ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

এই পথ চলাতে আনন্দ...!

মুনিফ আম্মার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১২
এই পথ চলাতে আনন্দ...!

মা আমার ব্যস্ত বড়। সময় তার কাছে দুষ্প্রাপ্য এক জিনিস।

সন্তানের সব আবদারে পূর্ণতা এনে দেন। একমাত্র তার কাছে সময় চেয়েই বিফল হতে হয়। আমিও মায়ের সময় পেতে বিস্তর সময় নিয়ে অপেক্ষায় থাকি। কখন না যেন ডেকে বসেন, ‘বাবা, আয় তো একটু গল্প করি, তোর কথা শুনি। ’

কুমিল্লা এসেছি বন্ধুর বোনের বিয়েতে। রাত পোহালেই সব আয়োজন। যানজট পেরিয়ে কুমিল্লা পৌঁছে বেশ ক্লান্ত আমি। পরদিনের কথা ভেবে একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে গেলাম। মাঝ রাতে ফোন বেজে ওঠে, মায়ের ফোন। ‘বাবা, কাল সকালে সিলেট যাব, যাবি আমার সাথে?’ আমার ঘুমগুলোকে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে দিলাম সঙ্গে সঙ্গে। আর কি চোখে ঘুম ধরে? সিলেট যাবার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে খানিকটা সময় কাটানো যাবে আমার ব্যস্ত মায়ের সাথে।

কাকডাকা ভোরে কুমিল্লা ছেড়েছি। ঢাকায় পৌঁছে গেছি ঢাকা জেগে ওঠার আগেই। ফের চেপে বসলাম গাড়িতে। মা-বাবা আর আমি। কতদিন পরে একসঙ্গে একপথে আমরা...।

যাত্রা’র শুরুটা ছিল বিরক্তিকর। অফিস ধরা মানুষের হুড়োহুড়ি। ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। ঢাকা থেকে বেরিয়ে যেতেই আনন্দসব এসে ভীড়লো আমার কাছে। আমাদের ছোট্ট জীপে তখন যেন আনন্দরা দোল খাচ্ছে। পূর্বাচলের সবুজ পরিয়ে যাচ্ছি আরেক সবুজের শহর সিলেটে। সিলেটের সবুজ পাহাড়, চায়ের বাগান মনে এসে উঁকি দিল।

সিলেটের কোথায় যাবো মা? এমন প্রশ্নে মায়ের উত্তর এলো, ‘ঠিক করে কোথাও না, আজ আমরা পথে পথে ঘুরে বেড়াবো। ’ তবে সিলেটের এই পথ কেন? এই পথটা আমার কাছে দারুণ সুন্দর লাগে। মা আর ছেলে’র গল্প শুরু। বাবা কেবল মন ভোলানো হাসি দিয়ে বলে যাচ্ছেন, ‘জানো, আজকাল সবুজেরা সব হারিয়ে যাচ্ছে। চারপাশটা কেমন যেন রুক্ষ কঠিন হয়ে পড়ছে। এই যে ফসলের মাঠ! একসময় অনেক দেখা যেত। এখন তো কেবল বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। ফসলের মাঠগুলো হারিয়ে যাচ্ছে রে...। ’

পথ চলতে চলতে আমরা এলাম ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়। আব্দুল কুদ্দুস মাখন চত্বর পেরিয়ে খানিকটা সামনে গিয়ে থামলাম। গাড়ির ফুয়েল নিতে হবে। কিশোর এক চানাচুরঅলা ‘চানাচুরররর’ বলে ডাকতেই মায়ের চানাচুর খাবার ইচ্ছে হলো। মা আবার নিজের সব ইচ্ছেকে আমাদের ইচ্ছে বলেও মনে করেন। একটা না, চারটা প্যাকেটের অর্ডার করলেন। বাবা সেই পুরোনো দিনের গল্পে মেতে উঠলেন আবার-‘ছোটবেলায় চুঙা ফুঁকিয়ে চানাচুরঅলারা চানাচুর বিক্রি করতো। তখন আমরা দলবেঁধে চানাচুর খেতে ভীড় করতাম। কোথায় সেই শৈশব, কোথায় সেই আনন্দ!’ সঙ্গে আনা ক্যামেরাটা ঝলকে উঠলো বাবার হাতেই। চানাচুরঅলার ছবি তুললো।
majar
সিলেটে যাবার পথটা ভারী সুন্দর। দু’পাশের পাহাড়ের ফাঁকে পথ চলে গেছে কোথাও কোথাও। এমন পাহাড় ঘেরা পথ দেখতে কার না ভাল লাগবে?

পাহাড়গুলোর কোর ঘেঁষে কোথাও কোথায় আবার বসতির চিহ্নও চোখে পড়েছে। যদিও খানিকটা ভয়ের, তবুও এমন আবাস যেন অন্যরকম শান্তির। পাহাড় বেয়ে ঝরণার পানি নেমে আসে এখানকার বসত আঙ্গিনায়। পাহাড়ের ঢালে বিছানো সবুজে গা মেলে ধরা যায়। অংশুমানের উদয় আর বিদায় বেলার নরোম আলো গায়ে মাখা যায় অনায়াসে। মুহূর্তে হারিয়ে গেলাম পাহাড়ী মানুষের কাছে। সম্বিত ফিরে এল ক্রমাগত হর্ণে। তাকিয়ে দেখি রাস্তার মাঝ বরাবর একটা গরু আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। হর্ণের শব্দেও সরছে না। অদ্ভুত গরু তো! গরু তো গরুই! হর্ণে কি আর সরবে? বাবার মন্তব্য। অবশেষে আমাদেরকেই পাশ কাটিয়ে যেতে হলো।

সিলেটে প্রবেশের মুখে অভ্যর্থনা জানাল সুরমা নদী। ব্রিজের এপাশ থেকেই সিলেট শহরের আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিল। সোজা চলে গেল হযরত শাহজালাল এর মাজারে। আমাদের মত বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষের ভীড়ে মুখরিত। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঘুরে বেড়ালাম সিলেট শহর। বড় বড় শপিং সেন্টারগুলো আর চিকন সরু রাস্তা বেয়ে ঘুরলাম কিছুক্ষণ। খুব একটা সময় অবশ্য ছিলাম না সিলেটে। সন্ধ্যা নামতেই আমরাও ফেরার পথ ধরলাম। কয়েক ঘন্টার জন্য সিলেটকে দেখে নিলাম।

সময়টা কেটে গেল পথে পথেই। ঘুরে ঘুরে একটা দিন চলে গেল। ফেরার পথে মা-ই প্রথম গান ধরলেন। রবি ঠাকুরের ‘আমার এই পথ চলাতে আনন্দ...’ গানটির সাথে সুর মেলালাম আমি আর বাবা। পুরো রাস্তার বেশিরভাগই গেল মায়ের মিষ্টি গলায় সুন্দর সব গান শুনে। ভরে ওঠল মন। মা আমার গানেও দারুণ, কর্মে তো বটেই। এমন যদি সব দিনগুলো হয়, পথ চলাতে কত না আনন্দ...কত না সুখে ভরে ওঠবে সব!!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।