ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

আমরা কোথায় নিরাপদ?

শারমীনা ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১১
আমরা কোথায় নিরাপদ?

মাত্র কয়েক দিন আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে সাগরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হলো প্রতিভাবান তরুণ সঙ্গীত শিল্পী আবিদের। এ সৈকত নিয়ে গর্বের শেষ নেই আমাদের।

আমাদের পযর্টন শিল্পের অন্যতম ক্ষেত্র এ সৈকত। আর পর্যটন শিল্প থেকে সরকারের যে আয় তার বেশির ভাগই আসে এখান থেকে।

নিজ দেশের পর্যটক ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশ থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন এ সমুদ্র সৈকতে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। আমরা সেই নিরাপত্তা দিতে কতোটুকু প্রস্তুত? আবিদের মৃত্যু এ প্রশ্নকে আরেকবার সামনে নিয়ে এসেছে।

শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, কোথাও নিরাপদ নই আমরা। না জলে, না স্থলে।

যে সমস্যা এমন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার গভীরে যাই না আমরা। উল্টো ওইসব মৃত্যু শুধুই টিভির টকশো’র সাময়িক বিষয় হয়ে যায়। ব্যস ওই পর্যন্তই। আর সে কারণেই ঘুরেফিরে ফের একই সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা।

আবিদের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক শোকের সাগরে ভাসতে হলো দেশবাসীকে।

এবার একজন প্রতিভাবান নন, শিল্প-সংস্কৃতি জগতের দেশবরেণ্য দুই কৃতী সন্তানকে হারালাম আমরা। এখানেও সেই নিরাপত্তাহীনতা আর দায়িত্বে অবহেলা।

মাটির ময়না সিনেমা বানিয়ে যে মানুষটি দেশের চলচিত্র শিল্পকে গতানুগতিক ধারার বাইরে এনে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন, যিনি কাগজের ফুলের মতো ছবি নির্মাণ করে এ শিল্পকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্ছ্বসিত ছিলেন সেই স্বপ্নদ্রষ্টা তারেক মাসুদ নিহত হলেন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়।

মিশুক মুনীর, যার ক্যামেরায় বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের চিত্র উঠে এসেছে কানাডার রিয়েল টিভিতে। যিনি ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফি চ্যানেলে কাজ করে পরিচিত করে তুলেছেন নিজ দেশকে, বাংলাদেশে সংবাদভিত্তিক প্রথম টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজে যোগ দিয়ে যিনি দেশের সংবাদকে নিতে চেয়েছিলেন বিশ্বমানে, যার প্রতি মুহূর্তের ব্যস্ততা ছিল সংবাদকেন্দ্রিক, তিনি নিজেই সংবাদ শিরোনাম হয়ে গেলেন!

সড়কগুলো আমাদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। এমন মৃত্যুর পর কেবল শোক পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে আমাদের কর্মসূচি। দায়িত্ব পালনে বড়ই অনীহ আমরা।

এমন আর কতো মৃত্যু দেখতে হবে আমাদের। আমরা যারা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করি, দেশের সব মৃত্যুর খবর আমাদেরই দিতে হয়, এটা যে কত কষ্টের তা প্রকাশের ভাষা নেই।

সামনে ঈদ সবাই শহর ছেড়ে ছুটবো নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে, জানি না নিরাপদে কতোজন ফিরতে পারবো?

তবুও প্রত্যাশা করি, কারও ঈদের আনন্দ যেন দুর্ঘটনার সাদা কাফনে ঢাকা না পরে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।