ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

মেয়ে শিক্ষার্থীদের পিরিয়ডকালীন প্রতিবন্ধকতা

সুমন পারভেজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
মেয়ে শিক্ষার্থীদের পিরিয়ডকালীন প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী যারা দ্রুত প্রজনন বয়সে প্রবেশ করছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে বেশিরভাগ কিশোর কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হযে পড়ে।

এদের মধ্যে কিশোররীদের অবস্থা আরও নাজুক।

বিশেষ করে পিরিয়ডকালীন সময়ে কিশোরীদের মধ্যে ভয় ও দুশ্চিন্তা কাজ করে। সারা দেশে শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলোতে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের সুযোগ খুবই কম।

গ্রামের বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের বয়ঃসন্ধিকালের পারিবারিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন নন। কিশোরীরা নিজেদের এই সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সঠিক শিক্ষাটাই পায় না।

ঝিনাইদহ জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাসের বিশেষ এই সময়টিতে মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না। পিরিয়ডকালীন সময়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে, মিতা, কাকলী, সম্পাসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী জানান, স্কুলে পর্যাপ্ত ও পৃথক টয়লেট না থাকার জন্য পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মেয়েরা স্কুলে আসতে দ্বিধাবোধ করে। এজন্য মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না, ফলে পড়াশোনার পিছিয়ে পড়ছে।

এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, গ্রামঅঞ্চলের বেশিরভাগ অভিভাবক অসচেতন হওয়ায় তারা মনে করেন মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। এমনকি পিরিয়ড হলে অনেক অবিভাবক তাদের মেয়েদেরকে স্কুলে না যেতে উৎসাহিত করেন ও বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। এর ফলে বাল্য বিয়ের হার বাড়ছে।

এভাবে শুধু ঝিনাইদহ নয় পুরো দেশে অনেক মেধাবী মেয়ে শিক্ষার্থীর পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে।

এ বিষয়ে ডাঃ তানজুম আরা তাসমিন বলেন –একটি মেয়ে যদি ৮ ঘণ্টার বেশি ১ টা প্যাড ব্যবহার করে তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া সহ মারাত্বক রোগ ক্যান্সার পযন্ত হতে পারে।

এ্যাপোলো হাসপাতালের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ তামান্না চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশের মেয়েদের এমনিতেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এজন্য পিরিয়াকালীন সময়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা শারিরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, অবিভাবকদের উচিত এসময় তাদের সন্তানদের দুধ, ডিম, মাংস, শাক-সবজি, ফলসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া ও বাড়তি যত্ন নেয়া।

পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় বা তুলা ব্যবহারে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। অবশ্যই ভালোমানের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ‍

তামান্না চৌধুরী বলেন, মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের সঙ্গেও পিরিয়ড সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করা উচিৎ। সবার মাঝে সচেতনতা তৈরিই পারে একটি সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে।

ছোট একটি বাচ্চা মেয়ের যখন প্রথম পিরিয়ড হয় তখন তার কোনো ধারণাই থাকে না এই বিষয়ে। এজন্য অনেকেই এটিকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে এটি একটি সুস্থ মেয়ের জন্য খুবই স্বাভাবিক বিষয়, কোনো রোগ বা অসুস্থতা নয়।

যদি প্রতিটি স্কুলের পরিবেশ ভালো হয় এবং অবিভাবকরা সচেতন হন তবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।