ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদ: তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

ডা. মো. সালেহ উদ্দীন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদ: তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

মা মা শোনো। আজ একটা স্বপ্ন দেখেছি, ‘তুমি কাঁদছো, নথের পাশ দিয়ে তোমার চোখের পানি ঝরছে ফোঁটায় ফোঁটায়।

একেক ফোঁটা পানি একেকটা লাল ফুল হয়ে ফুটে যাচ্ছে। ছোট ছোট ফুল’- দোলো আমার কনক চাঁপা -আহমদ ছফা।  

আমাদের যাপিত জীবনে স্বপ্ন এক বাস্তবতা বটে। ঘুমে ও জাগরণে  ‘স্বপ্ন দেখা’  দু’অর্থে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখা বলতে ব্যক্তির নিজস্ব প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যত দর্শন বোঝায়। সাফল্যের সুখস্বপ্ন, ব্যর্থতার দুঃস্বপ্ন কিংবা বলা যায় লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক নিরন্তর তাড়নার অভিব্যক্তি।    
Dream
গদ্যে, পদ্যে, ছন্দে, ছবিতে স্বপ্ন নানা সময় নানা ভাবে প্রকাশিত হয়। কিন্তু নিদ্রাকালে স্বপ্ন দর্শন বলতে কি বোঝায়? কেন মানুষ স্বপ্ন দেখে?  আর তার গুরুত্বই বা কি?  

বহুকাল ধরে স্বপ্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে ফিরেছেন।   আধুনিক সময়ে সিগমুন্ড ফ্রয়েড-ই প্রথম স্বপ্নের মনস্তাত্ত্বিক দিক গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন। তার মতে আমাদের প্রাত্যহিক নানা কাজের, কথার, অভিজ্ঞতার ভিড়ে অব্যক্ত অনুভূতিগুলো অবচেতনভাবেই মনের গভীরে জমাট বাধতে থাকে। আর রাতের ঘুমে সেই অব্যক্ত চাপা অনুভূতিগুলো চেতনার স্তরে ভেসে ওঠে।

ফ্রয়েডের মতে অনুভূতি বা অভিজ্ঞতাগুলো অবিকল দৃশ্যপটে না এসে স্বপ্নের মোড়কে রূপান্তরিত ভাবে প্রকাশিত হয়। তার মতে নির্ঝঞ্জাট ঘুমের জন্য এ রূপান্তরিত প্রকাশ জরুরি। ফ্রয়েড তার গবেষণায় আরও উল্লেখ করেছেন যে,  প্রতিটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা আছে এবং স্বপ্ন যৌনাকাঙ্ক্ষা বা আগ্রাসী মনোভাবের প্রতীকী প্রকাশ। তবে পরবর্তীতে গবেষকরা তাদের গবেষণায় ফ্রয়েডের তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা প্রমাণ করেন।    

নিউরো সায়েন্স এর ভাষায় আমাদের প্রাত্যহিক সাদা কালো রঙিন ধূসর স্বপ্নগুলো মগজের কোষে কোষে সঞ্চারিত হয়। তবে কোন ব্যঞ্জনায় ভেতরকার স্নায়ুকোষগুলো নিদ্রাকালীন স্বপ্ন সাজায় তার প্রথম ব্যাখ্যা করেছেন হাভার্ড ইউনিভার্সিটির দু’জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী জন এলান হবসন ও রবার্ট মেকার্লি। তাদের সক্রিয়তা সংশ্লেষণ মডেল (Activity- Synthesis Model)’ এ তারা মস্তিষ্কের নানা অংশ যেমন- মস্তিষ্কের সামনের অংশ, পেছনের অংশ, অনুভূতি অঞ্চল ইত্যাদির গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। ‘অ্যাসিটাইলকোলিন’ নামক রাসায়নিক পদার্থ এক্ষেত্রে স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
Dream
হবসন ও মেকার্লির এ ব্যাখ্যা স্বপ্ন সংগঠনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করলেও স্বপ্নের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে না। তাদের মতে স্বপ্ন সংগঠনের প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে অনেক গবেষক স্বপ্নকে ‘ব্যাটারি রিচার্জের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, এ সময়ে জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্কে ক্ষয়িত সব রাসায়নিক পদার্থের পুনর্বন্টন হয় যা পরবর্তী দিনের কর্মযজ্ঞের জন্য অত্যাবশ্যক। আধুনিক বিজ্ঞান এখনো পর্যন্ত স্বপ্নের মধ্যকার অনুভূতি, দৃশ্যের সংশ্লিষ্টতার দিকগুলো ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

আমরা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় অনেক সময় অলীক বস্তু দেখি, শব্দ শুনি বা বোধ অনুভব করি। যা একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু জাগরণে কোনো ব্যক্তির এ ধরনের অভিজ্ঞতা অস্বাভাবিকতা হিসেবে ধরা হয় (ধর্মীয় বিশ্বাস এ আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত নয়)। অনেক  সাইকোটিক রোগী যেমন- সিজোফ্রেনিয়া, তীব্র ডিপ্রেশন/ম্যানিয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ ধরনের অবাস্তব অভিজ্ঞতা দেখা যায়। বর্তমানে এসব রোগের নানা পথ্য প্রচলিত থাকলেও পুরোপুরি রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই। তাই স্বপ্ন সংগঠনের পুরো প্রক্রিয়া ও তার সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতি, অভিজ্ঞতার সংশ্লিষ্টতার রহস্যজট উদঘাটন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তখন হয়তো জ্বর কাশির মতো এ ধরনের মানসিক রোগগুলোর  নিরাময় সহজে সম্ভব হবে।

আপনাদের মতামত এবং সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদের ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।

ডা. মো. সালেহ উদ্দীন
এম ডি, ফেইজ এ (সাইকিয়েট্রি)
ডিপার্ট মেন্ট অফ সাইকিয়েট্রি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
এসএটি/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ