ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

বিছানায় প্রস্রাব মানসিক সমস্যা!

ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৪
বিছানায় প্রস্রাব মানসিক সমস্যা!

তুর্যের বয়স ৮। তবুও প্রায় রাতেই সে ঘুমের ঘোরে প্রস্রাব করে বিছানা ভেজায়।

আর এ নিয়ে তার মায়ের অনেক ভাবনা, বেশির ভাগ সময় রাতটা কাটে উৎকণ্ঠায়। কোথাও বেড়াতে গেলে রাতে থাকা হয় না লজ্জায়।

বাচ্চার এই সমস্যার জন্য অনেক হুজুর দেখানো হয়েছে, ঝাড়-ফুঁক করানো হয়েছে, এমনকি তাবিজ-কবজও দেওয়া হলো। নাহ্ কিছুতেই কোনো উন্নতি হয় না। কী যে হলো তুর্যের? কী এমন বদনজর লাগল ওর? কে এমন ক্ষতি করল? এরকম আরও কতো কতো দুশ্চিতা।

আসলে এ ধরনের সমস্যা কোনো বদনজর বা কারো ক্ষতি করার কারণে হয় না, এটি একটি মানসিক সমস্যা।

সাধারণত, ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে একটি শিশু তার প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে ফেলে। কিন্তু কোনো কোনো সময় শিশুর এই বয়সের পরেও প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশেষ করে রাতে ঘুমালে বিছানা ভিজায়।

এ সমস্যা মানসিক কারণ ছাড়াও শারীরিক কারণে হতে পারে। তাই শারীরিক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হতে পারে।

পরিবারে এ ধরনের সমস্যা মা-বাবার বা ভাই-বোনের থাকলে, নতুন ভাই বা বোনের জন্ম হলে,  মানসিক চাপ যুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠলে, অতিশাসন, অতি স্নেহে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হলে, পারিবারিক অশান্তি, কোনো কারণে মা থেকে দূরে থাকলে, শিশু যদি মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে এ ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

শিশুর যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ২০ মাস বয়স থেকে তাকে  প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ শেখাতে হবে। শিশুকে প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে হবে ধীরে ধীরে ধৈর্য সহকারে। কারো কারো প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্ত্রণ শিখতে একটু দেরি হতে পারে, সেজন্য অধৈর্য হওয়া ঠিক হবে না।

অনেক সময় শিশু নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্রাব করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাতে সাড়া দিন।

রাতে নির্দিষ্ট সময় পর পর শিশুকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং তাকে প্রস্রাব করার জন্য উৎসাহ দিন।

যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও (৫-৬ বছরের বেশি) বিছানায় প্রস্রাব করে এমন শিশুর জন্য কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে শিশুর এ ধরনের সমস্যা ভালো হয়ে যায়।

যে শিশু যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও  রাতে ঘুমালে বিছানা ভিজায় তাকে সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত পানি পান করাবেন না, রাতে তাকে ঘুম থেকে তুলে প্রস্রাব  করাবেন।

যে রাতে সে বিছানা ভেজাবে না তার পরবর্তী সকালে তাকে ছোট কোনো উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করুন।

হিসাব রাখুন মাসে কতদিন প্রস্রাব করে বিছানা ভেজায় আর কতদিন বিছানা ভেজায় না এবং যেকটি দিন প্রস্রাব করে বিছানা ভিজায় না তা হিসাব করে তাকে ছোট কোনো উপহার দিন। তাহলে শিশু খুশি হবে এবং বিছানতে প্রস্রাব না করার জন্য উৎসাহ বোধ করবে এবং সেই সাথে তার মনোবলও বাড়বে।

যদি তার পরও শিশু রাতে প্রস্রাব করে বিছানা ভিজায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ধরনের সমস্যার জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা আছে যা অনেক কার্যকরী। এ রোগের জন্য কার্যকরী ওষুধ ও চিকিৎসা আছে। পরিবারের সদ্যসদের সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা এবং ব্যাধি নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বিএসএমএমইউ

বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ