পৃথিবীতে কি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা স্বপ্ন দেখেন না! শুধু কি মানুষ, স্বপ্ন দেখে পশুও। মানুষ শুধু স্বপ্ন দেখেই শান্ত হয় না।
স্বপ্ন নিয়ে বেশ কিছু মজার তথ্য মনোকথার পাঠকদের জন্য...
১. স্বপ্ন নাকি সাদা কালো হয়। কিন্তু এ ধারণাটা মোটেই ঠিক না। শতকরা মাত্র ১২ ভাগ লোক সাদা-কালো স্বপ্ন দেখেন। বাকিদের স্বপ্নে ধরা দেয় নানা রং। স্বপ্নের আরও একটি ধরন আছে যা সবাই দেখে। যেমন, কেউ স্কুলে যাচ্ছে বা কাজ করছে, কেউ নিপীড়ন থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে, পড়ে যাচ্ছে, মৃতব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা, দাঁত পড়ে যাওয়া, আকাশে ওড়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ইত্যাদি।
২. বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমরা যে স্বপ্ন দেখি তার অধিকাংশই হারিয়ে ফেলি বা ভুলে যাই। কিন্তু তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় যদি আপনি কোনো স্বপ্ন দেখেন তাহলে তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সবই আপনার মনে থাকবে। সাধারণত ভোরের স্বপ্নগুলো এমন হয়।
৩. এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা রাতে মাত্র একটা স্বপ্ন দেখেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন মানুষ প্রতিরাতে পাঁচ থেকে সাতটি স্বপ্ন দেখেন। কখনো কখনো তা ডজনও ছাড়িয়ে যায়। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ঘুমের পাঁচটি পর্যায় লক্ষ করেছেন এবং প্রতিটি পর্যায়ে একজন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন দেখেন বলে তাতে উল্লেখ আছে।
৪. স্বপ্ন নিয়ে আরেকটি মজার তথ্য হলো- তিন বছরের নিচে কোনো শিশু স্বপ্ন দেখে না। আর তিন থেকে আট বছরের শিশুরা যে স্বপ্ন দেখে তার বেশির ভাগই দুঃস্বপ্ন। তারা এ বয়সে যত দুঃস্বপ্ন দেখে তা তার সারা জীবনে দেখা দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি।
৫. আপনি কি ভাবছেন যাদের দৃষ্টিশক্তি আছে শুধু তারাই স্বপ্ন দেখেন। আপনার ধারণা মোটেও ঠিক নয়। অন্ধরাও স্বপ্ন দেখেন। যারা জন্মান্ধ নয়, জন্মের পর কোনো কারণে অন্ধ হয়ে গেছেন তাদের স্বপ্ন দৃশ্যযোগ্যই হয়। তবে যারা জন্মান্ধ স্বপ্ন তাদের কাছে দৃশ্য হিসেবে নয় বরং শব্দ-গন্ধ কিংবা স্পর্শযোগ্য অনুভূতি হিসেবে ধরা দেয়।
৬. সবারই কম-বেশি এ ধরনের অনুভূতি হয়। আমাদের অবচেতন মন কখনো কখনো আমাদের এমন কিছু অনুভূতির সম্মুখীন করে যে মনে হবে বিষয়টি বুঝি স্বপ্নে ঘটছে। যদি কোনো মানুষের তৃষ্ণা পায়, তাহলে আমাদের অবচেতন মন এক গ্লাস ভর্তি ঠাণ্ডা জলের কোনো প্রতিকৃতি আমাদের অবচেতন মানসে ফুটিয়ে তুলতেই পারে। আবার এমনও হয় যে স্বপ্নে দেখলেন আপনার খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে, ঘুম ভেঙে গেলেও দেখবেন শুকিয়ে আপনার গলা পুরো কাঠ। অথবা খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে স্বপ্নে দেখলেন এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল আপনার হাতের নাগালে।
৭. আমাদের অবচেতন মন ইঙ্গিত এবং প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করে। তাই একেবারে আক্ষরিক অর্থে বা যৌক্তিকভাবে কিংবা একটি সমৃদ্ধ কাহিনী সূত্র হিসেবে স্বপ্নকে সংযুক্ত করা মোটেও ঠিক হবে না। অবচেতন মন কখনোই কোনো ঘটনার পরিষ্কার চিত্র আমাদের সামনে উপস্থিত করে না। বড়জোর একটি ঘটনার ইঙ্গিত দিতে পারে আপনাকে।
৮. স্বপ্নে আমরা এমন অনেক অদ্ভুত জিনিস দেখি যা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। বিষয়গুলো ব্যক্তি মানুষের ওপর নির্ভর করে। যা আমরা বাস্তবে বা টিভিতে দেখি, কিন্তু যেগুলো ঠিক মনে করতে পারি না। আমাদের অবচেতন মনের কোনো এ কোণায় তা হয়তো জমা থাকে। আর স্বপ্নে এরই প্রতিফলনই দেখতে পাই আমরা।
৯. পাগল আর মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ছাড়া সবাই স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নারী-পুরুষের স্বপ্নের ধরন আলাদা। পুরুষের সাধারণত স্বপ্নেও তাদের লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু নারীর স্বপ্ন সার্বজনীন।
১০. আমরা আমাদের দেখা স্বপ্নের ৯০ ভাগই ভুলে যাই। যদি পাঁচ মিনিটের ভেতর জেগে উঠি তাহলে আমরা আমাদের স্বপ্নের অর্ধেকও মনে রাখতে পারব না।
যদি ১০ মিনিটের ভেতর হয় তাহলে স্বপ্নের মাত্র ১০ ভাগ আমরা মনে রাখতে পারি। কবি-সাহিত্যিক বা বিজ্ঞানীরাও তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখেন। এক্ষেত্রে শুধু মাত্র তারাই ভাগ্যবান যারা, ঘুমানোর আগে বিছানার পাশে কাগজ-কলম রাখেন!
১১. আবার নেশাগ্রস্ত মানুষের স্বপ্নেও থাকে ভিন্নতা। যেমন এমজন ধূমপায়ীর কথাই ধরুন না কেন ধূমপায়ীদের কাছে স্বপ্ন আরও গভীর আরও বাস্তব হয়ে ধরা দেয় অধূমপায়ীদের তুলনায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা স্বপ্ন দেখে যে তারা ধূমপান করছে। আর একারণেই তারা এক ধরনের অপরাধ বোধে ভুগতে থাকে।
১২. শুধু মানুষই নয় স্বপ্ন দেখে পশুরাও। পশুদের ওপর পরিচালিত আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ ঘুমের সময় স্বপ্ন দেখলে যে কার্যকলাপগুলো করে, স্বপ্ন দেখা অবস্থায় পশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্রমও মানুষের মতোই হয়। আপনি যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন যে একটি কুকুর যদি ঘুমের মধ্যে তার থাবা নাড়ায় তার অর্থ সে স্বপ্নে দৌড়াচ্ছে। যদি লক্ষ করেন কুকুরটি ঘুমের ভেতর শব্দ করছে তার মানে হলো সে স্বপ্নে কোনো কিছু দেখে ঘেউ ঘেউ শব্দ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৩
এসএটি/এএ/এমজেডআর