ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জীবনযাপন

পর্ব: ০১

বিপদে মানুষ স্রষ্টাকে স্মরণ করে 

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৯
বিপদে মানুষ স্রষ্টাকে স্মরণ করে  .

‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌকায় আরোহী হও আর নৌকাগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বইতে থাকে, আরোহীরাও তাতে আনন্দিত হয়; (হঠাৎ) এগুলোর ওপর আসে তীব্র বাতাস (নৌকাগুলো ঝড়ের কবলে পড়ে) আর সব দিক থেকে সেগুলোর ওপর ঢেউ আসে, আরোহীরা মনে করতে থাকে যে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকে ডেকে বলে, ‘(হে আল্লাহ!) আপনি এ (বিপদ) থেকে আমাদের মুক্ত করলে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২২)

তাফসির: সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আলোচ্য আয়াতে বিষয়টি একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আত্মার জগতে মানুষ আল্লাহর ইবাদতের অঙ্গীকার করে দুনিয়ায় এসেছে। পরে দুনিয়ার চাকচিক্য, আসবাব-উপকরণ দেখে মানুষ সেই আনুগত্যের কথা ভুলে যায়। কিন্তু জীবন চলার বাঁকে বাঁকে মানুষ নিজ স্রষ্টা ও প্রভুকে স্মরণ করার, অনুভব করার সুযোগ পায়। তখন সর্ব প্রকারের মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে। বিপদমুক্তির জন্য কায়মনোবাক্যে পরম করুণাময় আল্লাহকে ডাকতে থাকে।

আলোচ্য আয়াত থেকে জানা যায়, ভোগ-বিলাসিতা, জাগতিক উপকরণ ও দুনিয়ার চাকচিক্য মানুষের ধর্মপ্রবণতার সহজাত প্রবৃত্তিকে ম্লান করে দেয়। মানুষ যখন কঠিন সংকটে পতিত হয় তখন তার মধ্যকার সুপ্ত প্রবৃত্তি জেগে ওঠে। সংকট থেকে মুক্তির জন্য সে বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাঁর সাহায্য কামনা করে। অকৃজ্ঞতাও মানুষের স্বভাবের একটি মন্দ দিক। তাই বিপদ চলে গেলে সে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যায়। পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে। তবে প্রকৃত ইমানদার সুখে-দুঃখে আল্লাহকে স্মরণ করেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন।

নদীপথে ভ্রমণে প্রভুর স্মরণ
মানুষের মেধা, জ্ঞান, প্রতিভা, অধ্যবসায় মানুষকে পৃথিবী জয় করতে সাহায্য করেছে। এসব ক্ষমতা মানুষের নিজস্ব নয়, এসব মহান আল্লাহর দান। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। কিন্তু মানুষ অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ প্রাণী। মানুষের চরিত্রের এই বিশেষ দিকটি এই আয়াতে একটি উপমার সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে। অকূল সমুদ্রে জাহাজ যখন অনুকূল বায়ুতে তার গন্তব্যস্থানের দিকে অগ্রসর হয়, যাত্রীদের হূদয় তখন আনন্দে ভরে যায়। সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে আরোহীদের চোখেমুখে। ভালো লাগা সীমাহীন অনুভূতিতে একসময় তারা ভুলে যায় নিজেদের দুর্বলতার কথা। অসহায়ত্বের কথা। ভুলে যায় তার স্রষ্টার কথা, প্রভুর কথা। হঠাৎ যখন জাহাজটি সামুদ্রিক ঝড়ে নিপতিত হয়, ওই সব আনন্দোচ্ছল যাত্রী ভয় ও আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়ে। মৃত্যুকে তারা প্রত্যক্ষ করে। একান্ত অনুগতচিত্তে তারা তখন আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। সেখানে মুসলিম-অমুসলিম ও অন্য মতাদর্শী ইত্যাদির ভেদাভেদ থাকে না। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে মানুষের অন্তরে রয়েছে আল্লাহর তাওহিদ ও একত্ববাদের দৃঢ় বিশ্বাস। যত দিন দুনিয়ার আসবাব, উপায়-উপকরণ অনুকূল থাকে তত দিন মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে পার্থিব জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর উপায়-উপকরণ প্রতিকূল হয়ে গেলে মানুষের ঘোর কেটে যায়। তখন সে স্রষ্টাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে।

নৌকা বা জাহাজ উপমা মাত্র। জীবনসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মানুষকে অজস্রবার উত্তাল তরঙ্গের মুখোমুখি হতে হয়। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, উত্থান-পতন নিয়েই জীবন। প্রাকৃতিক-অপ্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার অসহায়ত্বের কথা। তখনই সে নিজেকে সমর্পণ করে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহান স্রষ্টার কাছে।

গ্রন্থনা: মাওলানা আহমদ রাইদ

রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জীবনযাপন এর সর্বশেষ