মনে পড়ে, মনে লাগে, মনে আছে। কিংবা মনে কোনো দ্বিধা রেখে চলে যাবার প্রশ্নটা আপনি করতেই পারেন! নয়ন ভরা জল হলেও নয়ন দিয়ে তো দিব্যি দেখেন।
মন, হৃদয় বা অন্তর কোনো কিছুই তো খালি চোখে দেখি না! তবে কি মন বলে কিছুই নেই? কোথায় তার বাড়ি? এ মন কোন গাঁয়ের ছেলে বা মেয়ে!
কারো তির্যক মন্তব্য যেমন মনে বড্ড ব্যাথা দেয়। আবার তীক্ষ্ণ বস্তুর খোঁচায় ‘আউ’ শব্দ করে বোঝাই শরীরের কোনো অংশে ব্যাথা পেলাম। ভয় পাবো জেনেও ভয়ের ছবি দেখে ভয় পেয়ে আনন্দ পাই। আর কারো পা পিছলে ধরণিপাতের দৃশ্য দেখে কেউ হন আনন্দিত, কেউবা ব্যথিত। কিন্তু কি ভাবে আমাদের মাঝে এ বিচিত্র সব অনুভবের বা বোধের বিষয়টা সম্পন্ন হয়? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, মন মহাশয় নীরবে নাটাই ঘোরাচ্ছেন।
আমাদের ত্বকে, চোখে, কানে, নাকে এমন কি জিহ্বায় ‘রিসেপ্টর (স্নায়ুপ্রান্ত)’ থাকে। বলতে পারেন অভ্যর্থনাকারী। সে অভ্যর্থনাকারী শব্দ, দৃশ্য, আলো, স্পর্শ, কম্পন, তাপমাত্রা, স্বাদ, ঘ্রাণ ইত্যাদির সংকেত স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে স্নায়ুর পথ বেয়ে মগজের নানা অঞ্চলে পাঠায়। আর মগজে প্রেরিত সংকেত নানা অনুভূতির সৃষ্টি করে।
মগজে রিওয়ার্ড এবং পানিশমেন্ট সেন্টারের উদ্দীপনা কিংবা নীরবতার কারণে প্রেরিত অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত হয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভাবনা।
ধরুন, কাঁচা লঙ্কার স্বাদ। কাঁচা লঙ্কা মুখে পুরেই আগুন ঝাল! লঙ্কার ঝাল কারো মাঝে সুখানুভূতি আর কারো মাঝে নেতিবাচক অনুভূতি জাগায়। আর এ পুরো ঘটনার বারংবার পুনরাবৃত্তি মগজের ভাঁজে ভাঁজে স্মৃতি তৈরি করে। পরবর্তীতে ঐ লঙ্কা মহাশয়কে দেখে বা তার কথা ভেবে কেউ হন পুলকিত কেউবা বিরক্ত।
মাঝে মধ্যে স্মৃতি বেচারা স্বপ্নে দু’একবার লঙ্কার ছবি মনে করিয়ে দিরেও দিতে পারে। কিন্তু এখানেও মন কোথায়? এতো এক ধরনের অনুভূতির ব্যাখ্যা। হ্যাঁ এ ধরনের ছোট ছোট অনুভূতির মিশ্রনেই তৈরি হয় স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা। আর স্মৃতির হাত ধরে মনের থাকা না থাকা।
মোটকথা প্রাত্যহিক নানা ঘটনা অভিজ্ঞতা বা বিষয় আমাদের কাছে সুখানুভূতি বা নেতিবাচক অনুভূতি জাগায়। সে হতে পারে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল যে কোনো কিছু। পরবর্তীতে জীবন চলার পথে বারবার সে অভিজ্ঞতার আলোকে এক ধরনের বিশ্বাস বা বোধ জন্মায়। ব্যক্তির মাঝে ওই বিষয়ে এক প্রকার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। মন্দ-ভালো, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি। আর এ বিষয়গুলোর ওপরই মনের সার্বিক অবস্থা নির্ভর করে।
তাই সাদামাটা ভাবে ‘মন কি’ এ প্রশ্নের উত্তর হলো- মগজের নানা অঞ্চলের স্নায়ুকোষের মাঝে এক অপূর্ব ছন্দময় কথোপোকথনের সারমর্ম। আরো সহজভাবে বললে, শ্বাস নেওয়ার অঙ্গ যদি হয় ফুসফুস তবে মনের অঙ্গ মগজ বা মস্তিষ্ক।
আর মানুষের আচরণ সৃষ্ট দর্পণে আমরা মনের অস্তিত্বই দেখতে পাই। কেউ নিশ্চুপ কিংবা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন এর মানে তার মন ভালো নেই। কষ্টে আছেন তিনি।
আবার প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে মনের বা হৃদয়ের আকুতি প্রকাশের জন্য গানে গানে কেউ কেউ হৃদয় চিরে দেখানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। হৃদয় বা মন কি তবে বুকের মাঝখানে থাকে? কিন্তু বুকের পাঁজর সরিয়ে যা দেখা যায় তার নাম কি মন,সে তো ‘হৃদপিন্ড’!
তবে কি হৃদপিন্ড আর হৃদয় এক নয়! না হৃদপিন্ড আমাদের সারা গায়ে রক্ত ছড়িয়ে দিয়েই চুপ! চার প্রকোষ্ঠের সে ঘরে নেই কোনো আক্ষেপ, উষ্মা, রাগ কিংবা ভালোবাসা! আপনার আকুতি বুঝতে সে একেবারেই অক্ষম। তার মাঝে শুধুই গতিময় রক্ত রস আর কণিকা।
হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম থাকা না থাকার বিষয়টি তাই পুরোপুরি হৃদয়হীনার মস্তিষ্কপ্রসূত বিষয়। হৃদ মাঝারে রাখা মানে মগজে রাখা।
মনের সন্ধান পেতে চান? তবে মগজ খুঁড়ুন!
আপনাদের মতামত এবং সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদের ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
ডা. মো. সালেহ উদ্দীন
এম ডি, ফেইজ এ (সাইকিয়েট্রি)
ডিপার্ট মেন্ট অফ সাইকিয়েট্রি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৩
এসএটি/এমজেডআর