ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

জাপানিদের দীর্ঘজীবনের মূল রহস্য ‘ইকিগাই’!

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
জাপানিদের দীর্ঘজীবনের মূল রহস্য ‘ইকিগাই’! জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ার মানুষ দীর্ঘজীবী হয়

জাপানের মানুষ বিশ্বাস করে যে আপনি এমন একটি কাজ করুন, যে কাজটা করতে আপনি ভালবাসেন এবং যে কাজটা আপনি ভালভাবে করতেও পারেন। তাদের দাবি, এমন কাজ করলে আপনি ভাল থাকবেন, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।

তাদের কাছে ভাল থাকার ধারণাটাই (কনসেপ্ট) হচ্ছে- ব্যস্ত থাকা। জাপানিরা এটিকে ‘ইকিগাই’ বলে থাকেন। ইকিগাই মানে হচ্ছে- আপনার বেঁচে থাকার অর্থ। অর্থাৎ কোন জিনিসগুলো আপনাকে আরও বেশি বছর বাঁচার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়, এটাই হচ্ছে ইকিগাই। সুতরাং ইকিগাই অর্থ হচ্ছে- ভাল থাকা, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা।

জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ার মানুষজন পৃথিবীর যেকোনও অঞ্চলের মানুষের চেয়ে এমনকি জাপানেরও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশি বছর বাঁচে। তাদের গড় আয়ু বেশি।

একবার দু’জন লোক ওই দ্বীপে শতবর্ষী মানুষদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। ইকিগাই নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে গিয়েছিলেন। তদের ভাল থাকার রহস্য নিয়ে সেই সাক্ষাৎকারে মোটামুটি যেসব বিষয় ফুটে উঠেছিল, সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরলে ১০টি নিয়মে ভাগ করা যায়। সেগুলো হল-

১. কখনও অবসর নেবেন না
জাপানিদের ভাষায় অবসর বলে কোনও শব্দ নেই। তাদের মতে, আপনি হয়তো অফিস থেকে অবসর নিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি বাসায় এসে শুয়ে থাকবেন। আপনাকে সব সময় এমন কিছু একটা করতে হবে যেটা আপনি ভালবাসেন। যেটা আপনার জীবন, আপনার পরিবার কিংবা আপনার সমাজে যেটার মূল্য রয়েছে এবং কোনও না কোনওভাবে তা আপনার জীবন, পরিবার বা সমাজের তা উপকারে আসে। এ রকম কিছু করলে আপনি আরও বেশি বছর বাঁচার আগ্রহ পাবেন। আর তা না করে বরং বিছানায় শুয়ে থাকলে আপনি বাঁচার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলবেন।

২. ধীরে চলুন
ব্যস্ততা আমাদের জীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। এই ব্যস্ততার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত অস্থিরতা। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে বেশিরভাগ মানুষ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু জাপানিদের মতে, অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে এসে ধীলে চলুন নীতিতে চললে আপনি আরও বেশি বছর বাঁচবেন বা বাঁচার জন্য ইচ্ছা হবে।

৩. পেট ভরে খাবেন না
খাওয়ার সময় কখনও পুরোপুরি পেট ভরে খাবেন না। সেটা যে খাবারই হোক না কেন। চেষ্টা করবেন পেটের মোটামুটি ২০ ভাগ খালি রাখতে।

৪. ভাল বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ওঠাবসা
আপনার জীবনকে ভাল বন্ধু-বান্ধব দিয়ে বেষ্টন করে ফেলুন। তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করুন।  যাদেরকে বিপদে-আপদে সবসময় কাছে পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনের সময় সুপরামর্শ পাওয়া যায়। এতে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায় বলে তাদের বিশ্বাস।

৫. পরবর্তী জন্মদিনের জন্য নিজের শরীরকে সঠিক আকারে ধরে রাখা
এর অর্থ হচ্ছে- নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া। পরবর্তী জন্মদিনেও যেন আপনার শরীর সঠিক আকারে থাকে সেজন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করা। শরীর যেন কোনওভাবেই আকারে বুড়িয়ে না যায়। এজন্য ভারী শরীর চর্চার দরকার নেই। বরং হালকা শরীর চর্চার মাধ্যমেই শরীরের নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাহলে আপনি ভাল থাকবেন।

৬. হাসি
সবসময় হাসিখুশিতে থাকুন। নিজে হাসুন, অন্যদের হাসাতে চেষ্টা করুন। হাসিখুশির মাঝে থাকলে মন থাকলে, সেই সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যও।

৭. প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়ান
ভাল থাকতে এবং শরীর মন সুস্থ রাখতে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখুন। সব সময় চার দেয়ালের মধ্যে না থেকে মাঝে মাঝে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন। সুযোগ পেলেই গাছপালা, গ্রামের পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করুন। তাহলে শরীর ও মন ভাল থাকবে।

৮. ধন্যবাদ দেওয়া
মানুষকে ধন্যবাদ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেকোনও ছোট-বড় কাজের জন্য মানুষকে ধন্যবাদ দিলে এটা আপনাকে ভাল রাখতে ও আপনাকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৯. বর্তমান নিয়ে ভাবুন
জাপানিদের মতে, বর্তমান সময় নিয়ে চিন্তা করুন। অতীত নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। একই সঙ্গে ভবিষ্যত নিয়েও খুব বেশি চিন্তত হবে না।  মনে করবেন- আজকের পুরো দিনটাই আপনার। তাই দিনটির সঠিক ব্যবহার করুন এবং যথাযথভাবে উপভোগ করুন। কাজের মাধ্যমে প্রতিটি দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখুন।

১০. ইকিগাই অনুসরণ করুন
জাপানিদের মতে, ইকিগাইয়ের মূল রহস্য হচ্ছে ইকিগাইয়ের নিয়মকানুন মেনে চলা।  অর্থাৎ জীবনকে সুন্দর করা ও দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকার জন্য আপনার জীবনের ইকিগাই খুঁজে বের করা এবং তা থেকে দূরে সরে না যাওয়া। এ জন্য আপনি যে কাজটিকে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, সেই কাজটি করা।  

সূত্র: জাপান সরকারের ওয়েবসাইট, বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সিএনবিসি
সৌজন্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।