আসসালামুআলাইকুম
আমার প্রশ্ন ছিল, মানুষ যে স্বপ্ন দেখে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি?
আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, আমার মা প্রায়ই স্বপ্ন দেখে এর ফল বলে দেয় এবং এর ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে মিলে যায়।
যেমন- আমার মা বলে মানুষের সামনের ভাল দাঁত পড়লে ঘরের অল্প বয়সের মানুষ মারা যায়, সাপে আক্রমণ করতে দেখলে সামনে কোনো বিপদ আছে এটা বলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সত্যও হয়।
অবশ্যই আছে। তবে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না বলে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শব্দটি বলাই বেশি উপযোগী।
স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা- ফিলোসফিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল, নিউরোলজিক্যাল, ধর্মীয়, এমন কি স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও প্রকৃতিগত ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। যেসবের অনেকগুলোই আবার অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। তবে, আমাদের কাছে অর্থাৎ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যে ব্যাখ্যা বা দিকটি বেশি দরকারি সে সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করছি।
মানুষ যখন ঘুমায় তখন প্রত্যেকটি মানুষকে দুই ধরনের ঘুমের ভেতর দিয়ে পুরো সময়টিকে পার করতে হয়। একটাকে বলে, ‘রেম স্লিপ’ অন্যটি হলো ‘ননরেম স্লিপ’। দুই ধরনের ঘুমেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট, আলাদা আলাদা চরিত্র আছে। সময়, ঘুমের গভীরতা, শরীরের প্রতিক্রিয়া, মস্তিষ্কের কাজ, ঘুম থেকে সজাগ হবার প্রবণতা, স্বপ্ন দেখা এমন কি ঘুম ভাঙার পর কেমন অনুভূতি হবে সেসবও নির্ভর করে দুই ধরনের ঘুমের চরিত্রের উপর।
ননরেম স্লিপের আরেক নাম ডিপ স্লিপ বা গভীর ঘুম। ননরেম স্লিপ দিয়ে ঘুম শুরু হলেও, রাত যত বাড়ে ননরেম স্লিপ কমতে থাকে এবং রেম স্লিপ ততই বাড়তে থাকে। রেম স্লিপেই মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তা মনে করতে পারে।
উপরের এই কথাগুলো হলো একজন সাধারণ এবং সুস্থ মানুষের কথা। কিন্তু ডিপ্রেশন বা যারা অতিরিক্ত এনজাইটিতে ভোগেন তাদের রাতের শুরু থেকেই রেম স্লিপ বেশি হতে থাকে। তারা সারা রাতই বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখে। ভোর বেলা ঘুম থেকেই উঠলে টায়ার্ড ফিল করেন। কারণ স্বপ্নের সাথে সাথে ব্রেইনও কাজ করতে থাকে, ফলে ঘুমের মাধ্যমে যে পূর্ণ রেস্ট হবার কথা সেটা হয় না।
অন্যদিকে ডিপ্রেশনে মানুষ সাধারণত দুঃস্বপ্নই বেশি দেখে। কেনো দুঃস্বপ্ন দেখে? এ নিয়ে তেমন কোনো সঠিক ও প্রমাণিত ব্যাখ্যা জানা নাই। তবে বলা হয়, মানুষ অবচেতন মনে যা ভাবে, যেভাবে ভাবে, তারই প্রতিফলন স্বপ্ন।
আর স্বপ্নের সাথে মিলে যাওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা খুব বেশি সত্যি নয়। যা হয় তা হলো কাকতালীয়। অবচেতন মন ঘটনাটিকে মিলাতে চায়।
মানুষ যখন মানসিক ভাবে বিষণ্ন থাকে তখন সব কিছুকেই মেলাতে চায়। আর বিষণ্ন অবস্থায় ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাকেই মানুষ মনে রাখতে চায়। অপর দিকে যখন মুড ভালো থাকে তখন মানুষ অনেক বিষয়কে সহজেই ইগনোর করতে বা এড়িয়ে পারে।
স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে কাজ করার বিষয়টিকে বলা হয় অনাইরোলজি (oneirology)। আরো বেশি জানতে আপনি ইন্টারনেট এর সাহায্য নিতে পারেন।
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪
মনোকথা
জানান আপনার সমস্যা ও মতামত
স্বপ্ন মিলে যাওয়ার ঘটনা সব সত্যি নয়
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।