ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

নেকনজর চান আ’লীগের আলাউদ্দিন, বিএনপির মোশাররফ-মোস্তাফিজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৮
নেকনজর চান আ’লীগের আলাউদ্দিন, বিএনপির মোশাররফ-মোস্তাফিজ

পটুয়াখালী-৪ আসন ঘুরে: এমনিতেই এলাকাটি দুর্গম হিসেবে পরিচিত হলেও সাগরকন্যা কুয়াকাটার সুবাদে দেশে-বিদেশে বেশ পরিচিত। সে পালে হাওয়া দিয়েছে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন।

এখানকার কলপাড়া উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। পায়রা নদীর ওপারে হচ্ছে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

স্বাভাবিকভাবেই আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে পড়া সংসদীয় আসনটিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

এ দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার গঠনের পর দায়িত্ব পালন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এলাকায়ও বেশ কিছু উন্নয়ন করেছেন। তার আমলেই হয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ও তিনটি সেতু।

তাই তার সমর্থকসহ এলাকাবাসী মনে করেন, তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জড়িয়েছেন। এ বিষয়টিসহ মাঠ তিনি অনেকটা ঘুচিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।

মাহবুবুর তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্বজনপ্রীতি, পক্ষ-বিপক্ষের নেতাদের কোণঠাসা করে রেখে ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণেরও।   

যোগাযোগ করলে কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আসলে আমি আশাবাদী হলে তো চলবে না। মনোনয়ন দেবেন নেত্রী। এর আগে এলাকায় কার কী অবস্থান সেটা সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই করে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন সেই-ই নির্বাচন করবে।

‘আমি এমপি-মন্ত্রী এটা বড় কথা নয়, আমি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী এটাই বড় কথা। সে যেই মনোনয়ন পান- তার হয়েই কাজ করবো। ’

তবে বিরোধীদের সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।  

পটুয়াখালী-৪ আসনটি কলাপাড়া ও দুগর্ম হিসেবে পরিচিত রাঙ্গাবালী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে কলাপাড়া ও কুয়াকাটা পৌরসভা ছাড়াও খেপুপাড়া বা কলাপাড়ার ১২টি এবং রাঙ্গাবালীর পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। যার বেশির ভাগই উপকূলীয় এলাকা।

এর ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ৮৯৭ পুরুষ আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৩।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের আরেকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আলাউদ্দিন আহামেদ। তিনি দলটির কলাপাড়া উপজেলার দুইবারের সভাপতি। প্রথম জীবনে সাংবাদিকতায় ‍যুক্ত আলাউদ্দিন পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এলাকায় এসে দলের হাল ধরেন। অংশ নেন ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও।

তার ওই নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন সভাপতি আর মাহবুবুর রহমান তালুকদার ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। সেখানেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। এরপর দেশে ফিরেও জনগণের সঙ্গে মিশে তাদের কল্যাণে কাজ করছেন। অবদান রাখছেন সংগঠনকে শক্তিশালী করতেও।

এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তিনি। বাংলানিউজকে আলাউদ্দিন আহামেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রী যে দূরদর্শিতা নিয়ে এগোচ্ছেন আমরা তার সঙ্গে আছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মনোনয়নটা বড় কথা নয়। আমি ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ কিভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা এবং সরকারের সাফল্য জনগণের কাছে প্রচার করছি। আমি বিশ্বাস করি জনসম্পৃক্ততা বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে আমি পাবো।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে একবার করে আসনটি পেয়েছিল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। এছাড়া সবসময়ই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন এখানে।  

এবারও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া বিএনপি।

তবে রাঙ্গাবালীতে খুব সমস্যায় না থাকলেও কলাপাড়ায় আওয়ামী লীগে খানিকটা কোন্দল রয়েছে। এর সুরাহা না হলে নির্বাচনকে সামনে রেখে সুযোগ নিতে পারে বিএনপি। যদিও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটিও।  

এই অঞ্চলে জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য দলের কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশীর ব্যাপারে আলোচনা শোনা যাচ্ছে না।

কোন্দলের অভিযোগের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, এটা কোন্দল নয়, আসলে এটা আমি বলবো প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে।  

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে পটুয়াখালী-৪ আসনে মনোনয়ন চাইছেন সাবেক বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা নাসির উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, আওয়ামী লীগ নেতা মহিবুর রহমান মুহিব, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালিব তালুকদার প্রমুখ।  

এর মধ্যে বাবা আনোয়ারুল ইসলামের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন থাকায় লিটনকে এগিয়ে রাখছেন স্থানীয়রা।  

এদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে কলাপাড়া-কুয়াকাটায় কার্যত মাঠে নেই বিএনপি। এ ব্যাপারে দলটির নেতারা বলছেন, জনসম্মুখে বড় আকারে সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে দলকে সংগঠিত করা হয়েছে তৃণমূলে।

হামলা-মামলার ভয়ে প্রকাশ্যে না এলেও নীরবে তৃণমূলে নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করেছেন স্থানীয় নেতারা। অনেকে এলাকায় নির্বাচনের জন্য গণসংযোগও চালাচ্ছেন।

তবে তৃণমূলে সেভাবে কোনো কর্মসূচি না থাকায় বিভ্রান্তিতে রয়েছেন সাধারণ কর্মীরা। সেক্ষেত্রে প্রকাশ্যে কাউকে কোনো পোস্টারিং বা ব্যানার সাঁটানোর কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি।  

দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। কলাপাড়া বিএনপিরও তিনি সভাপতি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে আমরা নির্বাচনে যাবো না। আর একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা বিশ্বাস করি আগামী দিনে সেটি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তখনই আমরা নির্বাচনে যাবো।

‘আমার আসনে আমি একজন প্রার্থী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নানা নির্যাতনের পরও আমরা বিশ্বাস করি জনগণ ভোট দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা সরকার গঠন করতে পারবো। আর আমার জনসম্পৃক্ততা দেখে আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। ’

কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো কোন্দল নেই। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো। নির্যাতনের কারণে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। পারস্পরিকভাবে কথা বলে আমরা এক আছি।

মনোনয়ন পেতে চান স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির এবং পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানও।

এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসলে ভোটের কোনো পরিবেশ নেই। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।  তবে আন্দোলন-সংগ্রামেরও কোনো পরিবেশ নেই। প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে আমরা দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

নিজের মনোনয়নপ্রত্যাশার কথা জানিয়ে দুইবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া মোস্তাফিজ বলেন, দল থেকে ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করে এমপি হই। পরে ২০০১ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র থেকে অংশ নিই। এরপরও জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে। জনগণ আমার পাশে আছে। আশা করি আমি মনোনয়ন পাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ভোটের-কথা এর সর্বশেষ