ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

জানান আপনার সমস্যা ও মতামত

চাহিদাগুলোকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করো

ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৪
চাহিদাগুলোকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করো

স্যার,
সালাম নেবেন। আমাকে একটি ভালো সমাধান দেবেন।

নিম্নে আমার ঘটনা উপস্থাপন করলাম-

২০০৭ সালের শুরুর কথা। আমার এক পরিচিতা তার সাথে দেখা হয় প্রথম ২০০৭ সালে ছোট বোনের সুবাদে। তাকে প্রথম দেখাতে  ভাল লাগে তাদের বাসাতে যাই প্রথম বার অনেক অনুরোধের পর। কেটে যায় কয়টি বছর হঠাৎ আবার দেখা ২০১০ সালে সেই মেয়েটির সাথে। চলে যায় কিছু মাস। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার ফোন নম্বর চেয়ে নিতে পারি নাই। এর পর আবারও দেখা হয় মাঝখানে আপার বাসায়। খালাম্মাসহ আপার বাসাতে বেড়াতে এসেছিল। সেদিনও তার ফোন নম্বরটা সংগ্রহ করা হলো না। যখন বাড়ি ফিরে আসি ঠিক তখন একটা নম্বর থেকে ফোন আসে রিসিভ করতে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে ওঠে। সে বলে, ‘ভাইয়া ঠিক মতো বাসায় পৌঁছেছেন কিনা’।

তার পর আর কথা হয় নাই অনেক দিন। প্রায় তিন মাস পর। মাঝ রাত ৩টা হবে একটা মিসড কল এলো। দেখি সেই প্রিয় মানুষ এর ফোন। আমি তখন ছাত্র। ফোনে টাকাও ছিল না তাই গভীর রাতে ফোন না দিয়ে পরদিন সকালে  ফোন দিয়ে কুশল বিনিময় করি এবং এক সময় কুশল বিনিময় করতে করতে ভালো লাগাটা ভালবাসায় পরিণত হয়। বলে রাখা ভালো  আমি তখন ঢাকায় মাস্টার্স শেষবর্ষের পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সম্পর্কটা অনেক কাছের হলো। দু’জন দু’জনকে বোঝার চেষ্টা করছি এবং একে অপরের খোঁজ খবর রাখতে শুরু করি।   আমি যে সেই মেয়েটিকে পছন্দ করি সে বুঝতে পেরেছিল আমার আচরণে। একসময় আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক  তৈরি হলো।
 
একদিন হঠাৎ সে প্রথম খালাম্মার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিল। খালাম্মা আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিল যা এখন খেয়াল নেই। তবে এটুকু খেয়াল আছে  আমি তাকে ( মেয়েটির ‘চারু’  ছদ্দ নাম) কে পছন্দ করি কিনা? উত্তরে সত্যই বলেছিলাম হ্যা। তার পর মাঝে মাঝে খালাম্বার সাথে কথা হতো। আমাকে খালাম্মা বাপজান বলে ডাকতেন। আমিও মেয়ে বলতাম তাকে।

পড়াশুনার পাঠ শেষ। এবার চাকরি একটা দরকার। কারণ তখন চারুর বার বার বিয়ের প্রস্তাব আসছিল  বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরিজীবী ছেলেদের সাথে। আমি একটু বিব্রত হয়ে পড়লাম প্রথম যাকে ভালবাসলাম সে আমার হবে না? চাকরির প্রিপারেশন ভালোই নিতে শুরু করলাম। মাস্টার্সের রেজাল্ট হওয়ার আগে একটি সরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি ছোট একটা পদে। আমার বসয় বর্তমানে ২৮ আর চারুর বয়স ২৩ । চারু আমাকে আমাদের সম্পর্ক বা আমাদের কথা হয় এটা বলতে নিষেধ করেছিল খালাম্মাকে তাই অনেক কথা হলেও খালাম্মা জিজ্ঞেস করলেও মিথ্যে বলতে হতো চারুর সাথে আমার কথা হয় না।

এখানে একটু বলে রাখা ভাল যে চারু তার পূর্বের সম্পর্কের কথা আমাকে বলেছিল এবং খালাম্মা যে মানুষিকভাবে অসুস্ত তা আমাকে বলেছিল। তাই না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় খালাম্মাকে মিথ্যেই বলতে হতো। আমাকে বার বার বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিতে বললেও আমি মাত্র চাকরিতে যোগদান করলাম কিছু বুঝে ওঠার পূর্বে এটা কেমন যেন কঠিন চাপ মনে হচ্ছিল। সব কিছু বোঝার আগে দুই পরিবারের পারিবারিক ভাবে দেখা শোন হলো চারুর বাড়ির লোকজন বিশেষ করে তার মামারা আমার বাড়িতে আসে।

সম্ভবত বর্ষার মাঝামাঝি। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল  কাদা মাটির পথ বুঝতেই পারছেন তাও আবার বিভাগীয় শহরের মানুষ। সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো গত জুলাইর ২০১৩ এর ৫ তারিখ হবে। যাই হোক প্রথম স্বাক্ষাতটা তাদের পরিবারে সদস্যদের উপস্থিতিতে ভালো হয় নাই কারণ তারা আলোচনা করার সময় কেউ এক জন বলছিল যে চারু গ্রামে থাকবে কি না? আর যে অল্প টাকা বেতন তাতে সংসার চলবে কি না ? তাদের মেয়েকে সুখি করতে পারবো কিনা? আবশ্য পছন্দ না হলে একথা বলে এটাই স্বাভাবিক।

এসব কথা সোনার পর আমি তাদের সাথে ইচ্ছে করে ভালো করে কথা বলিনি। বলে রাখা ভাল যে খালাম্মা আমাকে তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে ফোনে বলে দিয়েছিল যেন তাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলি। নিজ কানে এমন উক্তি শোনার পর হয়তো একটু বিব্রত হয়ে গিয়েছিলাম।

আমাদের বাড়ি-ঘর আর আমাকে পছন্দ হলো না মনে হয় চারুর মামাদের। ছেলে হিসাবে বর্তমান জামানার বখে যাওয়া ছেলেদের মতো আমি নই। সধারণ ঘরের ছেলে হলেও বাবার মর্যদা আর শিক্ষা দুই মিলে আমাদের এলাকাতে একটা ভাল সম্মান আছে। এর পর ও আমরা বেশ কয়েকবার দেখা করেছি লুকিয়ে।

প্রথম চারু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো তাদের বাসাতে আমি যখন চারুর হাত ধরে ডাকছিলাম। তখন ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ।   তার পর থেকে আজ পর্যন্ত আর হাত ধরা হয়নি। এক দিন রাতে ফোন না দিলে বা খালাম্মার সাথে কথা বলতে গেলেও সে অনেক বিরক্ত হতো।

পারিবারিক ভাবে দেখা শোনার পড় খালাম্মা বলেছিল বছর খানেক সময়ের মধ্যে যেন একটা ভালো চাকরি যোগার করি আর খুব খারাপ লাগলে যেন ফোন দেই। আমি এমন ঘটনার পর আর কখনো ফোন দেই নাই খালাম্মাকে। জানি না খালাম্মা হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি ফোন না দেয়াতে কারণে। তিনি আমাকে খুব ভালবাসতো। চারুদের বড়ির লোকজন আসার ঠিক আগে ০৩ জুলাই কোনো একটি কারণে আমাকে এসএমএস দিয়ে ছিল আমি যেন তাকে আর ফোন না দেই। কারণ সে আমার সাথে রাতে কথা না বলে প্রায় ঘণ্টার মতো ফোনে ব্যাস্ত ছিল বলে আমি কি যেন বলে ছিলাম।

এভাবে আস্তে আস্তে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকলো সে এক দিন বলে বসলো আমার পরিবার আমাকে যেখানে বিয়ে দিবে সেখানে বিয়ে করবো। পরিবারের মতের বাইরে কিছু করা সম্ভব না। আমি খুব কষ্ট পেলাম। ভালোবাসি তাই অনেক অবহেলা বুঝতে পেড়েও না বুঝার ভান করতে থাকি আর কথা বলতে থাকি।

হঠাৎ এক দিন চারু বললো, আমি যেনোতাকে ফোন না দিই। ফোন দিয়ে কোনো লাভ নেই যেহেতু বিয়ে হবে না।

তারপরও চারুর সাথে যোগাযেগ রাখি এবং গত জানুয়ারি, ২০১৪ এর মাঝে প্রায় ৫-৬ বার দেখা করি সে একা আমার সাথে দেখা করতো না। একাধিক বন্ধু-বান্ধবী সাথে থাকতো আবার সব বন্ধু-বান্ধবীদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয় নাই।

গত ২ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখের পর আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে। সে আর আমার ফোন রিসিভ করে না। কোনো এসএমএস দিলেও তার উত্তর দেয় না। এর মাঝখানে অনেক রাতেই ফোন ব্যস্ত পেতাম। আমিও মাঝে মাঝে ফোন দেয়া বন্ধ করে রাখতাম। কারণ আমি রাতে ফোন দিলে তার ফোন ব্যস্ত এবং কথা বলা শেষ হলেও ফোন রিসিভ করতো না। সকালে জানতে চাইলে কার সাথে কথা বলছিলে সে বলতো আমার বলতে ভাল লাগে না।

আমি ভালবাসি অনেক! চারু আমায় জীবনে পূর্ণতা দিয়েছে। তাকে ছাড়া আমি!  ভাবতে অনেক কষ্ট হয় এভাবে অনেক কষ্টে নিজেকে ইতিবাচক দিক ভেবে সাললে নিয়ে রাখছি যে হয়তো এমন এক সময় আসবে চারু তার ভুল বুঝতে পারবে এবং আমার কাছে ফিরে এসে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু সে এখনো আমার ফোন ধরছে না। অনেক স্মৃতি আছে যা শেয়ার করলে হয়তো ভাল হতো। কিন্তু কিছু কথা আছে যা বলা উচিৎ না এক জন মানুষের যা অন্যের কষ্টের কারণ হয়। আমি চাই না আমার জন্য অন্য কেউ কষ্ট পাক বা আমার এ লেখাতে ব্যক্তি আমি কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমি শুধু আমার নিজের হতাশা থেকে বাঁচার জন্য এটি লিখতে বাধ্য হয়েছি কারণ আমি আমার এ কষ্টের কথা প্রয় দু’বছর কাউকে বলতে পাড়ছি না।

গ্রামের বাড়ি গেলে মুরব্বিদের কাছে শুনতে হয় কবে বিয়ে করবো? আবার চারু ফোন রিসিভ করে না! এখন শুধু অফিস আর বাসা পড়াশোনা  তবুও যেন মনে হয় প্রতিটি মুহূর্তে আমি কবে পাড়বো আমার ইচ্ছেকে পূর্ণ করতে? নাকি পাড়বো না। নাকি একতরফা ভালবেসে যাচ্ছি। কোনো উত্তর না পেয়ে নিজেকে মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট মানুষ যে আমার চারু আমার সাথে কথা বলে না তবুও ফোন দেই শুধু তার হাসিমুখের কথা শোনার জন্য। এতো কিছুর পরে কি আমি বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিৎ।   ভালো কোনো পরামর্শ থাকলে জানাবেন।

তুমি চারুকে ভালোবাসো এটা স্পষ্টই বোঝা গেলো, মেয়েটিও হয়তো তোমাকে ভালোবেসেছিলো। তা না হলে তোমাদের বাড়ি দেখতে লোক পাঠাতো না। তবে, মেয়েটি তোমাকে কেনো পছন্দ করেছিলো সে বিষয়টি জানা গেলো না। তোমার কোন কোন দিক ওকে আকৃষ্ট করেছিলো জানতে পারলে ভালো হতো। তুমি সে বিষয়গুলি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করো। তার চাহিদার বিষয়গুলিকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করো।

আবার তোমার লেখা থেকে এটাও স্পষ্ট যে, মেয়েটি রাতে এখন অন্য কারো সাথে কথা বলে। তোমার ফোন এবং এসএমএস এর জবাবও দেয় না। তার মানে মেয়েটি তোমাকে আগের মতো করে দেখে না। তোমার একটা বিষয় খুবই ভালো লাগলো যে, তুমি নিজেকে ভালো ছেলে হিসেবে দাবি করো। অন্যসব বখাটে ছেলেদের মতো তুমি নও।

সুতরাং এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে তোমার নিজের প্রতি নিজের সেই বিশ্বাস নষ্ট হয়। সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করবে। যদি মেয়েটি ফিরে না আসে, তবে তোমার সময় এবং মন কিভাবে ভালো রাখবে সেটারও একটা সুন্দর পরিকল্পনা করে রাখো। মানুষ কোথাও দাঁড়িয়ে থাকে না। সময়ই বলে দেবে তোমার জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো।

মেয়েটি যে যে কারণে তোমাকে পছন্দ করেছিলো সে বিষয়গুলি ধরতে পারলে তোমার সেই গুণে গুলোকে আরো স্পষ্ট করে মেলে ধরতে চেষ্টা করো। নিজের উপর তোমার যে বিশ্বাস আছে, তার উপর জোর দেবে। ভালো মানুষেরা শেষ পর্যন্ত ঠকে না। তোমার ভালো গুণ গুলোকে মেয়েটা বুঝতে পারলে আবার তোমার দিকে মনোযোগ দিবে। না হলে, ভবিষ্যতে আরো ভালো কোনো সমাধানের জন্য অপেক্ষা করো। তোমার কষ্ট দূর হোক সেই কামানই করছি।



ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ