ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জীবনযাপন

সন্ধ্যা নামলেই অজস্র রহমতের রাত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
সন্ধ্যা নামলেই অজস্র রহমতের রাত সন্ধ্যা নামেলই অজস্র রহমতের রাত

মানবজাতির প্রতি দয়া করে ও ভালোবেসে আল্লাহতায়ালা দান করেছেন রমজান মাস। এ মাসে নাজিল হয় কোরআন। কোরআন নাজিল করা হয় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্যবান রাতে। যে রাতে হাজার মাসের চেয়েও অধিক কল্যাণ ও বরকতের কোষাগার লুটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই রাতটি হলো- লাইলাতুল কদর।

এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাকদিরের (ভাগ্য) ফয়সালাসমূহ জারির জন্য ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন। এ রাতেই নির্ধারিত হয় আগামী ১ বছরের রিজিক, জীবন ও মৃত্যুসহ সব কিছুর ফয়সালা।

এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎ কাজের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগি) করবে তাকে সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য রাতের মতো এ রাতেও সেই নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল করে নেওয়া হয়। এ রাতে ইহকাল ও পরকালের যে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়- তা প্রদান করা হয়।

প্রকৃত পক্ষে লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মদির জন্য একটি মহামূল্যাবান নেয়ামত। কদরের রাত নির্ধারণ নিয়ে প্রায় ৪০টি মতের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যেই রয়েছে কদর।  

হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে শবেকদর দেখানো হয়েছে, তারপর আমি তা ভুলে গিয়েছি বা আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো। ’ –সহিহ বোখারি

এ রাতকে গোপনীয় রাখার রহস্য হলো- আল্লাহতায়ালা দেখতে চান এ রাতের বরকত, ফজিলত ও কল্যাণ লাভের জন্য কে কতটা প্রচেষ্টা চালায়। আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো- মানুষ মহামূল্যবান এ রাতের অনুসন্ধানে সাধনা করুক। এর ফলে যে সুবিধাগুলো হয়েছে-

-এ কারণে আজকেই শবেকদর কিনা ভাবতে ভাবতে অনেকগুলো রাত ইবাদত করার সুযোগ হয়।
-তা না থাকলে এ দিনটি ছুটে গেলে পরবর্তী রাতগুলোতে মন ভরে ইবাদতের মাধ্যমে সে ক্ষতিপূরণের মানসিকতা থাকতো না।
-যতগুলো রাত এভাবে ইবাদতে কাটাবে প্রত্যেক রাতেরই আলাদা প্রতিদান মিলবে।

এ রাতের নিদর্শন 

হজরত আবু মুনজির (রা.) ও অন্য সাহাবিদের প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, এ রাতের পরবর্তী সকালে সূর্য আলোক রশ্মিহীন অবস্থায় উদিত হয়। -সহিহ মুসলিম

এ রাতের আরও কিছু নিদর্শন হলো-
১. কদরের রাত অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে না।
২. নাতিশীতোষ্ণ হবে।
৩. মৃদু বায়ু প্রবাহিত হবে।
৪. এ রাতে মুমিনরা ইবাদত করে অন্য রাত আপেক্ষা অধিক তৃপ্তি পাবেন।  
৫. এ রাতে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
৬. এমনও হতে পারে, আল্লাহতায়ালা তার কোনো ঈমানদার বান্দাকে তা স্বপ্নে দেখাবেন।

এ রাতের ফজিলত
হজরত আবু হুবায়বা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়ালো তার পেছনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

এ রাতে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারারাত শুধু আল্লাহর রহমত, কল্যাণ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে। ফিতনা, দুষ্কৃতি ও অনিষ্টকারীতার প্রভাব থাকে না।

মহামূল্যবান এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত কারা?
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস হতে উত্তম যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে, সে সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না। ’ -ইবনে মাজাহ

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বণির্ত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কদরের রাতে উম্মতে মুহাম্মদির দিকে তাকান এবং তাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করেন তবে চার ব্যক্তি দয়ার আওতায় পড়ে না-

১. মদ পানকারী, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্নকারী, ৩. হিংসুক-নিন্দুক ও ৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।

তবে তারা যদি খালেসভাবে তওবা করে পবিত্র জীবনযাপনের চেষ্টা করে, আল্লাহ নিজ করুণা ও দয়ায় তাদের ক্ষমা করে দেবেন।  

এ রাতে করণীয় 
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের শেষে দশক শুরু হলে রাসূল (সা.) কদরের রাত লাভের উদ্দেশ্যে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন, রাত্রি জাগরণ করতেন এবং নিজ পরিবারকে জাগাতেন। ’ –বোখারি ও মুসলিম

হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি পরিশ্রম ও ইবাদত করতেন যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না। তিনি রমজানের শেষ দশকে নিজেকে এমন কিছু নেককাজের জন্য নির্দিষ্ট করতেন, যা মাসের জন্য করতেন না। এর মধ্যে রাত্রি জাগরণ অন্যতম। ’ –সহিহ মুসলিম

তাই আমরা যা করতে পারি-
-রাতের প্রথমভাগেই এশার নামাজ আদায় করা।
-রাতের কিছু অংশ কোরআন তেলাওয়াত।  
-বিশেষ অংশে তারাবি, বেতর, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা।
-বেশি বেশি জিকির-আজকার, দরুদ ও তাসবিহ পাঠ করা।
-তওবা, ইস্তেগফার ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা।
-দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করা।  
-প্রয়োজনে বিশ্রাম নেওয়া, সাহরি খাওয়া ও ফজরের নামাজ আদায় করা।  
-হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আয়েশাকে (রা.) এ রাতে যে সংক্ষিপ্ত ও ব্যাপক অর্থবোধক তাৎপর্যপূর্ণ দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন সেটা পড়া। দোয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা-ফু আন্নি। ’ 

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি মহান ক্ষমাশীল। ক্ষমা প্রার্থনা তোমার নিকট খুবই প্রিয়। অতএব আমাকে ক্ষমা করো। ’
 

আরও পড়ুন:
** হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর
** বিভিন্ন দেশে শবেকদর পালনের রীতি
** শবেকদরে ফেরেশতারা সব কল্যাণময় বিষয় নিয়ে অবতরণ করেন

** শবেকদরের বিশেষ আমল ও দোয়া

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জীবনযাপন এর সর্বশেষ