ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

জানান আপনার সমস্যা ও মতামত

চুল তুলে ফেলা, একটা মানসিক রোগ

ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪
চুল তুলে ফেলা, একটা মানসিক রোগ

আমার বয়স ২৩ বছর। জন্ম থেকেই ঢাকাতে থাকি।

যখন আমার বয়স ২ বছর বাবা মারা যান। আম্মু একাই আপুকে doctor বানিয়েছে এবং আমাকে একটি স্বনামধন্য বেসরকারি university তে engineering পড়াচ্ছে। আমার আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। ammu is working in a private company since abbu died. আমাদের অভাব নেই, কিন্তু অতিরিক্ত খরচ করবারও পরিস্থিতি নেই যেহেতু ৪ মাস পর পর প্রায় ৭০ হাজার টাকা শুধু আমার পিছনেই যায়।

ছোটবেলা থেকেই আমরা দুজনই অনেক ভালো ছাত্রী ছিলাম। বলে রাখি আমাদের জন্য ammu is a great mother. যদিও মাঝে মাঝে বকাঝকাও করে।

এবার সমস্যার কথা বলি।

class 6 থেকে আমি বেশি tension এ থাকলে মাথার চুল one by one করে টেনে তুলে ফেলতাম। তখন ব্যাপারটাকে আম্মু তেমন গুরুত্ব দেয়নি আমিও না। পরীক্ষা আসলে কিংবা কোনো কিছু নিয়ে tension করার সময় এই জিনিস বেশি হতো। ছোটবেলায় ২জন  skin doctor এর কাছে গিয়েছিলাম, উনারা বলেছিলেন মানসিক সমস্যা। আম্মু গুরুত্ব দেয়নি। আমিও তা করতেই থাকি। এক জায়গা থেকে অনেকবার তোলাতে ওই জায়গাগুলোতে চুল একদম কমে গেছে। a huge portion of my scalp is kind of bald right now.

পরীক্ষার চাপ এবং সময়ের অভাবে medicine ও use করা off করে দেই. কারণ আম্মু বকাঝকা করলেও স্বভাবটা আমার যেত না, so medicine use করেও লাভ হতো না।

এখন বড় হওয়ার পর সমস্যাটা উপলব্দি করছি, problemটা মানসিক এটাও জানি, কিন্তু মাথার চুল সামনে এবং পিছন ছাড়া বাকি অংশে নেই বললেই চলে। ১ বছর হয়েছে স্বভাবটা কমে গেছে, যদিও পুরপুরি না। প্রতিদিন পেঁয়াজ ব্যবহার করছি মাথায়। doctor এর কাছে একদম যেতে ইচ্ছা করে না।

laser করলে হয়তো ঠিক হবে, কিন্তু এতো টাকা দিয়ে করা possible na. পরিবারের ছোট মেয়ে হয়ার জন্য may be কারো এটা নিয়ে তেমন tension ও nei. কিন্তু আমি এটার জন্য ইদানিং অনেক বেশি depression এ থাকি. আম্মুকে বললেই বলে, আমার নিজের দোষে হয়েছে। কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কি করলে আমি সমস্যা থেকে just পুরপুরি recover করতে পারবো? এবং কি করলে এই জায়গাগুলোতে আগের মতো চুল গজাবে? আদও কি possible হবে এটা? 


হ্যা, আপনার এটা একটা মানসিক রোগ। রোগের নাম ট্রাইকোটিলোম্যানিয়। এটি এমন একটি মানসিক রোগ যেখানে রোগী বা আক্রান্ত মানুষটি নিজেই তার চুল টেনে টেনে তুলে ফেলেন। তুলতে তুলতে একটা বিশাল জায়গা খালি করে ফেলেন।

বিষয়টি এমন না যে, হঠাৎ একদিন বসে বসে এক সাথে অনেক চুল তুলে ফেললেন। এ কাজটি তিনি অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে করেন; করতেই থাকেন। ইচ্ছে করেও সে অভ্যাস বা কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেন না।

নারী পুরুষ দুজনেরই এ রোগ হলেও তুলনামূলক ভাবে মেয়েদেরই বেশি হয়। সাধারণত; দেখা যায় ১২-১৩ বছর বয়সে এ রোগের শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগেও দেখা দিতে পারে (২-৬ বছর), তবে সেসবের বেশিরভাগই কিছুদিনের ভিতর সেরে যেতে দেখা যায়।

মনে রাখতে হবে, এটা স্কিন ডিজিজ বা চর্মরোগ নয়। সুতরাং ওসব ওষুধ ব্যবহারে আপনার কোনো উপকার হবে না। চুল তোলা বন্ধ করতে পারলে সেসব জায়গায় এমনিতেই আবার চুল উঠবে। সুতুরাং লেজার চিকিৎসারও কোনো মানে নেই।

এ রোগের চিকিৎসা একটু সময় সাপেক্ষ, সুতরাং ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দুটোই দরকারি।

আপনি কোথায় থাকেন বোঝা গেলো না, ঢাকায় থাকলে বিএসএমএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন। তা’না হলে, আপনার জন্য সুবিধাজনক কোনো জায়গায় একজন মানোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপাতত, ক্যাপসুল মডিপ্রান ২০মিগ্রা (ফ্লুক্সেটিন) প্রতিদিন সকালে একটা করে শুরু করতে পারেন।

দীর্ঘদিন এ রোগ থাকলে অনেক সময় সাথে ডিপ্রেশন চলে আসতে পারে। আম্মুকে বলবেন, এটা ইচ্ছা করে করার বিষয় নয়। এটা একটা রোগ। রোগ কেউ ইচ্ছা করে চায় না। আম্মু নিশ্চয়ই বুঝবেন। আর সাইকোথেরাপি দরকার যা আপনাকে কোনো একজনের সাথে সরাসরি গিয়েই শুরু করতে হবে।

 

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ