ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভোটের-কথা

সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা পলককে ঘিরে জনতার ভিড়। ছবি: রাইসুল ইসলাম

সিংড়া (নাটোর): নাটোরের সিংড়া উপজেলা এক সময় পরিচিত ছিলো ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে। এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক গোলাম মোর্শেদ। তবে ২০০৯ সালে তাকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা জুনাইদ আহমেদ পলক। এমপি হওয়ার পর সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে তিনি স্থান পান শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভায়। তার দায়িত্বে আসে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি ফের নির্বাচিত হন। টানা দুই মেয়াদে এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আওয়ামী লীগের আরও অনেক এমপি-মন্ত্রীর মতো তিনি জনবিচ্ছিন্ন হননি।

এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সব সময়ই ছিলো নিবিড় যোগাযোগ। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজও করেছেন তিনি।

সিংড়ার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে টের পাওয়া গেল তার জনপ্রিয়তার বিষয়টি। তার বিরুদ্ধে এলাকার তৃণমূলের কোনো কোনো নেতার স্বজনপ্রীতি এবং অন্যান্য কিছুর ব্যাপারে অভিযোগ থাকলেও, তৃণমূল আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়।
স্বচক্ষেই এই জনপ্রিয়তার বিষয়টি টের পাওয়া গেল সিংড়ায় গিয়ে। সিংড়ার কলেজপাড়ায় প্রতিমন্ত্রী পলকের বাড়ি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এলাকায় এসে অবস্থান করেন রোববার পর্যন্ত। তার বাড়ি যেন সবার জন্য অবারিত।

মন্ত্রী সিংড়াতেই আছেন জেনে, কলেজপাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তাকে ঘিরে আছে জনতার ভিড়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ভিক্ষুক, পঙ্গু, বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ কে নেই সেখানে। নিরাপত্তার কোনো বালাইই নেই মন্ত্রীর চারপাশে।

ভিড়ের মুখে মন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায়ের মত।

বাড়ির নিচতলায় বিশাল একটি কক্ষকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন পলক। সেখানেই একটি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছেন মন্ত্রী। আর টেবিল ঘিরে রাজ্যের যত মানুষের ভিড়। কে কার আগে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছুতে পারবেন যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে সেখানে। দেখলাম, স্ট্রেচারে ভর দেয়া এক পঙ্গু ব্যক্তিও হাতে কি যেন এক কাগজ নিয়ে শামিল হয়েছেন সেই প্রতিযোগিতায়। সবাই গিয়ে মন্ত্রীর সামনে বিভিন্ন দরখাস্ত রাখছেন। মন্ত্রীর সামনে টেবিলে
যেন দরখাস্তের স্তূপ। মন্ত্রী সেগুলো পড়ে দেখে সই করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সই না করে, আবেদনকারীকে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।   গার্ড অব অনার নিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী পলক

লোকজনের ভিড়ে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছুতেই পারছি না।

হঠাৎ মন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে পড়লেন। দেহরক্ষী সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্যের কাছে জানলাম তার গন্তব্য উপজেলা পরিষদ। ইতোমধ্যেই মন্ত্রীকে ঘিরে রাখা ভিড়ও রওনা হয়েছে তার সঙ্গে।

স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের কাছে গার্ড অব অনার নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। কিন্তু গাড়ি ঘিরে রেখেছে ভিড়। বহুকষ্টে ভিড় এড়িয়ে তার গাড়ি রওনা হলো।
স্থানীয় একজনের কাছে জানলাম, এই চিত্র সবসময়ের। মন্ত্রী যতক্ষণ এলাকায় থাকেন এই বাড়ির সামনে গিজগিজ করে ভিড়।

দেখলাম, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে মানসিক প্রতিবন্ধী বা এলাকায় পাগল হিসেবে পরিচিতরাও মন্ত্রীর কাছে গিয়ে হাত পাতছেন অবলীলায়। মন্ত্রীও তাদের খুশি করছেন ২০, ৫০, ১০০ টাকা দিয়ে।

মন্ত্রীর গাড়ির পেছনে পেছনেও দৌঁড়াতে দেখা গেল কাউকে কাউকে। এ যেন এক আজব অভিজ্ঞতা।

মন্ত্রীর এপিএস বকুল। জানালেন, মন্ত্রী থাকতে বলেছেন কথা বলবেন। আসতে বলেছেন উপজেলায়। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ের ফাঁকেই কথা সারবেন তিনি।

উপজেলা কার্যালয়ে গিয়েও একই অবস্থা। শত শত মানুষের ভিড়। সবাই মন্ত্রীর অপেক্ষায়। কেউ এসেছেন চাকরির সুপারিশের জন্য, কেউবা অন্য প্রয়োজনে। বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা এসেছেন তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। কথা হলো তাদের সঙ্গেও। পলকের গাড়ি ঘিরে জনতার ভিড়।

স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানালেন, মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাদের কোনো বেগ পেতে হয় না। মন্ত্রী এলাকায় থাকার সময় যে কেউ যে কোনো প্রয়োজনে তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। মন্ত্রীর লোকজনের তরফে কোনো বাধা নেই।

কথা হলো মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে। বললাম তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টার সময় ভিড়ের বিপত্তির কথা। হাসতে হাসতে বললেন, আসলে আমাকে ঘিরে রেখেছে জনগণের ভালোবাসার প্রাচীর। এ কারণেই আপনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে।

মন্ত্রী আরও জানালেন, তার কাছে আসতে পারে দল মত নির্বিশেষে সব ধরনের লোক। বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরাও যে কোনো সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসেন অবলীলায়। সাধ্যমত তিনি সবার যে কোনো যৌক্তিক সমস্যার সমাধান দেন।

জানালেন, আগে বিএনপির আমলে তার এলাকার বেছে বেছে আওয়ামী সমর্থক বাড়িগুলো বাদ দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের লাইন দেয়া হতো। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর পল্লী বিদ্যুতের লাইন দেয়ার জন্য দলীয় কোনো বৈষম্য করা হয়নি। দলমত নির্বিশেষে লাইন দেয়া হচ্ছে প্রতিটি বাড়িতে। এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজের ব্যাপারে আওয়ামী সমর্থক এলাকা কিংবা বিরোধী সমর্থকদের এলাকা- এমনটা দেখা হচ্ছে না।

তার চারপাশে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকেও দেখা যায়, এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বললেন, এটা বরং আমার অর্জন। আমি পুরো সিংড়াবাসীর এমপি, জনপ্রতিনিধি। আমার কাছে যে কোনো দল মতের লোক আসতেই পারে। তাদের অভাব অভিযোগ কিংবা যৌক্তিক কোনো সমস্যার সমাধান দেয়া আমার কর্তব্য। উন্নয়নের প্রশ্নে আমি কোনো ভেদাভেদ করিনি। আমি এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তাই নিন্দুকেরা এসব কথা বললেও তার কোনো ভিত্তি নেই।    

আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক শেষে মন্ত্রী উপজেলা কার্যালয় থেকে রওনা হলেন সরাসরি ঢাকার দিকে।

দেখলাম মন্ত্রীর গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে মানুষের ভিড়। এক ভিক্ষুককে দেখলাম হাতের লাঠি নিয়ে মন্ত্রীর গাড়ির পিছে পিছে দৌড়াতে। মন্ত্রী গাড়ি থামিয়ে, তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে দিলেন। কম গেল না এক মানসিক প্রতিবন্ধীও। মন্ত্রীর নাগাল পেল সেও। তার হাতেও কিছু টাকা তুলে দিলেন প্রতিমন্ত্রী পলক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ভোটের-কথা এর সর্বশেষ