষণ করা হয়। তার এ ধরনের স্বপ্নের পেছনের কারণ হিসেবে পাওয়া যায়, তার বাবা-মা’র বিচ্ছেদ। মূলত বাবা-মার বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এ ধরনের স্বপ্নের উদ্ভব। তিনি যে অসমাপ্ত স্বপ্ন দেখতেন তা সম্মন্ন করতে মনোচিকিৎসকেরা তার পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ করেন। ফলে হাসপাতালের দিকে হাঁটার চেষ্টার স্বপ্নটা পূর্ণতা পায়। এরপর থেকেই তিনি নতুন করে শুরু করতে সক্ষম হন।
গবেষণার শেষ দিকে তিনি জানান, আমি স্বপ্নের মাধ্যমেই আমর সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছি। এখন আমার সমস্যা এবং ভয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।
স্বপ্নের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারলে যে কোনো বড় সমস্যারই সমাধান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।
সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।
আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪