ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জীবনযাপন

পর্ব- ১২

জান্নাতবাসীদের থাকবে বিভিন্ন স্তর

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
জান্নাতবাসীদের থাকবে বিভিন্ন স্তর .

‘দেখো, আমি তাদের এক দলকে অন্যদের ওপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। নিশ্চয়ই পরকাল মর্যাদায় উচ্চতর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২১)

তাফসির: আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ ঈমানদার ও ঈমানহীন সবাইকে দুনিয়ায় রিজিক দিয়ে থাকেন। সবার জন্য আল্লাহর রিজিক অবারিত; কিন্তু দুনিয়ায় রিজিকে তারতম্য থাকে।

সবাই সমান রিজিক লাভ করে না। বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন, আর যাকে ইচ্ছা দারিদ্র্যপীড়িত করেন। জীবিকার ক্ষেত্রে সব মানুষ সমান নয়। আল্লাহর ইচ্ছা ও বিশেষ হেকমতে রিজিক বণ্টন হয়। একজন বিরাট সম্পদশালী হয়, আরেকজনের জীবন দুর্বিষহ হয় দারিদ্র্যের কশাঘাতে। এটা আল্লাহর কৌশলেরই অংশ। রিজিক কমবেশি হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন। ’ (সুরা শুরা, আয়াত : ২৭)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘...আমিই পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে রেখেছি এবং তাদের একজনের মর্যাদা অন্যজনের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তারা একে অন্যকে সেবক রূপে গ্রহণ করতে পারে। ’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

মানুষের রিজিকের এই তারতম্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, বরং পরকালীন কল্যাণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা যত বেশি আমল করবে, তারা পরকালে তত বেশি উপকৃত হবে এবং তত বেশি সম্মানের অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপ রিজিকের সংকীর্ণতাও তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ নয়। দুনিয়ার সচ্ছলতা কারো শুভ লক্ষণের দলিল নয়। কেননা রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব বিভিন্ন বস্তু যেমন—ভয়ভীতি, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দাও। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

দুনিয়ায় রিজিকে যেমন তারতম্য থাকে, তেমনি পরকালেও প্রতিদানে তারতম্য থাকবে। জান্নাতের বিভিন্ন স্তর থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতের ১০০ স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মধ্যে রয়েছে এক শ বছরের ব্যবধান। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫২৯)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতের বাসিন্দারা জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদগুলো ওপর দিকে দেখতে পাবে, যেমন দূরবর্তী উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো তোমরা আকাশের পূর্ব বা পশ্চিম কোণে স্পষ্ট দেখতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরের সম্মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকবে। এ কথা শুনে সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ স্তরগুলো তো নবীদের জন্য নির্ধারিত। তাদের ছাড়া অন্য কেউ তো এ স্তরে কখনো পৌঁছতে পারবে না। এর জবাবে তিনি বলেন, কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ! যেসব মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান আনে ও তাঁর রাসুলের প্রতি আস্থা স্থাপন করে, তারা সবাই এ মর্যাদাসম্পন্ন স্তরগুলোতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং: ৬৮৮১)

গ্রন্থনা: মাওলানা আহমদ রাইদ

রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘন্টা, মে ২৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জীবনযাপন এর সর্বশেষ