ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া থেকে মফিজুল সাদিক

সুন্দর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে সঙ্গী মেঘদল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
সুন্দর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে সঙ্গী মেঘদল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Mofizul_sadikক্যামেরুন হাইল্যান্ড(মালয়েশিয়া) থেকে: রোববার হঠাৎ মনে হলো, মালয়েশিয়ার পাহাড় ঘেরা মেঘের দেশে ঘুরে আসি। ঘড়ির কাঁটা তখন দেড়টা পেরিয়ে গেছে।

পুডুরিয়া বাস টার্মিনালে ৩৫ রিঙ্গিত দিয়ে টিকিট কেটে বাসে চেপে বসলাম। উদ্দেশ্য মেঘের দেশে পাড়ি দেয়া।
 
কুয়ালালামপুর শহর থেকে ২০৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বড় বড় পাহাড় ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথ। এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে কতোটি স্বর্পিল বাঁকের দেখা মেলে বলা মুশকিল। পিচঢালা মসৃণ সড়ক সাপের মত এমনভাবে একেবেঁকে চলেছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে যে বর্ণনা করা কঠিন।
 
প্রাথমিকভাবে এমন আঁকাবাঁকা পথে চলা একেবারে সহজ নয়। একদিকে বাঁক, অন্যদিকে পাহাড়ের বিশাল ঢাল ভয়ঙ্কার রূপে সঙ্গী, তবে উপভোগ্যও বটে।
 
পাহাং রাজ্যের এটি সব থেকে শীতলতম স্থান।

মেঘের ভেতরে আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে ছুটে চলেছে বাস। দূর থেকে মনে হবে পর্বতমালা একে অপরে ছুঁয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়। কখনও বাসের গ্লাসে আঘাত হানছে ধবধবে সাদা মেঘদল।
 
পাহাড়ের সবুজ গাছগুলোও অনেক সময় মেঘে সাদা আকার ধারণ করছে। এক একটি গাছ যেন মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে পাহাড়কে।

পাহাড়ের ফাটল বেয়ে ছোট ছোট কালভার্ট বেয়ে ঝরণা চলেছে অজানা কোনো দেশে। ক্যামেরুন হাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উচ্চ ভূমি। দেশের সব সবজি এখানে উৎপন্ন হয়।
 
পথের পাশে দিগন্ত জোড়া চা বাগান।
 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছুলাম ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে। এই স্থান সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা ছিল। মনে করেছিলাম এখানে ঘণ্টা দুয়েক বেড়ানোর পর আবারও পাড়ি দেবো কুয়ালালামপুরে। কিন্তু বিধিবাম। সাড়ে ৫টার পর ক্যামেরুন হাইল্যান্ড থেকে আর কোনো বাস ছাড়ে না। অজানা স্থানে একা প্রথমে বাস না পাওয়ার কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
 
এটি একেবারেই দুর্গম এলাকা। ক্যামেরুন বাস টার্মিনালে কুর্নিয়া বিস্ট্রাল ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার  অরবিন্দ মালোতি বললেন, ঘন কুয়াশা ও মেঘের কারণে বাসের হেড লাইট কাজ করে না। তাই সাড়ে ৫টার পরে আর কোনো বাস নেই। পরের দিন সকাল সাড়ে ৫টায় ক্যামেরুন থেকে বাস ছাড়বে।
 
একেবারে নতুন স্থান। একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, বুকের ভেতরটায় কাঁপুনি দিয়ে উঠলো, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সমস্ত শরীর বরফের আকার ধারণ করেছে। প্রথমে ১৮ রিঙ্গিত খরচ করে শীতের কাপড় কিনে নিলাম।
 
এর পরে ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে কিছু বাংলাদেশির দেখা পাওয়া গেলো। তারা জানালেন, শীতকালীন সব শাক-সবজী,ফল-মূল, দেশের সর্বত্র সরবরাহ করা হয় ক্যামেরুন হাইল্যান্ড থেকে। এছাড়া এখানকার ৮০ ভাগ গার্ডেন শ্রমিক বাংলাদেশের। টি-গার্ডেন, স্ট্রবেরি গার্ডেন, বাটারফ্লাই গার্ডেন এবং বিভিন্ন ফুলের বাগান বাংলাদেশি শ্রমিকের হাতের স্পর্শে যেন আরও দৃষ্টি নন্দন হচ্ছে।
 
হাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক শোভা দেশি বিদেশি পর্যটকদের মন শীতল করে দেয়। বিদেশি পর্যটকদের সব থেকে কাছে টানে পৃথীবির অন্যতম বড় ফুল রাফলেশিয়া(Raftlesia)। এটি ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের মোসি ফরেস্টে। সমতল ভূমি থেকে এই ফুলটি ৬ হাজার ৬৬৬ ফুট উঁচুতে। এই স্থানটি বন্ধুর হওয়ায় খুব সহজেই এখানে আসা যায় না। তবে পুরো একটি দিন অতিবাহিত করলে এখানে পৌঁছানো যায়। অনেক ইউরোপিয়ান নাগরিকের কাছে রাফলেশিয়া ছুঁয়ে দেখা স্বপ্নের মতো। তবে হাতে সময় কম থাকার কারণে রাফলেশিয়াকে এক পলক না দেখার আক্ষেপ রয়েই গেল।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ