১২ বছরের সোমা খুব অবাক হয়ে গেল মায়ের কথা শুনে। বাইরে বের হওয়ার সময় সোমা কোন জামাটা পড়বে তা নিয়ে মা বললেন, ‘তুমি এখনো ছোট, আমি যা বলবো, যেভাবে বলব সেভাবে চলবে।

রবীন্দ্রনাথ এ সময়টা সম্পর্কেই বলেছেন, ‘১৩-১৪ বছরের মতো বালাই আর নেই’। এ বয়সে নিজেকে যেন কোথাও খাপ খাওয়ানো যায় না। নিজের কি মনে হয়, কিভাবে চলতে ইচ্ছে করে এবয়সী ছেলে-মেয়েরা বোধয় তা নিজেও জানে না। এমনকি নিজেকেই যেন নিজের কাছে ভীষণ অচেনা মনে হয় তাদের।
মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ হচ্ছে কৈশর। এই সময়টা সাধারণত ১১-১২ বছর বয়স থেকে ১৮-১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। এ পর্যায়টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লিঙ্গ অনুযায়ী শারীরিক পরিবর্তন।
বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই পরিবর্তনের ধাপটিকে বয়ঃসন্ধি বলা হয়। বিভিন্ন হরমোন, জীনগত বৈশিষ্ট্য, পুষ্টি, পরিবেশের অবস্থা অনুযায়ী ব্যক্তিভেদে এই শারীরিক পরিবর্তনগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

শারীরিক পরিবর্তনগুলোর ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে ভয় তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ভুল ধারণাও তৈরি হয়। এছাড়া অনেক সময় এই পরিবর্তনের সূচনাগুলো অহেতুক ভীতিরও জন্ম দেয়।
শিশুর মতো নিজের প্রাত্যহিক চাহিদাগুলোর জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকেনা এ বয়সী ছেলে-মেয়েরা। নিজের পছন্দকে প্রকাশ এবং পালন করতে চায়। সর্বোপরি নিজেকে আলাদা একজন মানুষ হিসেবে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
পরিবারের মধ্যে নিজের অবস্থান খুঁজে পেতে এ বয়সীরা সচেষ্ট থাকে। নিজের মতামত প্রকাশের প্রবণতা দেখা দেয়, সরাসরি বাধা পেলে বিরূপ মানসিকতা তৈরি হয়। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বোধ এই বয়সে উপলব্ধিতে আসতে থাকে।

সামাজিক ভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সময়। ব্যক্তিগত নীতি নৈতিকতার সংজ্ঞা তৈরি হয় এই বয়সেই। পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবেশ অনুযায়ী মূল্যবোধের চর্চা শুরু হয়।
এ বয়সের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। পূর্বে যেমন বলা হয়েছে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে অহেতুক ভীতি তৈরি হতে পারে, এমন কি স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে অপরাধ বোধও দেখা যায়।
পরিবারে মা-বাবার আচরণ, পরিবারে নিজের মূল্য পাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এই বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বন্ধুদের প্রভাব ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক দুইরকমই হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলবদ্ধভাবে একটি কার্যক্রম পরিচালনায় যেমন বন্ধুর প্রভাব থাকতে পারে আবার মাদক গ্রহণেও বন্ধুর প্রভাব থাকতে পারে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য এখনো অনেকখানি উপেক্ষিত এবং ঝুঁকির মুখে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে বাল্যবিবাহ, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণ তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আবার সামাজিকভাবেও কৈশোরকালীন মানসিক পরিবর্তন এবং যথাযথ পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতনতা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত।
এই ধাপটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা ভবিষ্যতের সুনাগরিক তৈরির হাতিয়ার।
ডা. সৃজনী আহমেদ
এম ডি, ফেজ এ মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বি এস এম এম ইউ
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬ , ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর [email protected]