ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

প্যান্টেই মল ত্যাগ!

ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪
প্যান্টেই মল ত্যাগ!

তনয় অনেক দিন পর তার বাবার সঙ্গে রমনা পার্কে বেড়াতে গেছে। রমনা পার্ক তার খুব পছন্দের একটি জায়গা।

বড় মাঠে দৌড়োদৌড়ি-ছুটোছুটি কী যে মজার খেলা, উহ্ বলে বোঝানো যায় না।

ঘণ্টাখানেক পর তনয়ের বাবা খেয়াল করলো যে তনয় যেন কেমন অস্বস্তিবোধ করছে। তনয়কে প্রশ্ন করতেই সে চুপষে গেল। তার দৌড়োদৌড়ি-ছুটোছুটি বন্ধ। হঠাৎ করেই যেন মুখের অঙ্গ-ভঙ্গি বদলে গেল। উফ! তাহলে আবার সেই একই ঘটনা ঘটল নাকি?

আর সহ্য হয় না। এর আগে আরো চারবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আর সেজন্য তনয়কে নিয়ে কোথাও বের হওয়া হয় না। ভয় হয়, কখন কোথায় প্যান্ট ময়লা করবে। সাত বছর বয়সেও যদি প্যান্টে মল ত্যাগ করে তবে তা খুবই লজ্জার।

আসলে তনয়ের মতো অনেক বাচ্চা একটু বড় হওয়ার পরও প্যান্টে মল ত্যাগ করে যা খুবই অস্বস্তিকর। সাধারণত ৪ বছর বয়সের মধ্যে শিশুরা মল ত্যাগের অনুশীলন শিখে ফেলে।

সাধারণত এ ধরনের সমস্যা শতকরা ১ থেকে ২ ভাগ বাচ্চার মধ্যে দেখা যায়। তবে মেয়েদের চেয়ে ছেলে শিশুরা এ রোগে  বেশি আক্রান্ত হয়। ছেলে শিশুরা মেয়ে শিশুদের চেয়ে ৩-৬ শতাংশ বেশি এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকে। নব্বই শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে নির্দিষ্ট কোনো কারণ বা প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে দেখা যায়।

খাদ্যাভাস, কম পরিমাণ পানি ও তরল খাবার পান করা, শাক-সবজি কম খাওয়া, কঠিন মল ত্যাগ, ব্যথাযুক্ত মল ত্যাগ, মল ত্যাগে ভয় পাওয়া, সঠিক মল ত্যাগের প্রশিক্ষণ না থাকা, শারীরিক অসুস্থতা কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ।

পারিবারিক অশান্তি, অতি শাসন, অতি স্নেহ ও শিশু-কিশোরদের প্রতি অবহেলা যেখানে সেখানে মল ত্যাগ সমস্যায় উল্লেখযোগ্য কারণ।

আক্রান্ত শিশুদের পিতা-মাতা এবং যত্নদানকারীরা তাদের সমস্যা না বুঝতে পেরে তাকে শাস্তি দিয়ে থাকে। তাতে শিশু মানসিক ভাবে আরো ভেঙে পড়তে পারে। এ ধরনের শিশুরা হতাশায় ভুগতে পারে, আত্ম-বিশ্বাস কমে যেতে পারে, রাগ বেড়ে যেতে পারে  এবং নিজেকে একা ভাবতে পারে এবং লেখাপড়া বা খেলাধুলায় অমনোযোগী হয়ে পরে। অনেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। নিজেকে অন্যের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায় এবং ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে পরে। সেই সঙ্গে ঘুম কমে যাওয়া, ক্ষুধা বা খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা করা, পেট মোচরানো, খিটখিটে মেজাজ, অস্থির লাগা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মানসিক সমস্যা ও রোগ হতে পারে। সুচিকিৎসার মাধ্যমে অধিকাংশ শিশু-কিশোরের মানসিক সমস্যা ও ব্যধি নিরাময়যোগ্য।

সাহায্যের জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার সন্তানকে সাহায্য করার জন্য কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজনও হতে পারে।

আপনার সন্তানের এ রকমের সমস্যায় আপনি প্রথমে ডাক্তার দেখিয়ে শারীরিক ভাবে পরীক্ষা করাতে পারনে। শারীরিক সমস্যা হলে তার চিকিত্সা  নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য  হলে তা সর্ম্পূণরূপে  নিরাময়যোগ্য। কিন্তু এ সমস্যা ঠিক হতে সময় নিতে পরে। তাই ধৈর্য ধরুন। শিশুদের খাদ্যের মধ্যে যথেষ্ট ফাইবার সমৃদ্ধ এবং তরল খাদ্য  শৈশব থেকে থাকা উচিৎ। প্রতিদিন খাদ্যের তালিকায় সুষম খাদ্য থাকা উচিত। তাদের  প্রচুর তরল পান করা উচিত। আপনার সন্তানের খাদ্যে পর্যপ্ত ফল, সবজি, ফাইবার, তরল (জল ও ফলের রস) রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করুন।

ফাইবারের ভালো উত্স শস্য, বাদামি চাল, তুষ, আলুবোখরা। তবে এদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার ফাইবার আছে রুটিতে। সুষম খাদ্যের সাথে নিয়মিত মল ত্যাগে উত্সাহিত করা প্রয়োজন হতে পারে।

সন্তানকে খুব তাড়াতাড়ি সঠিক বয়স (৪ বছর বয়সের মধ্যে)  টয়লট ব্যবহারের  প্রশক্ষিণ (টয়লটে বার) দিন। নিয়মিত টয়লেট ব্যবহার গুরুত্বর্পূণ। উদাহরণস্বরূপ, ব্রেকফাস্ট এবং ডিনারের পরে টয়লেট যাওয়ার অভ্যাস করান আপনার সন্তানকে। একটি নিয়মিত রূটিন স্থাপন করুন যাতে তারা প্রতিদিন ব্রেকফাস্ট এবং ডিনারের পর টয়লেটে যায়। এ রুটিন সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক হতে উৎসাহিত করুন।
 
টয়লেটে আপনার সন্তানরে জন্য একটি ইতিবাচব অভজ্ঞিতা চালু করতে চষ্টো করুন। ভালোবাসামাখা এবং প্রশংসার সঙ্গে তাদের উত্সাহিত করুন। টয়লেট প্রশিক্ষণে সফল হলে তাদের পুরস্কৃত করুন।

যদি তার পরও শিশুর যেখানে সেখানে মল ত্যাগ সমস্যা ভালো না হয় তবে শিশুদের মানসিক ভাবে দৃঢ় করার জন্য মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেখানে সেখানে মল ত্যাগ সমস্যায় শিশুর বিভিন্ন মানসিক সমস্যা ও রোগও হতে পারে অথবা মানসিক সমস্যা ও রোগের জন্য যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করতে পারে। সেজন্য সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিরাময় করা দরকার।

বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমেই তা নিরাময় করা সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসক এ রোগের জন্য কার্যকরি ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দিতে পারে। মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন শিশুদের মানসিক সমস্যা এবং রোগ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমইউ

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ