আকাশটা কেমন মেঘলা, গুড়িগুড়ি বৃষ্টিও পড়ছে। মনটাও কেমন অদ্ভূত বিষণ্নতায় ছেয়ে আছে।
আবহাওয়ার সঙ্গে যে মনের ভাব বদলানোর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা আমরা কম বেশি সবাই জানি। কখনো বাদল দিনে মন কেমন বিষণ্ন লাগে। আবার কখনো বা শীতের শুষ্কতার সাথে সাথে আমাদের জীবনের রংই কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিন্তু আমরা হয়তো এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি যে ঠিক কোন সময়টা বা কোন ঋতুতে আমাদের মনের ভাবেব বিস্তর পরিবর্তন ঘটে। আর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের মনোভাবের এ পরিবর্তনকে বলা হয় সিজনাল ইফেকটিভ ডিজঅর্ডার।
সিজনাল ইফেকটিভ ডিজঅর্ডারের কারণ
শীতের দিনে অপর্যাপ্ত উজ্জ্বল আলো থেকে সিজনাল ইফেকটিভ ডিজঅর্ডারের সূচলা হয় বলে ধারণা করা হয়। গবেষকরা গবেষণায় দেখেছেন যে উজ্জ্বল আলো মানুষের মস্তিষ্কে এক ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তণ ঘটায়। তবে ঠিক কিভাবে এবং কি ধরনের বিক্রিয়া মস্তিষ্কে ঘটায় সেটা এখনো গবেষণার বিষয়।
যখন এ ধরনের বিষয় অবচেতনে ঘটতে থাকে তখন রক্তে ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা দেখা যায়, যাতে সিজনাল ইফেকটিভ ডিজঅর্ডার সৃষ্টি হয় । সেই সঙ্গে আরো নানা ধরনের বিষন্নতা জনিত ডিজঅর্ডার থাকতে পারে।
রোগের লক্ষণ
সিজনাল ইফেক্টিভ ডিজঅর্ডারের সেভাবে উল্লেখ করার মতো কোনো লক্ষণ নেই। তবে ক্লান্তিবোধ, অবসাদ, বিষণ্নতা, বিরক্তি ও সব কিছুতে সমস্যা খোঁজার প্রবণতাকে চিকিৎসকরা এ রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেন। এছাড়াও, শারীরিক বেদনা, যৌনানুভূতিহীন, ঘুমের স্বল্পতা, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ অতিরিক্ত খাওয়াকেও প্রবণতা হিসেবে ধরা যায়।
তবে গ্রীষ্মকালে সাধারণত ইনসমনিয়া (অনিদ্রা রোগ), ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো বেশি ফুটে ওঠে। এমনকি রোগীকে আত্মহত্যা করার ভাবনার দিকেও নিয়ে যায় সিজনাল ইফেক্টিভ ডিজঅর্ডার।
রোগের লক্ষণগুলো বছরের শেষ থেকে শুরু হয়ে বসন্ত অব্দি থাকে। তবে কোন মাসে লক্ষণগুলো বেশি ফুটে উঠবে, তা নির্ভর করে বিষুবরেখার সাথে ব্যক্তির মধ্যকার দূরত্বের উপর। সাধারণত কম আলোর মাসগুলোতে (বর্ষাকাল বা শীতকাল) লক্ষণগুলো বেশি তীব্র হয়ে ওঠে।
সিজনাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা
এ রোগের সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিরোধ হচ্ছে আলো। বলা ভালো, উজ্জ্বল আলো। বিশেষত ফ্লুরোসেন্ট আলো রোগীর বিষণ্নতা দূর করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
আলো চিকিৎসায় ভালো ফল পেতে রোজ সকাল-সন্ধ্যা এটি ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মাঝে সাময়িক জায়গা বদলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে সেটি হতে হবে কোনো উজ্জ্বল আলোর জায়গা। উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোর নাম।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আলো চিকিৎসাকে বলা হয় ফটোথেরাপি। বাজারে ‘লাইট বক্স’ বলে ফটোথেরাপি নেওয়ার উপকরণ পাওয়া যায়। রোজ প্রায় ৩০ মিনিট লাইট বক্স থেকে আলো পাওয়া যাবে।
সেক্ষেত্রে আলোর মাত্রা হবে লাইট বক্সের সর্বোচ্চ ২৫ ঘর। সমপরিমাণ আলো স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে আমরা ব্যবহার করে থাকি। ফটোথেরাপি আলোর গুণগত মানের উপর নয়, আলোর পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
তবে ফটোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে বিরক্তি, ইনসমনিয়া, মাথাব্যথা ও চোখের যন্ত্রণা।
** আবহাওয়ায় বদলায় মন!
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪