ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

কক্সবাজারের ডিসিকে যা বললেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
কক্সবাজারের ডিসিকে যা বললেন হাইকোর্ট

ঢাকা: আদালতের আদেশের পরও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।  

তলবে হাজিরের পর বুধবার (১৯ অক্টোবর) কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামনুর রশিদকে ভর্ৎসনা করেছেন উচ্চ আদালত।

 

শুনানি শেষে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগামী ৯ নভেম্বর আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল।  

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন। সে অনুসারে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ হাইকোর্টে হাজির হন।

শুনানির শুরুতে আদালত বলেন, আমরা পারতপক্ষে কারো বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে এনে তলব করি না। তাকে (জেলা প্রশাসক) অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।  

আদালত জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় আপনার ভূমিকা কেবল শূন্যই না, নেগেটিভও। বার বার বলার পরও আপনি আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি। আদালতের আদেশ মানেন, নইলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আপনি এ ঝুঁকিতে যাবেন না।

আদালত বলেন, কক্সবাজারকে সারাবিশ্বের মানুষ চিনে। সারা পৃথিবী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর সৈকতকে আমরা ইউটিলাইজ করতে পারছি না। এখানে দায়িত্ব পেলেতো কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। আপনি সেই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। আপনাকেও সারাবিশ্বের মানুষ চিনবে। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে কাজে লাগিয়ে আপনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন। আদালতের আদেশ মানতেই হবে। না মানার কোনো সুযোগ নেই।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, আমি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করবো।  

আদালতে একটি হলফনামা জমা দেন জেলা প্রশাসক। সেই হলফনামায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জেলা প্রশাসকের পাঠানো একটি স্মারক যুক্ত করা হয়।

সেই স্মারকে বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুসরণে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী ও কলাতলী সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু দুটি সমিতি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশ দেখান।  

ওই আদেশে দেখা যায়, সুগন্ধা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জাকির হোসেন ও অপর একজন সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় আকুতি করেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেন এবং আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ না করার আদেশ দেন। ফলে গত ১০ অক্টোবর দুটি সমিতির ২৩৩টি (১৪৩+৯০) দোকান উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।  

তবে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানিরা মালামাল বেশিরভাগই সরিয়ে নিয়েছেন। অবশিষ্ট মালামাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।

নোটিশে বলা হয়, কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে সেখান থেকে সব অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থে এইচআরপিবি আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রায় দেন। রায়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৭ জুন বিবাদিদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও এখনও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এরপর তিনি আদালত অবমাননার আবেদন করেন। গত ২৫ আগস্ট আদালত অবমানার অভিযোগের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে তাকে তলব করেন।

যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন, তারা হলেন- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, উপ-পরিচালক, টাউন প্লানার তানভির হাসান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মজিবর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।