তাফসির: পরকালে বিশ্বাসীদের কর্ম ও প্রতিদান সম্পর্কে আলোচ্য আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, পরকালে বিশ্বাস করে এবং চিন্তা ও কর্মে যথাযথভাবে পরকালমুখী হয়, তারা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করবে।
এক. ঈমানদার হওয়া। ঈমানের ভিত্তিতে আল্লাহর কাছে মানুষের মূল্যায়ন হয়। এখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না। নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে যে-ই নেক আমল করবে, সে-ই যথাযথ প্রতিদান পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ বা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি ন্যূনতম অবিচার করা হবে না। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৪)
দুই. চিন্তা ও কর্মে পরকালমুখী হতে হবে। ঈমানদার দুনিয়া বর্জন করে না। ঈমানদার দুনিয়ায় থেকেই পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চয় করে। ঈমানদার দুনিয়াকে প্রয়োজন অনুযায়ী ধারণ করে; কিন্তু তার চিন্তা ও কর্ম পরকাল ভাবনা থেকে উৎসারিত হয়।
তিন. সৎকর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য তা সৎ ও সঠিক পন্থায় হতে হবে। যথাপথ পন্থায় ইবাদত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর আগমনের পর ও পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলামই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাই মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত ও রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া মুক্তি নেই। মহানবী (সা.)-এর যথাযথ অনুসরণের মধ্যেই পরকালীন মুক্তি সম্ভব।
আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ আশ্বাস দিয়েছেন, আন্তরিক আত্মত্যাগ কখনো হারিয়ে যাবে না—তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন। কখনো এর অবমূল্যায়ন হবে না। দুঃখের সমুদ্র মন্থন করেই অমৃতের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। আত্মত্যাগ ছাড়া মহান স্রষ্টার পুরস্কার লাভের যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। দ্বিন ও ধর্মের পথে চলতে গেলে বহু ঝড়-তুফান আসবে, নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা ঘিরে ফেলবে, তাই বলে হতাশ হওয়া চলবে না। আল্লাহর জন্য সব দুঃখ-বেদনা অম্লানবদনে সহ্য করে নিতে হবে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে আমরা ঈমান এনেছি, এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে। আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২-৩)
শুধু মুসলমান দাবি করলেই আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যাবে না। পরকালের মুক্তির জন্য আমলের মাধ্যমে কঠোর সাধনা করার বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করে থাকো, পরে তুমি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে। ’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ৬)
গ্রন্থনা : মাওলানা আহমদ রাইদ
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘন্টা, মে ১৯, ২০১৯
এমএমইউ