ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ: কি করবেন?

ডা. সৃজনী আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৩
উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ: কি করবেন?

ভয় এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা মানসিক রোগের একটি বড় অংশ। এই ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসাও গুরুত্বপূর্ণ।



চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টা একজন চিকিৎসককে অবশ্যই নির্ণয় করতে হয় তা হচ্ছে উদ্বেগজনিত যে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে তার অন্তর্নিহিত কারণ কি।

এর আগে এই লক্ষণগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। লক্ষণগুলো অন্যান্য কিছু  মানসিক রোগেও দেখা দিতে পারে। যেমন- বিষণ্নতা, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, আঘাতজনিত মানসিক রোগ ইত্যাদি। আর এরকম ক্ষেত্রে ম‍ূল সমস্যার চিকিৎসা জরুরি। মূল সমস্যার চিকিৎসা এসব ক্ষেত্রে উদ্বেগ তারও সমাধান করে।

এবারে আসা যাক উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যাগুলোর কথায়। এই রোগগুলোর নির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। চিকিৎসার ধরন ও একেক বিভাগের ক্ষেত্রে একেক রকম। তবে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই ওষুধ এবং মনস্তাত্বিক এবং সামাজিক সব ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

খুব তীব্র উদ্বেগজনিত লক্ষণকে প্রশমিত করতে স্বল্প সময়ের জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যায়। ওষুধের পাশাপাশি সাইকোসোশাল চিকিৎসাও প্রয়োজনীয়।

এই দুই ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে আসতে পারেন, সুস্থ হতে পারেন।

উদ্বেগজনিত মানসিক রোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত, পরীক্ষিত বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেগুলো ব্যবহার করা হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের পর্যায় বিবেচনা করে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী ওষুধগুলো বন্ধ করা যায়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সোশাল ফোবিয়ার কথা। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক পরিবেশগুলো এড়িয়ে চলেন। যেই পরিবেশগুলোতে তাকে অনেক মানুষ এক সাথে দেখবে ,অথবা অনেক মানুষের মন্তব্য বা সমালোচনার সম্ভাবনা আছে সেই পরিবেশে রোগীর অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতাজনিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। সুতরাং এই ধরনের পরিবেশ তারা এড়িয়ে চলেন। শ্রেণিকক্ষ, দাওয়াত, রেস্টুরেন্ট, দোকান, মিলাদ মাহফিল, সভাসমিতি এমনকি বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডাও এড়িয়ে চলেন এই রোগের রোগীরা।

এই ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় পরবর্তী প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং সাইকোলজিকাল থেরারি দুইটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রোগে ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা এবং নেতিবাচক সমালোচনার ভয়কে দূর করার পদক্ষেপ না নিলে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

মোটকথা অতিরিক্ত উদ্বেগ তৈরি হওয়ার পেছনে যে বিষয়গুলো ভূমিকা রাখে সেগুলোর  সমাধানের পথে না গেলে চিকিৎসা যথাযথ হয় না।


আরেকটি বিষয় এই যে, মানসিক রোগ বিষয়ে বিভিন্ন প্রচলিত ধ্যান ধারনার কারণে দেখা যায় এই রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক রোগ থেকে এই  লক্ষণগুলো হচ্ছে সেই ব্যাপারে ধারণা অস্পষ্ট থেকে যায়। এতে করে উদ্বেগ আরও বাড়তে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে ধারণাগুলো ঠিক করার জন্য উদ্বেগজনিত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে রোগীর স্বচ্ছ ধারণা দরকার।

দীর্ঘদিন যাবৎ উদ্বেগজনিত মানসিক রোগগুলো চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় থাকলে রোগীর আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- বিষণ্নতা, প্রচলিত ঘুমের ওষুধে আসক্তি, এলকোহল আসক্তি, শারীরিক লক্ষণ প্রভৃতি। এর ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, তার স্বজন  এবং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

শৈশব-কৈশোরে এ ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার আওতায় না আসলে ব্যক্তিত্বের গঠনই ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, ব্যহত হতে পারে সুষ্ঠ‍ু বিকাশ।

তাই উদ্বেগের কারণে সৃষ্ট মানসিক রোগগুলোকে অবহেলা না করে যত দ্রুত পারা যায় চিকিৎসা করার মাধ্যমে রোগীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।  

আপনার মতামত এবং সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদের ই মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।

ডা. সৃজনী আহমেদ
এম ডি, ফেজ এ, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বি এস এম এম ইউ

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ