ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

সব মানুষই কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগী

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৩

প্রায়ই শোনা যায়, সব মানুষই কোনো না কোনো ভাবে মানসিক রোগী, কিংবা সব মানুষের মধ্যেই কিছু কিছু মানসিক রোগ আছে। কেউ কেউ আবার একটা নির্দিষ্ট শতাংশ উল্লেখ করেও বলেন- এতো শতাংশ মানুষ তো মানসিক রোগী! বাস্তবে এর তথ্যগত সত্যতা কতটুকু? কেন এই কথাগুলো চালু হলো? এর পিছনের উদ্দেশ্যই বা কি হতে পারে?

মানসিক রোগ বা সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, হয়ে আসছে।

আমাদের দেশেও বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে এবং বর্তমানেও চলছে। দেশে কিংবা বিদেশে কোথাও এমন কোনো গবেষণার ফলাফল বা তথ্যের কথা জানা নেই যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সব মানুষের মাঝেই এত ভাগ মানসিক রোগ আছে বা সমস্যা আছে।

তবে বড় বড় এমন অনেক গবেষণায় রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে- প্রতি তিনজন বা প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় কোনো একটি মানসিক রোগে ভুগতে পারেন বা ভুগেছেন কিংবা ভুগছেন।

পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এসব গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। উইকিপিডিয়াতেও এসব বিষয়ের উপর পরিচালিত বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফল দেওয়া আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বিভিন্ন তথ্য থেকে শুরু করে সমস্ত ইউরোপের উপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলও রয়েছে সাইটটিতে। উইকিপিডিয়াতে একটি মজার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।   ইউরোপে পরিচালিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বলা হয়েছে, “প্রতি দশ জনের মধ্যে অন্তত একজন বছরের কোনো না কোনো সময়ে কোনো একটি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ”

এখানে দেখা যায়, গবেষণাগুলো মূলত কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীতে, নির্দিষ্ট সময়ে কী সংখ্যক মানসিক রোগী পাওয়া যায় তার উপর পরিচালিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি তিন জনের মধ্যে অন্তত এক জন বছরের কোনো এক সময় ছোট-বড় কোন একটি মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।   প্রায় একই রকমের তথ্য চীন বা অস্ট্রেলিয়াতেও দেখা গেছে।

কিন্তু এমন কোন তথ্য কোথাও উল্লেখ নেই, যেখানে একজন মানুষের নির্দিষ্ট কতটুকু মানসিক সমস্যা আছে বা থাকতে পারে সেটার শতাংশ দেখানো হয়েছে। কোনো কোনো গবেষণায় অবশ্য একজন মানুষের কোনো একটি সময় মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এমন কোনো তথ্য কোথাও নেই যেখানে বলা হয়েছে, সব মানুষের মাঝেই মানসিক সমস্যা আছে বা থাকে!

কথা হলো এমন একটি প্রবাদ বা বিশ্বাস মানুষের মধ্যে থাকলে অসুবিধা কোথায়? বা আদৌ কোনো অসুবিধা আছে কি?
উত্তর হলো, হ্যাঁ, অসুবিধা আছে। অবশ্যই আছে।
সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো যারা রোগে ভুগছেন তাদের। বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে, সবার মাঝে কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা বা রোগতো এমনিতেই থাকে। সুতরাং এসবের আবার চিকিৎসার দরকার কি? রোগের প্রয়োজনীয় গুরুত্বকে বা গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকাংশে হালকা করে ফেলা হয় এসব বক্তব্য বা বিশ্বাসের মাধ্যমে। আর এতে ব্যাহত হয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রায় সবদিক।

চিকিৎসা ব্যবস্থায়, প্রয়োজনী সতর্কতা অবলম্বনে এমনকী এ সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে এসব বিশ্বাসের বিরূপ প্রভাব পড়ে। আমরা মাঝেমধ্যেই রোগীর আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে এমন কথাও শুনে থাকি যে, সবার মাঝে কিছু না কিছু সমস্যাতো আছেই, এই নিয়ে এতো চিন্তার কি আছে?

এখানে উল্লেখ্য যে, মানসিক রোগ বা মানসিক সমস্যা এক কথা নয়। অনেক মানসিক সমস্যা এক সাথে মিলে নির্দিষ্ট কোনো একটি মানসিক রোগ হয়ে থাকে। কিছু কিছু মানসিক সমস্যা সত্যি সত্যি মানুষের মাঝে থাকতেই পারে- কারো ঘুমের সমস্যা, কারো কোনো একটি বিষয়ে দুশ্চিন্তা (টেনশান), কারো ভয় লাগা, বুক ধড়ফড় করা এসব। তবে আলাদা আলাদা ভাবে এসব কোনো একটি রোগের প্রকাশ নয়। বরং এসব মানুষের অতি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ঠিক যেমন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।

যে যাই বলুক, এসব কথায় কান না দিয়ে মনে রাখতে হবে, কখন একজন মানুষকে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ মনে করবো এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসবো।

মনে রাখতে হবে, যখন কোনো একজন মানুষ তার নিজের জন্য বা অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখনই তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।

একটি-দুটি মানসিক সমস্যা থাকলেই সে মানসিক রোগী নয়, যেমন একটি দুটি শারীরিক সমস্যার জন্যও মানুষকে সব সময় ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হয় না। কিন্তু, সব মানুষেরই কিছু কিছু মানসিক সমস্যা থাকে, এসব বলে মানসিক রোগকে অবহেলা করাও উচিত নয়।

কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা হলেই তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ, কোনো রোগ হয়েছে কিনা তা দেখা উচিৎ।

নির্দিষ্ট কোনো মানসিক কারণ থাকলে তো অবশ্যই, এমনকী শারীরিক বিভিন্ন রোগের প্রভাবেও যদি কেউ মানসিকভাবে অস্বস্তি বোধ করে তাকেও মানসিক চিকিৎসার আওতায় আনা উচিৎ।


ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মনোকথা এর সর্বশেষ

welcome-ad