ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

অ্যাভাটার : ভবিষ্যতের পৃথিবী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০

২১৫৪ সাল। ধ্বংস যদি না হয় তাহলে কী হবে পৃথিবীর অবস্থা? চলুন মেলে দিই কল্পনার ডানা।

টাইটানিক খ্যাত হলিউডের ব্লগব্লাস্টার পরিচালক জেমস ক্যামেরন সেই ভবিষ্যতের পৃথিবীকে তুলে ধরেছেন থ্রি-ডি মুভি অ্যাভাটার-এ। এক যুগ আগে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবসার যে মাইলস্টোন গড়েছিল টাইটানিক, মুক্তির মাত্র তিন মাসের মধ্যে অ্যাভাটার তা অতিক্রম করে যায়। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ছবিটি শুধু আমেরিকাতেই আয় করে ২৪২ মিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত ছবিটি ব্যবসা করেছে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বসিনেমার মুকুটহীন সম্রাট জেমস ক্যামেরন আরেকবার তৈরি করলেন ইতিহাস।

আগামী শতাব্দীর একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স, নাম সেক অপস। সেখানে গবেষণা করছেন একদল বিজ্ঞানী। পলিফেমাস প্ল্যানেটে তারা আলফা সেঞ্চুরি সিস্টেমে কাজ করছেন। আরডিএ কলোনির ওইসব গবেষক এক কর্নেলের নেতৃত্বাধীন। তারা মূল্যবান খনিজ আনবটেনিয়াম খুঁজছে। সেখানে প্যারালাইজড সাবেক মেরিন কর্মকর্তা জ্যাক সুলি (অভিনেতা স্যাম অরথিংটন) তার নিহত ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। জ্যাককে গবেষণার মডেল বানিয়ে কাজ শুরু করে বিজ্ঞানীদল। আনবটেনিয়াম খোঁজার জন্য জ্যাককে ১০ ফুট উঁচু মানবসদৃশ প্রজাতির প্রাণী ‘নাভি’ বানানো হয়। এ প্রজাতির প্রাণীরা থাকে পান্ডোরার জঙ্গল হোমট্রিতে। জ্যাককে পাঠানো হয় পান্ডোরাতে। সেখানে তার দেখা হয় পান্ডোরার রাজকুমারী নিত্রির (অভিনেত্রী জো সালডানা) সঙ্গে। আনাড়ি জ্যাককে রীতিনীতি শেখানোর ভার নেয় রাজকুমারী নিত্রি। অনেক সংগ্রামের পর জ্যাক পান্ডোরার ‘নাভি’দের একজন হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই জ্যাককে পান্ডোরা এবং আরডিএ কলোনিতে আনা-নেয়ার খেলা খেলেন বিজ্ঞানীরা। একসময় সিদ্ধান্ত হয় পান্ডোরার হোমট্রি ধ্বংস করার। বিজ্ঞানীরা কি হোমট্রি ধ্বংস করতে পেরেছিলেন? জ্যাক আর নিত্রির ভালোবাসা কি পূর্ণতা পেয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে দেখতে হবে অ্যাভাটার।

গত বছর ১০ ডিসেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় অ্যাভাটার-এর প্রিমিয়ার শো। সারা বিশ্বে ছবিটি রিলিজ পায় ১৬ ডিসেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আমেরিকায় ছবিটি রিলিজ দেয়া হয় ১৮ ডিসেম্বর। চলতি বছরের জুন মাসে ছবিটি বাংলাদেশে নিয়ে আসে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এই প্রথম হলিউডের কোনো ছবি রিলিজের পর এতো দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে এল। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য অ্যাভাটার এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা ও খুলনার সঙ্গীতা সিনেমা হলে।

বিশ্বজুড়ে জেমস ক্যামেরনের টারমিনেটর টু ছবিটি ঝড় তোলার পরপরই পরিচালক ভেবেছিলেন অ্যাভাটার নির্মাণের কথা। ১৯৯৪ সালে এর জন্য ৮০ পৃষ্ঠার একটি চিত্রনাট্য লিখেন ক্যামেরন। কিন্তু ছবিটি বানানোর মতো প্রযুক্তির অভাবে বাক্সবন্দি করেন পরিকল্পনা। নির্মাণ করেন টাইটানিক। রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসাসফল এই ছবি জিতে নেয় নয়টি অস্কার। ২০০৫ সালে ক্যামেরনের প্রতীক্ষার অবসান হয়। থ্রি-ডি প্রযুক্তির ভার্চুয়াল ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রানুষঙ্গ চলে আসে হাতের নাগালে। অ্যাভাটার নির্মাণে জেমস ক্যামেরন ব্যবহার করলেন সর্বাধুনিক সিনেমাটিক গ্রাফিক্স। স্টোরিওস্কোপিক সাউন্ড সিস্টেমও এই প্রথম কোনো ছবিতে ব্যবহার করা হলো। ২০০৯-এর মাঝামাঝিতে ক্যামেরনের স্বপ্নের ছবি অ্যাভাটার নির্মাণ শেষ হয়। ছবিটি তৈরির বাজেট ধরা হয়েছিল ২৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ব্যয় হয় অনেক বেশি, প্রায় ৩১০ মিলিয়ন ডলার। প্রচারের জন্য খরচ হয় আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ব্যয় যেমন বাজেট ছাড়িয়েছে, ব্যবসাও হয়েছে তারচে বহু গুণ, যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। জেমস ক্যামেরনের চিত্রনাট্য, সম্পাদনা ও পরিচালনায় নির্মিত অ্যাভাটার ছবিতে অভিনয় করেছেন স্যাম আর্থিংটন, জো সালডানা, সিগুর্নি উইভার, মাইকেল রড্রিগুয়েজ, স্টিভেন ল্যাংসহ অনেকে। ছবিটি বাজারজাত করেছে টুয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি ফক্স।

শেষ করার আগে যা না বললেই নয়, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আবেগহীন নিষ্ঠুরতার মাঝেও অ্যাভাটার-এ শেষ পর্যন্ত মানবতারই জয় দেখানো হয়েছে। জেমস ক্যামেরন এই অবিস্মরণীয় ছবিতে গেয়েছেন মানবতার গান, উড়িয়েছেন মানবিক মূল্যবোধের পতাকা।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০
এসকেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।